নিরাপত্তা পরিষদে দীর্ঘ বৈঠক : যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন ও ফ্রান্স হার্ডলাইনে

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে উপর্যুপরি আহ্বান জানানো সত্ত্বেও মিয়ানমারের অত্যাচার নির্যাতন বন্ধ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স অবস্থান নিয়েছে হার্ডলাইনে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ফোরাম নিরাপত্তা পরিষদের এই তিন স্থায়ী সদস্য মিয়ানমারকে যেকোনো মূল্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কথা শুনতে বাধ্য করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

এ জন্য মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা দেখছেন না রোহিঙ্গা নির্যাতন দেখে সমব্যথী হওয়া পশ্চিমারা। মূলত তাদের উদ্যোগেই টানা তৃতীয়বারের মতো রোহিঙ্গা ইস্যুতে বৈঠকে বসেছে নিরাপত্তা পরিষদ। গতকাল বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে শুরু হওয়া এই উন্মুক্ত বিতর্কে অংশ নিয়েছেন বিশ্ব মোড়লরা। কিন্তু বৈঠক শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল করে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো। আহ্বান জানানো হয়েছে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার। ইতোমধ্যে সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপও করেছে ব্রিটেন। মার্কিন সরকার বলেছে, মিয়ানমারের সাথে থাকা তাদের সীমিত সম্পর্ক আর বাড়ানো হবে না। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখানো সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের দিকে। গতকাল মধ্যরাতে এ প্রতিবেদন তৈরির সময়, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ ভবনের সিকিউরিটি কাউন্সিল চেম্বার কক্ষে স্থায়ী-অস্থায়ী ১৫ সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে শুরু হয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক। নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী ও চার অস্থায়ী সদস্য জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়ে এ বৈঠকের প্রস্তাব করেছিলো। এতোদিন মিয়ানমারের পক্ষে উচ্চকণ্ঠ থাকা চীন ও রাশিয়া বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে কোনো বিরোধিতা না করায় ফের বৈঠকে বসলো নিরাপত্তা পরিষদ। প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট নিয়ে গতকাল চেম্বার কক্ষের বৈঠকে হাজির হন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় শুরু হওয়া এ বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিবের রিপোর্ট উত্থাপনের পর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ছাড়াও নিরাপত্তা পরিষদের অপর দুই স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরাও তাদের সরকারের অবস্থান তুলে ধরবেন বৈঠকে। বক্তব্য দেবেন পরিষদের অস্থায়ী ১০ সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। উন্মুক্ত বিতর্ক হওয়ায় পক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদেরও বৈঠকে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। বাংলাদেশের পক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এবং মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির নিরাপত্তা উপদেষ্টা তং তুন ছিলেন বৈঠকে। তারাও নিজ নিজ দেশের পক্ষে বক্তব্য দেবেন। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর খবর, মিয়ানমার সরকার ও দেশটির নিপীড়ক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ আশা করছে মানবতার পক্ষে থাকা বিশ্বের বড় একটি অংশ। কিন্তু চীনসহ একাধিক রাষ্ট্র অর্থনৈতিক স্বার্থকে বড় করে দেখায় মিয়ানমারের ওপর কঠোর পদক্ষেপ নেয়া কতোটুকু সফল হবে তা নিয়ে সংশয় আছেই। এজন্য এবারের বৈঠকে চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা কী বক্তব্য দেন তার দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখছে বিশ্ব। নিউইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাগুলো বলছে, বৃহস্পতিবারের বৈঠক উপলক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো মঙ্গলবার নিজেদের মধ্যে আলোচনায় রাখাইনের সহিংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অবিলম্বে মানবিক সাহায্য কার্যক্রম শুরু ও কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের বাস্তবায়নে জোর দেয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ। সমন্বিত ও শক্তিশালী পদক্ষেপ চাইছে ফ্রান্স। আর মিয়ানমারকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছে ব্রিটেন। ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার একটি প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এতে ভেটো দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে রাশিয়া ও চীনের। স্থায়ী কোনো একটি সদস্য ভেটো দিলেই সে প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য হয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। জানা যায়, চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামলে নজিরবিহীনভাবে নিরাপত্তা পরিষদকে একটি চিঠি লেখেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মহাসচিবের সেই চিঠির পর নিরাপত্তা পরিষদ ১৩ সেপ্টেম্বর এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেয়। এই বিবৃতি ছিলো দীর্ঘ ৯ বছর পর মিয়ানমার ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্যের ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেয়া বিবৃতি। এর আগে আগস্টেও এ ইস্যুতে বৈঠক করলেও কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দিতে প্রয়োজনীয় ঐকমত্যে আসতে পারেনি সদস্যরাষ্ট্রগুলো। অথচ একমাত্র নিরাপত্তা পরিষদই পারে মিয়ানমারকে সহিংসতা বন্ধে বাধ্য করতে। নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষেই সম্ভব মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক বা সামরিক বা অন্য কোনো ধরনের অবরোধ আরোপ করা। এই পরিষদই পারে মিয়ানমারে জাতিসংঘের সেনা পাঠাতে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত চুক্তিতে স্বাক্ষর না করা সত্ত্বেও মিয়ানমারের নেতৃত্বকে এই আদালতে বিচারের সম্মুখিন করতে পারে একমাত্র নিরাপত্তা পরিষদ। তাই এতোদিন ধরে মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়া নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনাও কম হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে গতকালের বৈঠকের আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রিটিশ উপরাষ্ট্রদূত জোনাথন অ্যালেন বলেছেন, সহিংসতা যাতে বন্ধ হয় সে জন্য মিয়ানমারকে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে। রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা অনুমোদন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের মর্যাদা নির্ধারণ করতে হবে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ফ্রাঁসোয়া দেলাত্রি বলেছেন, মিয়ানমারের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করতে নিরাপত্তা পরিষদকে কঠোর ও ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে চাপে পড়েছে। তাই তাদের ফিরিয়ে নেয়া এবং রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছে বাংলাদেশ। এজন্য নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরবে বাংলাদেশ।

