নিঃসন্তান গৃহবধূকে ঝাড়ফুঁকের অজুহাতে ধর্ষণ

 

অভিযুক্ত কবিরাজ দামুড়হুদায় কুড়ুলগাছির শরীফুল লাপাত্তা : অবশেষে মামলা

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার মোক্তারপুরে মাফুজা নামের এক নিঃসন্তান গৃহবধূকে ঝাড়ফুঁকের অজুহাতে তাকে ধর্ষণ করার  অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে মোক্তারপুর মাঝপাড়ার গৃহবধূ। গত বুধবার দুপুরে কুড়ুলগাছি মসজিদের ইমাম কবিরাজ শরীফুল ইসলাম তাকে কৌশলে অচেতন করে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার গৃহবধু বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে ধর্ষিত গৃহবধুকে সাথে নিয়ে তার পরিবারের লোকজন থানায় আসার সময় মোক্তারপুরের সাবেক মেম্বার হাসানসহ তার সহযোগীরা ওই গৃহবধূকে চড়থাপ্পড় মেরে ভ্যান থেকে নামিয়ে নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্টা চালিয়েছে বলে এজেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার এজেহারসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামের  ছেলের একই উপজেলার কার্পাসডাঙ্গার আরামডাঙ্গার মেয়ের  ৮ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর গৃহবধূর  মাথায় সমস্যা দেখা দেয় এবং মাঝে মাঝে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। গৃহবধূর ওপর জ্বিনের আচর আছে বলে জানায় তার স্বামীর পরিবারের লোকজন। ৮ বছর বিয়ে হলেও গৃহবধূর এখনও পর্যন্ত কোনো সন্তান হয়নি। নিসন্তান ওই গৃহবধূকে ঝাড়ফুক করতে কুড়ুলগাছির শামসুলের ছেলে ওই গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম কুড়ুলগাছি হাফিজিয়া মাদরাসার শিক্ষক কবিরাজ শরীফুল ইসলাম গত বুধবার দুপুরে গৃহবধুর স্বামীর বাড়ি মোক্তারপুর আসে। কবিরাজ শরীফুল গৃহবধূকে ঝাড়ফুঁকের অজুহাতে ঘরের মধ্যে নিয়ে জানালা-দরজা বন্ধ করে দেয় এবং তাকে অচেতন করে ধর্ষণ করে।

ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর শাশুড়ি বলেন, বউমাকে ঝাড়ফুঁকের এক পর্যায়ে কবিরাজ আমাকে দু রকম ২১টি করে মোট ৪২টি তুলশি পাতা আনতে পাঠায় এবং প্রতিটি পাতা তোলার আগে একবার করে সুরা ফাতেহা পাঠ করতে বলে। যাওয়ার আগে বউমাকে ঘরের মধ্যে শুইয়ে রেখে ঘরের প্রতিটি জানালা বন্ধ করে দিতে বলে। আমি সরল মনে বউমাকে ঘরের মধ্যে রেখে ঘরের সকল জানালা বন্ধ করে তুলশি পাতা তুলতে বাড়ির বাইরে চলে যায়। প্রায় ঘণ্টা খানেক পর দু রকমের মোট ৪২টি তুলশি পাতা নিয়ে ফিরে আসি এবং বউমাকে অস্বাভাবিক অবস্থায় দেখতে পাই। তখন কবিরাজ ওই তুলশিপাতা ভিজিয়ে বউমাকে গোসল করিয়ে দিতে বলে। আমি তার কথামত বৌমাকে তুলশিপাতা ভিজিয়ে গোসল করিয়ে দেয়। এরপর কবিরাজ চলে যায়। কবিরাজ চলে যাওয়ার পরপরই বউমা আমাকে ঘটনা খুলে বলে এবং ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরিবারের লোকজন তাকে বাঁধা দেয় এবং তাকে বুঝিয়ে থানায় মামলা করার জন্য বাড়ি থেকে পাখিভ্যানযোগে বের হই। এ সময় ওই গ্রামের সাবেক মেম্বার কবিরাজ শরীফুলের চাচাতো কুটুম হাসান মেম্বারসহ একই গ্রামের সুলতান ও সলেমান মহুরার আমাদের গতিরোধ করে। তারা আমাদের ভ্যান থেকে নেমে আসতে বলে। আমরা রাজি না হলে তারা বলে থানায় যা তোর কোন বাপ আছে দেখছি। এ কথা বলার পরপরই আমাদের চড়থাপ্পড় মেরে ভ্যান থেকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে নেয়। পরে গ্রাম্য সালিসে অভিযুক্ত শরীফুল তার দোষ স্বীকার করে এবং সকলের কাছে ক্ষমা চাই। গ্রাম্য মাতুব্বররা তাকে লাঠিপেটা করে এবং মাথার ওপরের অংশের চুলে ঢেরা দাগ দিয়ে ছেড়ে দেয়। এরপর পুলিশের সাহায্য নিয়ে গতকাল দুপুরে থানায় আসি এবং অভিযুক্ত শরীফুলের নামে মামলা করি।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ বলেছেন, ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের মতো ঘটনা যারা গ্রাম্য সালিস বৈঠকের নামে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। মামলার সকল আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যহত আছে।