নিখোঁজ ২৫ নেতাকর্মীর তালিকা প্রকাশ বিএনপির

 

স্টাপ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তালিকা চাওয়ায় রাজধানী থেকে নিখোঁজ হওয়া ২৫ নেতাকর্মীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই তালিকা প্রকাশ করেন। গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে সম্প্রতি রিজভীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুলাই ময়মনসিংহে সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির কাছে ‘গুম’ হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা শহরের একটি তালিকা দিতে নয়া পল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বিএনপির নিখোঁজের তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা হচ্ছেন- সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলী, সাবেক সাংসদ সাইফুল ইসলাম হীরু, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য চৌধুরী আলম, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, তেজগাঁও বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন, তার খালাতো ভাই জাহিদুল করিম (তানভীর), পূর্ব নাগালপাড়ার আবদুল কাদের ভুঁইয়া (মাসুম), পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম (রাসেল), মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান (রানা), উত্তর বাড্ডার আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা এ এম আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান, খালিদ হাসান (সোহেল) ও সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম (হাবিবুল বাশার জহির),পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল ও মো সোহেল চঞ্চল, নিজামউদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, কাজী ফরহাদ, সেলিম রেজা পিন্টু ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুম।

তালিকা প্রকাশ করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গুম ও নিখোঁজ হওয়া মানুষের খবর জানেন না। নির্বিচারে কালবৈশাখীর গর্জনের মতো তারা যখন অবলীলায় মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন এবং তালিকা চাচ্ছেন তাই শুধু ঢাকা শহরের একটা অতিসংক্ষিপ্ত তালিকা উপস্থাপন করা হলো। অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা যে তালিকা দিয়েছে তা প্রকাশ করতে অনেক সময় লাগবে বলে জানান রিজভী। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে শুধূ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থান ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে কমপক্ষে ৫০ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। গুম হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বিএনপি বা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের থেকে পাওয়া তথ্যমতে শুধু ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৪৩৫ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, গুম হওয়া মানুষের পরিবারগুলোর নীরব কান্না থেমে নেই। স্বজনের বেদনার্ত আওয়াজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কানে ঢোকে না। এমনকি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারও কর্ণকুহরে যেন এদের কান্নার শব্দ প্রবেশ করে না। হারিয়ে যাওয়া মানুষের স্বজনেরা জানতেও পারেননি তারা এখন জীবিত না মৃত। এগুলোর বিষয়ে কি জবাব দিতে পারবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক? আওয়ামী মন্ত্রী-নেতাদের চোখে পানি না আসলেও গুম হওয়া, খুন হওয়া, নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের স্বজন ও সহকর্মীদের চোখের পানিতে এখন বাংলাদেশ ভাসছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বুকভরা বেদনা নিয়ে অপেক্ষায় আছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে নিরাপত্তাজনিত আতঙ্ক। শুধু গুম আর অপহরণই নয়, বরং তাদের পেটুয়া বাহিনীর হাতে নির্যাতিত লাখ লাখ মানুষ এখন কাঁদছে। আর আওয়ামী নেতারা নিখোঁজ মানুষদের স্বজনদের দুঃখ-বেদনা ও কান্না নিয়ে উপহাস করছেন। বিএনপি নেতারা এখন প্রেস ব্রিফিং করেন এবং কাঁদেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এ বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, এ থেকে বোঝা যায়, মানুষের মৃত্যু নিয়ে, গুম নিয়ে, স্বজনদের আহজারি নিয়ে কত ভয়ংকর মশকরা, কত ভয়ংকর উপহাস, কত ভয়ংকর তাচ্ছিল্য করতে পারেন আওয়ামী নেতারা। নেকড়ে যখন রক্ত পান করে তখন তার কোনো অনুশোচনা থাকে না, হায়েনারা যখন রক্ত পান করে তখন তাদের অনুশোচনা থাকে না। হায়েনার হাসি বলে একটা কথা আছে। তারা আওয়ামী নেতাদের মুখ থেকে হায়েনাদের হাসি দেখতে পারছেন। কয়েক দিন আগে হবিগঞ্জ যুব দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবর আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও অদ্যাবধি আদালতে হাজির না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তাকে আদালতে হাজির করার দাবি জানান রিজভী। একই সঙ্গে গাজীপুরের সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত কমিশনার বিএনপি নেতা হান্নান মিয়া হান্নু, ফয়সল সরকার, সফিউদ্দিন শফি, তানভীর আহম্মেদ, মো. শহীদ ও অলোককে মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণের নিন্দা জানান তিনি।

ফরহাদ মজহারের অপহরণ ঘটনা নিয়ে নাটক বানানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, সরকারের সর্বশেষ আক্রোশের শিকার হয়েছেন বিশিষ্ট কলামিস্ট, কবি, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার। তিনি এখন এতটাই মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত যে শোনা যাচ্ছে মানুষজন ও আত্মীয়-স্বজনদেরও চিনতে নাকি তার কষ্ট হচ্ছে। অথচ তার অপহরণের ঘটনাকে এখন নাটক বানাতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকার। কিন্তু তাদের কোনো চক্রান্ত ফরহাদ মজহারের অপহরণ ঘটনাকে সাজানো নাটক বলে মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারবে না। মানুষ যা বোঝার তা ইতোমধ্যে উপলব্ধি করেছেন, বুঝে গেছেন।  সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, হাবিবউন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল আউয়াল খান, মাহবুবুল হক নান্ন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, শাহিন শওকত, হারুনুর রশীদ হারুন, জালাল উদ্দিন মজুমদার, গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।