নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর মসজিদের ইমাম রবিউলকে কুপিয়ে খুন

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের কাশিপুরে ডাকাতদলের ব্যারিকেড

কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় রবিউল ইসলাম নামের মসজিদের এক ইমামকে কুপিয়ে খুন করেছে ডাকাতাদল। গতকাল শুক্রবার ভোরে কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের কাশিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ডাকাতদল তাকে হত্যা করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে জানানো হবে। নিহত রবিউলের বাড়ি কোটচাঁদপুর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামে। তার পিতার নাম ইরাদ আলী। রবিউল ইসলাম ইমামতির পাশাপাশি ভূষিমালের ব্যবসা করতেন। তিনি ফজরের নামাজ আদায় করার পর ব্যবসার কাজে সাইকেলযোগে কোটচাঁদপুরে যাচ্ছিলেন। কোরআনে হাফেজ রবিউল ইসলাম (৪৫) স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন। স্থানীয়রা জানান, নিহত হাফেজ রবিউল জামায়াতের রাজনীতির সাথেও জড়িত ছিলো।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা আলমসাধুর চালক আলী হোসেন বলেন, মাল বোঝাই করে কোটচাঁদপুর থেকে কালীগঞ্জ যাচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কোটচাঁদপুর শহর থেকে বের হন। কিছু দূর যাওয়ার পর কোটচাঁদপুর পৌর এলাকার কাশিপুরে ডাকাতদলের কবলে পড়েন। তিনি জানান, ছিনতাইকারীরা তিনিসহ ১৫ থেকে ১৬টি আলমসাধু, নছিমন ও মিনি ট্রাক দাঁড় করিয়ে ডাকাতি করে। তারা চালকদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইলফোন লুট করে। এ সময় তিনি রাস্তায় আহত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখেন।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী হরিণাকু-ুর শাখারিদহ এলাকার তরফদার আলী জানান, ছিনতাইকারীদের সাথে রবিউলের ধস্তাধস্তি হয়েছিলো। রবিউল কিছু নেই জানালে ডাকাতদল ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেছন থেকে দুই পায়ে কোপ দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তরফদার আরও জানান, আহত রবিউলকে নিজের নছিমনে তুলে তিনি হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে জানান। কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসা কর্মকর্তা ফারহানা শারমিন বলেন, রবিউল ইসলাম পথেই মারা গেছেন। তারা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন তিনি।
গ্রামবাসী ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান জানান, ডাকাতরা রবিউলকে হত্যা করেছে। ঘটনাস্থলে গাছ ফেলে রাস্তা আটকানো ছিলো বলে জানান তারা।
স্ত্রী নার্গিস জানান, সকালে নিজ আড়ৎ থেকে ভূষিমাল (ধান-মসুর) নিয়ে কালীগঞ্জ বাজারে যাওয়ার কথা ছিলো তার। কিন্তু এর আগে শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে তার লাশ পাওয়া যায়।
কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সাহা জানান, ভোরের দিকে স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর ইমাম রবিউলকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্য কোনো গাড়িতে ডাকাতি বা ছিনতাই হয়েছে, এমন কোনো অভিযোগ তারা এখনো পাননি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে ঘটনাস্থলে সড়কের ওপর গাছ ফেলা আছে বলে স্বীকার করলেও ডাকাতির খবর অস্বীকার করেছেন ওসি।
রবিউল ইসলাম তাদের চিনে ফেলায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই হত্যাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এদিকে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ।
স্ত্রী নার্গিস আক্তার ছাড়াও ১ ছেলে ও ১ মেয়ে রেখে গেছেন রবিউল। মেয়ে তাসনিয়া আক্তার লিপা কলেজে অধ্যায়নরত এবং ছেলে নাসিম পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।