নিখোঁজের ২২ দিন পর শিবির নেতা হাফেজ জসিমের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

 

হিঙ্গারপাড়া থেকে ফিরে আলম আশরাফ: নিখোঁজ হওয়ার ২২ দিন পর গতকাল শুক্রবার সকালে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর হিঙ্গার গ্রামের একটি মাঠ থেকে থেকে জসিম উদ্দিন (২৫) নামে এক শিবির নেতার হাত-পা বাঁধা গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত জসিম উদ্দিন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালোহাটি এলাকার খলিলুর রহমান মণ্ডলের ছেলে। তিনি জেলা শহরের আলিয়া মাদরাসার ফাজিল বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্র ছিলেন। তবে নিহত জসিমের পরিবারের অভিযোগ, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরার পথে পুলিশ জসিমকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আমরা আর জসিমের কোনো খোঁজ পায়নি। প্রশাসনের সহযোগিতায় জসিমকে হত্যা করা হয়েছে। জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের জানান, নিহত জসিম উদ্দিন ঝিনাইদহের গান্না ইউনিয়নের শিবিরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা সাথী ছিলেন। শিবিরের পক্ষ থেকেও বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে- পুলিশ শিবির নেতা জসিমকে আটকের পর অস্বীকার করছে। গতকাল শুক্রবার সকালে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হিঙ্গেরপাড়া গ্রামের মাঠ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিহতর ভাই সাইফুর রহমান হরিণাকুণ্ডু থানায় গিয়ে লাশটি তার ভাইয়ের বলে শনাক্ত করেন। নিহত জসিম ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও কালুহাটি গ্রামের খলিল মণ্ডলের ছেলে। তিনি ঝিনাইদহ আলিয়া কামিল মাদরাসার ফাজিল প্রথমবর্ষের ছাত্র ছিলেন।

নিহতর ভাই সাইফুর রহমান জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সিলেট থেকে বাসযোগে বাড়ি ফেরার পথে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থেকে জসিমকে নামিয়ে নেয়। সেই থেকে জসিম নিখোঁজ ছিলো। আজ (গতকাল) শুক্রবার সকালে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হিঙ্গেরপাড়া মোস্তবাপুর গ্রামের মাঠে মুখ ও পিটমোড়া করে হাত-বাধা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায় জসিমের। সাইফুর রহমান অভিযোগ করেন, তার ভাইকে প্রশাসনের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাতাব উদ্দীন জানান, গতকাল শুক্রবার সকালে কৃষকরা মাঠে কাজ করতে গিয়ে অজ্ঞাত এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। তাকে চোখ ও পেছনে হাত বেধে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ সকাল ১০টার দিকে লাশ উদ্ধার করে হরিণাকুণ্ডু থানায় নেয়। তিনি আরো জানান, সাড়ে ১০টার দিকে নিহতের ভাই সাইফুর রহমান লাশটি তার ভাইয়ের বলে শনাক্ত করেন। কে বা কারা জসিমকে হত্যা করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে ওসি জানান।

এদিকে জসিমের বাবা কালুহাটি গ্রামের খলিল মণ্ডল জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি জসিম উদ্দীন সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরছিলো। পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারি গোয়ালন্দ ঘাট পার হয়ে জসিম তাকে জানান, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে শাদা পোশাকের লোকজন তাদের বাসটি চেক করবে বলে থামিয়েছে। এরপর থেকেই জসিমের মোবাইলফোন বন্ধ ছিলো। জসিমের সন্ধান না পেয়ে পরিবারটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। জমিসের নিখোঁজ থাকার বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ আগেই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, জসিম নামে কাউকে পুলিশ আটক করেনি।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি ঝিনাইদহ সদরের কালুহাটি গ্রামের বেলেখাল বাজারে ধর্মান্তরিত সমির নামে এক বয়োবৃদ্ধ হোমিও চিকিৎসক খুন হন। এ ঘটনার পর থেকে গান্না ইউনিয়নের অশ্বস্থলি ও কালুহাটিসহ বিভিন্ন গ্রামে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে শাদা পোশাকের লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। এর আগে চণ্ডিপুর গ্রামের মোবারক হোসেন মোহন ও কালুহাটি গ্রামের বছির নামে দু ব্যক্তিকে শাদা পোশাকের লোক ধরে নিয়ে যায়। বেশ কয়েক দিন নিখোঁজ থাকার পর তাদেরকে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। এরপর আবু হুরাইরা ও হাফেজ জসিম উদ্দীন দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর তাদের লাশ পাওয়া গেলো।