নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডেসটিনি ১৪৪৯ কোটি টাকা ফেরত দেয়নি

স্টাফ রিপোর্টার: ডেসটিনির আত্মসাৎকৃত ১৪৪৯ কোটি টাকা ফেরত দিতে ১৩ পরিচালককে বেধে দেয়া সময় শেষ হয়েছে। তসরুপ করা টাকা ফেরত দেয়ার জন্য সমবায় আইন অনুযায়ী ১২০ দিন সময় দেয়া হয়েছিলো। শেষ অফিস দিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সমবায় আইনের ওই নির্দেশ কোনো পরিচালক পালন করেননি।

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সভাপতি রফিকুল আমিনসহ ডেসটিনির ১৩ পরিচালকের আর্থিক দায় চূড়ান্ত করেছে সমবায় অধিদফতর। দুই দফা শুনানি শেষে বিপুল পরিমাণ এই দায় নির্ধারণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে সমবায় অধিদফতরের অতিরিক্ত নিবন্ধক (সমিতি ব্যবস্থাপনা) সর্দার মোঃ জয়নাল আবেদিন জানান, তসরুপকৃত টাকা ১৩ পরিচালক নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করেননি। অর্থ পরিশোধ করতে সময় দিয়ে আমরা প্রত্যেক পরিচালককে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা চিঠির উত্তর এমনভাবে দিয়েছে যে মনে হয়, ডেসটিনির ব্যাপারে সমবায় অধিদফতর ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখন সমবায় আইনের ৮৩(৩), ৮৪(২) ও ৮৬(২) ধারায় আইনি ব্যবস্থা নেব। বিষয়টি নিয়ে আমরা এগোচ্ছি।
সমবায় আইনের তহবিল তসরুপের শাস্তির বিধান ৮৩(৩) ধারার (২) উপ-ধারায় বলা আছে, বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে আত্মসাৎকৃত অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া একটি অপরাধ। এর জন্য অনধিক ৭ বছরের কারাদণ্ড বা আত্মসাৎকৃত অর্থের দ্বিগুণ অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। ৮৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, প্রদত্ত নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। পাশাপাশি ৮৬(২) ধারায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে অভিযুক্ত সাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও অন্য সদস্যরা টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে নিবন্ধক আদালতের মাধ্যমে আদায় নিশ্চিত করার জন্য কর্মকর্তাদের ক্ষমতা প্রদান করতে পারবেন।

সূত্র জানায়, ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিনসহ ১৩ পরিচালকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে সমবায় অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করেছেন। আইনের দিকগুলো তারা বিশ্লেষণ করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ডেসটিনির ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি মামলা করেছে। ওই মামলাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। নতুন করে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আগে সবদিক ভেবে দেখা হচ্ছে। কারণ আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যে কোনো সময় অভিযুক্তরা বেরিয়ে আসতে পারে। এটি যাতে না হয় সে জন্য পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবে সমবায় অধিদফতর।

জানা গেছে, ডেসটিনির দুর্নীতির বিষয়ে সমবায় অধিদফতরের অতিরিক্ত নিবন্ধক অমীয় কুমার চট্টোপাধ্যায়কে প্রধান করে এর আগে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিলো। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের মূলধন অবক্ষয়, আর্থিক অনিয়ম ও তহবিল তসরুপের জন্য সমবায় সমিতি আইনের ৮৩(১) ধারা মোতাবেক ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা কমিটির ১২ জন এবং একজন পরিচালকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত দায় নির্ধারণ করা হয় ১৪৪৯ কোটি টাকা।

ওই দায়ের মধ্যে ডেসটিনি সমবায় সমিতির সভাপতি রফিকুল আমিনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ক্ষতি হয় ১২৭ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ অর্থের পুরো দায় রফিকুল আমিনের ওপর অর্পিত হয় এবং এই টাকা তাকে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। একইভাবে সহ-সভাপতি মোহাম্মদ গোফরানুল হকের মাধ্যমে ১২৭ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা। ডিএমসিএসএলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আজাদ রহমান অর্থ তসরুপ করেছেন ১১৮ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, কোষাধ্যক্ষ আকবর হোসেন সুমন করেছেন ২ কোটি ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। ডিএমসিএসএলের ৮ সদস্যের মধ্যে আবুল কালাম আজাদের মাধ্যমে তহবিল তসরুপ হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ২২ হাজার টাকা, শিরিন আকতারের মাধ্যমে হয়েছে ১১৮ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, রফিকুল ইসলাম সরকার তহবিল তসরুপ করেছেন ১১৮ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, মজিবুর রহমান ১১৮ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সুমন আলী খান ১১৮ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সাইদুল ইসলাম খান রুবেল ১১৮ কোটি ৭৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ইফরান আহমেদ আলী ১১৮ কোটি ৭৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং সাইদুর রহমানের দায় চূড়ান্ত করা হয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

ডেসটিনি বহুমুখি সমবায় সমিতির মাধ্যমে শেয়ার মূলধন, ডিআইবিসি প্যাকেজ, আইএনডিপি প্যাকেজ, স্বল্প, দীর্ঘমেয়াদী আমানত ও অন্যান্য জমা বাবদ ৮ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ২ হাজার ৫৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। ওই টাকা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা করতে প্রকৃত মূলধনের ১৪৪৯ কোটি টাকা ১৩ পরিচালক অবক্ষয় বা ক্ষতি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে সমবায়ের অতিরিক্ত নিবন্ধক অমীয় কুমার চট্টোপাধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন একটি মামলা করেছে ডেসটিনির অনিয়মের ব্যাপারে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।