নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করাই বিএনপির কৌশল

স্টাফ রিপোর্টার: দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিকে উপলক্ষ করে নানা ধরনের কর্মসূচি নেয়া হলেও বিএনপির মূল লক্ষ্য আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আপাতত ‘অহিংস কর্মসূচির মাধ্যমে দলের জনশক্তিকে একতাবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনে লড়াকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে দলটি। তাই সব কৌশল নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুতকে ঘিরে করা হচ্ছে। বিএনপি সূত্রমতে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে থাকলেও দল পরিচালনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তার। ইতোমধ্যে তিনি তিনটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রথমত: দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকা, দ্বিতীয়ত: কঠিন এ সময়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং তৃতীয়ত: নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করা।

সূত্র জানায়, এ নির্দেশনা অনুয়ায়ী আন্দোলন কর্মসূচি, আইনি লড়াই, কূটনৈতিক তৎপরতা, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিসহ প্রতিটি বিষয় এমনভাবে ঠিক করা হচ্ছে, যাতে নির্বাচনে কার্যক্রম থেকে বিএনপি কোনোভাবেই পিছিয়ে না পড়ে। নেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে থাকবে নির্বাচনী প্রচারণা ছোঁয়া। এ জন্যই ৭টি বিভাগে জনসভা করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এসব সভায়ও থাকবে নির্বাচনী আমেজ। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এমন বার্তা দেয়া হচ্ছে যে, শুধু নির্বাচনের কারণেই বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জেল-জুলুম ও নির্যাতন চলছে। এর পাশাপাশি সাংগঠনিক পর্যায়ে এমনভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে, যাতে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও প্রচারণায় কোনো ঘাটতি না থাকে।

দশম জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি মনে করে, আগামী নির্বাচনটি সুষ্ঠু করতে পারলে তাদের জয় সুনিশ্চিত। তাই তারা চায় আগামী নির্বাচনটি হোক একটি দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। নিরপেক্ষ সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে তারা। দলের নেতাদের মতে, নেত্রী কারাগারে থাকলেও নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করা যায় তাহলে সব সমস্যার সমাধান হবে। নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করা সম্ভব হলে নির্বাচনের আগেই আইনি প্রক্রিয়ায় নেত্রীকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। তখন প্রশাসন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সব ইউনিট নিরপেক্ষ আচরণ করবে। আর সাধারণ মানুষও নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। অন্যদিকে নেত্রী মুক্তি পেলেও নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে না হয় তাহলে কোনো লাভ হবে না। অন্যায়ভাবে দীর্ঘমেয়াদে বিএনপি নেতাদেরও সাজা খাটতে হবে। এ জন্য নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি উপলক্ষ থাকলেও নির্বাচনকে উপলক্ষ করেই সব ধরনের কৌশল ঠিক করছে বিএনপি।

বিএনপির সিনিয়র নেতা জানান, দলের চেয়ারপারসনের সাজা হওয়ার পরও আগামী নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখেই কঠোর কর্মসূচি থেকে বিরত রয়েছে বিএনপি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের ৯-১০ মাস বাকি থাকায় দলের নেত্রীর কারামুক্তিকে ঘিরেও কঠোর কোনো আন্দোলনে নামতে পারছে না। এ জন্যই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যদিয়ে ইতোমধ্যে ১৮ দিন পার করেছে তারা। সংঘর্ষে জড়াতে শত উস্কানি রয়েছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও তাদের পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায়ও তারা সতর্কভাবেই নানামুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন।

জানা গেছে, সরকার যতই কঠোর হোক কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবে না বিএনপি। শেষ পর্যন্ত ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে তারা। নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সরকারবিরোধী জনমত তৈরি করাই তাদের মূল লক্ষ্য। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা পর্যন্ত এ কৌশলেই এগোতে চায় দলের হাইকমাণ্ড।

দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা বলেন, আক্রমণাত্মক কর্মসূচি দিলে সরকারও হার্ডলাইনে যাবে। সে কারণে তারা হরতালসহ সহিংস কোনো কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে না। দলের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নিতে রাজপথে নেমে আসছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে ক্রমশঃ উপস্থিতি বাড়ছে। এ অবস্থায় সহিংস কোনো কর্মসূচি দেয়া হলে অতীতের মতো আবারও সুযোগ নেবে ক্ষমতাসীন দল। ফলে দেশে-বিদেশে দলের ভাবমূর্তিও সঙ্কটে পরবে। একই সাথে সারাদেশে নেতাকর্মীদের ওপর মামলা ও ব্যাপক ধরপাকড়ে আবারও ব্যাকফুটে চলে যাবে দল। এই সুযোগ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দেয়া হবে না। কারণ, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সুফল পাচ্ছে বিএনপি। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ সবাই তাদের পক্ষে কথা বলছেন।

বিএনপির পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের আশা ছিলো খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠাতে পারলে বিএনপি ভেঙে যাবে। দলের নেতাকর্মীরা হতাশায় ভেঙে পড়বে। কিন্তু সেটা হয়নি। উল্টো বিএনপি আরও শক্তিশালী হয়েছে। দেশের এ চরম সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে বা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি বদ্ধপরিকর। যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। আন্দোলন সফলে শেষ পর্যন্ত রাজপথে থাকবে নেতাকর্মীরা। আর চেয়ারপারসনকে মুক্ত এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়েই ঘরে ফিরবে।