     নিষেধাজ্ঞার দাবি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর: নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগের দিন বুধবার এক বিবৃতি দিয়ে জাতিসংঘে মানবাধিকার কাউন্সিল বলেছে, রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর শুধু বক্তব্য-বিবৃতি বা গলাবাজিতে কাজ হবে না, নিতে হবে ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’। গতকাল বিবৃতি দিয়ে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘পরিষদের সদস্যদের ঠিক করতে হবে, তারা ইতিহাসের কোন পক্ষকে বেছে নেবে। বিবৃতিতে অ্যামনেস্টির পরিচালক তিরানা হাসান বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের জোরপূর্বক বের করে দিচ্ছে এবং তাদের হত্যা করছে, যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সুস্পষ্টভাবে জাতিগত নিধনের শামিল। তাই মিয়ানমারের কাছে সব ধরনের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ করার লক্ষ্যে দেশটির ওপর এখনই একটি ‘ব্যাপকভিত্তিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করতে হবে। মিয়ানমারের কাছে পরোক্ষভাবে যাতে কোনো অস্ত্রের সরবরাহ না ঘটে এবং দেশটির সেনাবাহিনী যেন কোনো ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ না পায় সেদিকেও জাতিসংঘকে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে অ্যামনেস্টি। একইভাবে অপর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও নিরাপত্তা পরিষদ থেকে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছে। সংস্থাটির জাতিসংঘ পরিচালক লউ চারবন্নিয়েউ বলেছেন, ‘বার্মিজ (মিয়ানমার) সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা দরকার। অবরোধ আরোপ করা উচিত তাদের প্রতি, যারা রোহিঙ্গাবিরোধী সহিংস প্রচারণায় জড়িত। ’

