নববধূ নিয়ে বাড়িতে হাজির পুলিশের তালিকাভুক্ত ‘জঙ্গি’

 

পুলিশ পাঁচজনের ‘জঙ্গি’ সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পোস্টার ছাপিয়েছে। রোববার সেই পোস্টার জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সদস্যদের কাছেও হস্তান্তর করা হয়। ওই পাঁচজনের একজন যশোর শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার আবদুস সোবাহানের ছেলে কামরুজ্জামান তুহিন ওরফে মুন্না (২৪)। তিনি সোমবার নববধূ নিয়ে বাড়িতে হাজির হয়েছেন।
রোববার দুপুরে পুরান ঢাকার ইসলামবাগের মনির খানের মেয়ে ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন মুন্না। নববধূকে বাড়িতে রেখেই সোমবার বেলা ১২টার দিকে মুন্না ও তার মা, আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কোতয়ালি থানায় হাজির হন।
থানার বারন্দায় দাঁড়িয়ে নিজের নিখোঁজের পরের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন মুন্না। এ ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
মুন্না জানান, দুই বছর আগে টেলিভিশনে খেলা দেখা নিয়ে মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে ঢাকায় চলে যান তিনি। বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না তার। গত শনিবার মোবাইলফোনে বিয়ে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে জানতে পারেন পুলিশের সন্দেহভাজন জঙ্গি তালিকায় তার নাম রয়েছে।
বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে শনিবার রাতে পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় চলে যান। রোববার দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকার মনির খানের মেয়ে ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন মুন্না।
জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করে মুন্না বলেন, ২০১৪ সালের জুলাই মাসে মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে ঢাকায় চলে যান। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এলাকায় একটি ডেকোরেটরের দোকানে কাজ নেন। এরপর পুরানো ঢাকার ইসলামবাগে মাইশা প্লাস্টিক কোম্পানিতে চাকরি নেন।
তিনি বলেন, ‘সেখানে থাকার সুবাদে ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে মেয়ের পরিবার বিষয়টি জানতে পারে। এরপর মেয়ের পরিবার থেকে বলা হয় অভিভাবকরা না আসলে বিয়ে হবে না।’
এরপর মুন্না বাড়িতে যোগাযোগ করে বিয়ের কথা জানান। দুই বছর পর ছেলের সন্ধান পেয়ে মুন্নার স্বজনরা ঢাকায় যান। এরপর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে।
মুন্না বলেন, ২০০৯ সালে সরকারি সিটি কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম। এরপর আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া হয়নি। ২০০৯ সালের পর থেকে আর কলেজেই যাইনি। দুই বছর আগে বাড়ি ছাড়ি।
তিনি বলেন, এরমধ্যে পরিবারের কারো সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু মাঝে এলাকার এক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ঢাকায়। তার কাছ থেকে পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছিলাম।

গত ১০ জুলাই পরিবারের পক্ষ থেকে কোতয়ালি থানায় মুন্না নিখোঁজের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

রোববার জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় পুলিশ পাঁচ ‘জঙ্গি’র ছবি সংবলিত পোস্টার হস্তান্তর করেছে কমিটির সদস্যদের মধ্যে। ওই পোস্টারে মুন্না (২৪) নাম ও ছবি রয়েছে।

পুলিশের তালিকাভুক্ত অপর চার সন্দেহভাজন জঙ্গি হলেন- যশোর সদর উপজেলার কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার কাজী হাবিবুল্লাহার ছেলে ও সরকারি এমএম কলেজের ছাত্র কাজী ফজলে রাব্বি (২১), শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাজি গ্রামের আওরঙ্গজেবের ছেলে মেহেদী হাসান জিম (১৯), যশোর শহরের ধর্মতলা এলাকার আবদুস সালামের ছেলে রায়হান (২১) ও মণিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত হাসান আলী গাজীর ছেলে জিএম নাজিম উদ্দিন ওরফে নকশা নাজিম (৪২)।
মুন্নার মা শিরিনা আক্তার কমলা বলেন, ‘সরকার বলেছে- যাদের ছেলে নিখোঁজ, তাদের থানায় জিডি করতে হবে। না হলি তাদের বাবা-মাকে ধরে নিয়ে আসবে পুলিশ।’

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে দুই বছর নিখোঁজ। তাই থানায় জিডি করেছিলাম। আমি কখনও বলিনি- আমার ছেলে জঙ্গি। বলেছি- আমার ছেলেকে বকাবকি করেছিলাম। এজন্য সে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেছে।’
মুন্নার নানী শাশুড়ি সখিনা বেগম বলেন, ‘মুন্না পুরানো ঢাকার ইসলামবাগের একটি প্লাস্টিক কোম্পানিতে চাকরি করতো। ওই এলাকায় আমাদের বাসা। মুন্না ওই এলাকাতেই থাকতো। আমার নাতনির সঙ্গে ওর সম্পর্ক হয়।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে মুন্নাকে ডেকে বলি- তোমার পরিবারের সদস্যদের খবর দাও। তারপর বিয়ের বিষয়টি পাকা করা হবে। পরে পরিবারের লোকজন হাজির হলে মুন্নার সঙ্গে নাতির বিয়ে দিয়েছি।’এদিকে জঙ্গির সন্দেহে পাঁচজনের পোস্টার ও তালিকা প্রকাশের পর মুন্না ফিরে আসার ঘটনায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের জঙ্গি তালিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানানো হয়েছে।
যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে পাঁচজনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এদের মধ্যে দুজনের পরিবার নিশ্চিত করে তাদের ছেলে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িয়ে পড়তে পারে। তাদের একজন মুন্না।
তিনি বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে আইনগত সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। মুন্না ফিরে এসেছে। আমরা তার বিষয়ে তদন্ত করে দেখবো। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না গেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘পরিবার যেহেতু জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল, সেজন্য এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।’