নিরাপত্তা চেয়ে সাংবাদিকদের গণজিডি অবজ্ঞা : ওসি প্রত্যাহার দাবি

দৈনিক মাথাভাঙ্গা দফতরে দফায় দফায় হামলা ও সম্পাদক তথা প্রেসক্লাব সেক্রেটারিকে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদ

 

স্টাফ রিপোর্টার: দৈনিক মাথাভাঙ্গা অফিসে দফায় দফায় হামলা ও সম্পাদককে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের সাংবাদিক সমাজসহ সুধীমহল। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে হামলা ভাঙচুর ও সাংবাদিক লাঞ্ছিত মামলার আসামি কর্তৃক মামলার বাদী লাঞ্ছিত হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব, দর্শনা প্রেসক্লাব, মেহেরপুর ও গাংনী প্রেসক্লাব প্রতিবাদ সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জরুরি সভায় মিলিত হয়ে এ দাবি জানিয়ে হামলার প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে তাৎক্ষণিক মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন সাংবাদিকরা। এ সময় বক্তারা বলেন, চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকেরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মাঝে নিরাপত্তা চেয়ে থানায় গণজিডি করার পরও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ন্যূনতম পদক্ষেপ নেননি। উল্টো ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছেন। ফলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মুনসীকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। দাবি পূরণ না হলে প্রেসক্লাব বৃহত্তর কর্মসূচি হাতে নিতে বাধ্য হবে। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হু্ইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনা অবগত হওয়ার পর ঘটনা নিন্দনীয় এবং যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন।

গতপরশু মঙ্গলবার সন্ধ্যার গভীর রাত পর্যন্ত তিন দফায় দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রধান কার্যালয়ে তিন দল যুবক হানা দেয়। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজের এক পর্যায়ে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে হামলা ভাঙচুর ও সাংবাদিক লাঞ্ছিত মামলার আসামি মামলার বাদী তথা চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সেক্রেটারি মাথাভাঙ্গা সম্পাদককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। হামলা ও লাঞ্ছিতের বিষয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। প্রেসক্লাব সভাপতি মাহতাব উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। প্রেসক্লাবে হামলা মামলার আসামি কর্তৃক মামলার বাদী লাঞ্ছিত হওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা শেষে তাৎক্ষণিকভাবে প্রেসক্লাবের সামনে প্রতীকী মানববন্ধন করা হয়। হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের সাথে দেখা করে হামলার বিষয়টি জানানো হলে তিনি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস এক বিজ্ঞপ্তিতে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, পত্রিকা অফিসে হামলা ও সম্পাদককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে নগ্ন হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও কয়েকজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনায় প্রেসক্লাব সেক্রেটারি সরদার আল আমিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। হামলাকারীদের হুমকিধামকির প্রেক্ষিতে সদর থানায় চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সকল সাংবাদিক গণজিডি করেন। অবাক হলেও সত্য যে, সেই হামলা মামলার আসামি জামিনে মুক্ত হয়ে মামলার বাদীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করলেও পুলিশের তরফ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, হামলা ও লাঞ্ছিত ঘটনার প্রতিবাদে দর্শনা প্রেসক্লাবে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন ক্লাবের সভাপতি হানিফ মণ্ডল। হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি তুলে প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করেন- প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতির সমন্বয়ক মনিরুজ্জামান ধীরু, প্রেসক্লাবের সহসভাপতি কামরুজ্জামান যুদ্ধ, সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল হক পিপুল, সহসম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আওয়াল হোসেন, সহসভাপতি চঞ্চল মেহমুদ, সাধারণ সম্পাদক এসএম ওসমান, সাংবাদিক এফএ আলমগীর, জাহিদুল ইসলাম, মাহমুদ হাসান রনি, মনিরুজ্জামান সুমন, ইয়াছির আরাফাত মিলন, আহসান হাবীব মামুন, রাজিব মল্লিক, আজিম উদ্দিন, সাব্বির আলীম, মোস্তাফিজুর রহমান কচি, মনজুরুল ইসলাম, জিল্লুর রহমান মধু, আ. জলিল, জামান তারিক, শিপন রহমান, মেহেদী হাসান ও হারুন রাজু। সভায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সকল কর্মসূচির সাথে দর্শনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি একাত্মতা ঘোষণা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে মেহেরপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ে প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন একুশে টিভির জেলা প্রতিনিধি ফারুক হোসেন। বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা আতিকুর রহমান টিটু, তুহিন আরন্য, কামারুজ্জামান খাঁন, সাংবাদিক রফিকুল আলম, রশিদ হাসান খান আলো, ওয়াজেদুল হক জেদু, মিজানুর রহমান, আলামীন হোসেন, গোলাম মোস্তফা, ফজলুল হক মন্টু, মাজেদুল হক মানিক, রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, মহাসিন আলী, মেহের আমজাদ, মাহাবুবুল হক পোলেন, ইয়াদুল মোমিন, জিএফ মামুন লাকি, ফারুক মল্লিকসহ বিভিন্ন মিডিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ। সভা থেকে মথাভাঙ্গাসহ সারাদেশের সাংবাদিকদের ওপর, হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে মেহেরপুর গাংনী প্রেসক্লাব। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদসভায় উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ অঞ্চলের জনপ্রিয় দৈনিকের ওপর এমন নগ্ন হামলার ঘটনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ওপর চরম অশনি সঙ্কেত হিসেবে উল্লেখ করেন সাংবাদিকরা। একই সাথে একুশে টিভির চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের মুক্তি ও সম্প্রচার চালু এবং সারাদেশে সাংবাদিকদের হত্যা, হামলা-মামলা ও নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।

গাংনী প্রেসক্লাব সভাপতি রমজান আলীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ-উদ-দৌলা রেজার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন দৈনিক মাথাভাঙ্গা ও আরটিভির মেহেরপুর প্রতিনিধি মাজেদুল হক মানিক, সহসভাপতি মজনুর রহমান আকাশ, কোষাধ্যক্ষ তাহেরুল ইসলাম তপন, দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম ও রেজ-আন-উল বাসার তাপস প্রমুখ। বক্তারা আরো বলেন, দৈনিক মাথাভাঙ্গা আঞ্চলিক জনপ্রিয় দৈনিক হিসেবে এ অঞ্চলের পাঠকদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে। দৈনিক মাথাভাঙ্গা মাটি ও মানুষের কথা বলে। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও কৃষকদের সুখ দুঃখের সাথী দৈনিক মাথাভাঙ্গা। এ অঞ্চলের অধিকার বঞ্চিতা কিংবা নির্যাতিত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে মাথাভাঙ্গা মায়ের মমতা দিয়ে আসছে। দলনিরপেক্ষ একটি দৈনিক হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পত্রিকাটি। কিন্তু মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় শুধু সাংবাদিকরা নয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। তাই অনতিবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না গেলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা মুখ থুবড়ে পড়বে।