নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আসছে ৫ প্রকল্প

নির্দেশনা সংক্রান্ত কোনো চিঠি কমিশনে আসেনি : সচিব
স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর পাঁচটিই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করবে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এবারের পৌরসভা নির্বাচনে বিধিনিষেধ সংক্রান্ত কোনো চিঠি তারা পাননি। ফলে কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে কি-না তা অজানা। তবে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন অন্য কথা। তাদের মতে, তফসিল ঘোষণার পর এ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ সবাই মেনে চলতে বাধ্য। এ সংক্রান্ত আইন ও নির্বাচনী বিধি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়ে যায়। কেউ যদি তা লঙ্ঘন করে তাহলে জেলজরিমানা ও শাস্তির বিধানও রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অনুসারে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনপূর্ব সময়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচন করা যাবে না। এ সময়ে সরকারি-বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কোনো প্রকার অনুদান ঘোষণা বা বরাদ্দ বা অর্থ অবমুক্তও করা যাবে না।
এ বিধির তোয়াক্কা না করেই প্রকল্প অনুমোদনের জন্য একনেকে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবারের একনেক বৈঠকে ১০ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তিনটি, অর্থ বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি করে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য তালিকায় স্থান পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আজম বলেন, সাধারণত যে কোনো নির্বাচনের আগেই ইলেকশন কমিশন থেকে কোনো বিধিনিষেধ থাকলে চিঠি পাঠায়। কিন্তু এবার এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনও আমরা পাইনি। তিনি বলেন, কিছু প্রকল্প আছে যেগুলো পৌরসভা এলাকায় বাস্তবায়িত হবে ঠিকই কিন্তু এটা নির্বাচনকে সরাসরি প্রভাবিত করবে না। তাই প্রকল্প অনুমোদনে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মঙ্গলবারের একনেকে তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত কিছু আছে কি-না যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে। চিঠি পাওয়া গেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।
সূত্র মতে, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প রয়েছে তালিকায় ২ নম্বর স্থানে। প্রকল্প যেসব এলাকায় বাস্তবায়িত হবে তার প্রায় সব জেলা-উপজেলায়ই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুতের নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, নতুন উপকেন্দ্র স্থাপন, পুরনো উপকেন্দ্র সম্প্রসারণ ও সংস্কার, রিকন্ডাকটরিং এবং ২য় সার্কিট স্ট্রিংগিংয়ের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হবে। প্রকল্প এলাকা হচ্ছে- ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী সদর, খুলনা বিভাগের বাগেরহাট সদর ও মংলা, ঝিনাইদহ ও খুলনা সদর, কুষ্টিয়া ভেড়ামারা ও সাতক্ষীরা সদর, রাজশাহীর পাবনা জেলার ঈশ্বরদী ও ভাঙ্গুরা, রাজশাহী সদর, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী, বগুড়া সদর ও রংপুরের মিঠাপুকুর।
১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাকেরগঞ্জ-পাদ্রীশিবপুর-কাঁঠালতলী-সুবিদখালী-বরগুনা সড়ক প্রশস্ত ও মুজবুতিকরণ’ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এটি বাস্তবায়ন করবে। এর মধ্যে বরগুনায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা। দেশের ২৯ উপজেলা এটি বাস্তবায়ন এলাকা হিসেবে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টিতে নির্বাচন হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (২য় সংশোধিত) সারাদেশে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কর্মোপযোগী করে দেশে-বিদেশে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে দারিদ্র্য বিমোচন করা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এর আওতায় পোশাক, নির্মাণ, হালকা প্রকৌশলী ও অনানুষ্ঠানিক শিল্প সেক্টরের দক্ষতা বাড়ানো হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রত্যন্ত এলাকায় মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের এলাকার মধ্যে বান্দরবানে নির্বাচন হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আচরণবিধি সবার জন্য প্রয়োগযোগ্য। এক্ষেত্রে সরকারের কোনো সংস্থা বা বিভাগ আইন ভঙ্গ করলে তাকে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। প্রয়োজনে বিধি অনুসারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া যাবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করা প্রয়োজন ইসি তাই করবে।