     রাখাইন সফরের পর পরিস্থিতিকে ট্র্যাজেডি বললেন ব্রিটিশ মন্ত্রী: ব্রিটেনের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের এশিয়াবিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বুধবার রাখাইন রাজ্য সফর করেছেন। ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর এটিই কোনো বিদেশি মন্ত্রীর রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের ঘটনা। ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাখাইন থেকে ফিরে মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে অং সান সু চির সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি সাফ জানিয়ে দেন, রাখাইনে আমরা গত কয়েক সপ্তাহে যা দেখেছি তা কঠোরতম ও অগ্রহণযোগ্য এক ট্র্যাজেডি। এই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। যারা বাড়িছাড়া হয়েছে, দেশছাড়া হয়েছে তাদের দ্রুততম সময়ে এবং নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে দিতে হবে। মার্ক ফিল্ড বলেছেন, ‘অং সান সু চি ও অন্যদের সঙ্গে সাক্ষাতে আমি সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আহ্বান মেনে নেয়ার ওপর খুব বেশি জোর দিয়েছি। বলেছি, রাখাইনে ওই সব মানুষের কাছে মানবিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার অনুমতি দিতে হবে। অং সান সু চিকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড রাখাইনে বাস্তুচ্যুত মানুষদের দেখেছেন। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর সহিংসতায় এসব মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশন (এআরসি) যেসব সুপারিশ করেছে তাদের রিপোর্টে, তা বাস্তবায়নে ব্রিটেনের আহ্বানকে আবারও জোরালোভাবে সু চির কাছে তুলে ধরে ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, এমন অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে, যেখানে মুসলিম, বৌদ্ধ ও অন্য সমপ্রদায়ের মানুষরা শান্তিতে ও স্থিতিশীলতায় একে অন্যের পাশাপাশি বসবাস করতে পারেন।

জাতিসংঘকে আটকে দিলো মিয়ানমার: মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের পূর্বনির্ধারিত একটি সফর হঠাৎ করেই বাতিল করে দিয়েছে মিয়ানমার। ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরু হলে জাতিসংঘের জরুরি সহায়তাকর্মীদের রাখাইন ছাড়তে বাধ্য করার পর এটিই সংঘাতপূর্ণ ওই অঞ্চলটিতে জাতিসংঘের প্রথম সফর হওয়ার কথা ছিলো। খবরে বলা হয়েছে, ইয়াঙ্গুন থেকে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র স্তানিস্লাভ সেলিং জানান, মিয়ানমার সরকার এই সফর বাতিল করার পেছনে কোনো কারণ দেখায়নি। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কূটনীতিকদের ধারণা, মূলত জাতিসংঘের মিয়ানমারে প্রবেশ আটকে দিতে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই জাতিসংঘের সফর বাতিল করেছে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মিয়ানমার।

     রোহিঙ্গা নারীদের বীভৎস যৌন নিপীড়নের আলামত: মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নারীরা ধারাবাহিকভাবে সে দেশের সেনাবাহিনীর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বলে আলামত পেয়েছে জাতিসংঘের একটি অনুসন্ধানী দল। এ তথা জানিয়ে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা দুই বোন বলেছেন, মিয়ানমারের সেনারা তাদের ধর্ষণ করেছে। এদেরই একজন ২৫ বছর বয়সী এক নারী বলেন, সেনারা আমাদের নির্যাতন করেছে। তারা আমাদের বাবা-মাকে হত্যা করেছে। তারা আমাদের ধরে জঙ্গলে নিয়ে যায় এবং মাটিতে চেপে ধরে। আরেক বোন ২২ বছরের আজিজা বলেন, দুই ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করে এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। দুই বোনকে উদ্ধার করে নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে সাহায্য করে অন্য শরণার্থীরা। এসবের পরে জাতিসংঘের অভিবাসন দফতরের প্রধান বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারীরা বীভৎস যৌন নিপীড়নসহ বিভিন্ন লৈঙ্গিক সহিংসতার শিকার। আইওএম মহাপরিচালক উইলিয়াম ল্যাসি সুইং জানিয়েছেন, এসব ঘটনায় তিনি ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার অসংখ্য রোহিঙ্গা নারীকে মানসিক সহায়তা দিতে ইউনাইটেড নেশনস ফান্ড ফর পপুলেশন অ্যাকটিভিটিস (ইউইএনএফপি) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের কাছে উইমেন ফ্রেন্ডলি স্পেস নামে এক প্রকল্প চালু করেছে। যৌন নিপীড়নের ভয়াবহতা অনুধাবনের পর তারা এর পরিসর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।