নতুন পরিপত্র জারি :১৫৪ খাতে টাকা দেবে শিক্ষার্থীরা

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারিশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রশাসনে শৃঙ্খলা আনতে নতুন পরিপত্র জারি করেছেসরকার। নতুন এ আদেশে দেশের ছয় ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বমোট১৫৪টি খাত নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এসব খাতের বাইরে অন্য কোনো খাতে বানির্ধারিত হারের বাইরে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কোনো অর্থ আদায় করা যাবেনা। এতে একই সাথে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা কীভাবে ব্যয় করতেহবে এবং আদায়কৃত টাকা থেকে শিক্ষকরা সর্বোচ্চ কতো টাকা গ্রহণ করতে পারবেনসে নির্দেশনাও রয়েছে। তবে এতে জনগণের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থ যথেচ্ছ ভোগেরওব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোথাও বর্তমানে ছাত্র সংসদনা থাকাসত্ত্বেও এ ধরনের একটি খাত সৃষ্টি করে এতে অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করে দেয়াহয়েছে।

দেশে বর্তমানে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অভিযোগআছে, এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানা নামে ও বেনামে খাতদেখিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ আদায় করে। এরপর সেই অর্থ প্রয়োজনীয় কাজের বাইরেবিভিন্ন অদ্ভুত ও ভুতুড়ে ব্যয়ের মাধ্যমে লুটপাট করা হয়। এমনও অভিযোগ রয়েছেযে, পরীক্ষা গ্রহণের মতো প্রকাশ্য একটি খাতে সম্মানির নামে একেকজনঅধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ এমন হারে টাকা নেন, যা অনেক প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারসারা বছরের বেতনেরও সমান হয় না।

জানা গেছে, জনগণের টাকা এভাবে লুটপাটেরপরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর প্রথম একটিনীতিমালা জারি করা হয়। পরে এ নিয়ে খোদ শিক্ষকদের মধ্য থেকে আপত্তি ওঠে।এরই পরিপ্রেক্ষিতেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিকট হতেআদায়ের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালানামে আগের নীতিমালা সংশোধন করে নতুন (নীতিমালা) করে এ পরিপত্র জারি করা হয়। ৮ পৃষ্ঠার এই পরিপত্রে মোট ৮ দফানির্দেশনা ও ৮টি তফসিল রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব রঞ্জিত কুমার সেন শনিবার বলেন, একসময়শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানাভাবে অর্থ আদায় করা হতো। সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য২০০৭ সালে পরিপত্র জারি করা হয়। এরপর জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিরপরিপ্রেক্ষিতে আদায়কৃত খাতে অর্থের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষতাদের সম্মানী বৃদ্ধির দাবি করে আসছিলেন। এর মধ্যে সরকার বিভিন্ন ফিবৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও সম্মানী বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়নি।অধ্যক্ষরা আগের মতোই প্রতি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ১০ হাজার আর উপাধ্যক্ষরা ৫হাজার টাকা করে নিতে পারবেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃতঅর্থ ব্যয় শেষে অর্থবছর শেষে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বিধান রয়েছেনীতিমালায়।

পরিপত্রে যা আছে: আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতানিশ্চিতকল্পে যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান পরিপালন সাপেক্ষে টাকা আদায় এবংব্যয় করতে হবে। টিউশন ফি, ভর্তি ও পুনর্ভর্তি ফি ইত্যাদি ট্রেজারি চালানেরমাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। ১৫৪টি খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেযে টাকা আদায় করা হবে তা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বাজেটে দেখাতে হবে। আর এতেকোনো অনিয়ম করলে তার জন্য বিল পরিশোধকারী দায়ী থাকবেন। কোনো ব্যয়ই কমিটিছাড়া করা যাবে না।ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আদায়কৃত ১৫৪ খাতের টাকানিকটস্থ তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। কমিটি ছাড়া টাকা ব্যয় করা যাবে নাএবং আয়-ব্যয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা নিরীক্ষা করে সরকারকে জানাতে হবে। এঅর্থ খাত পরিবর্তন বা অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। একান্ত প্রয়োজন হলে তারজন্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। এই টাকা ব্যক্তিগত ঋণ বা অগ্রিমপ্রদান করা যাবে না। আর ব্যয়ের ক্ষেত্রে দেয়া অগ্রিম ৩০ দিনের মধ্যে সমন্বয়করতে হবে। ২০ হাজার টাকার বেশি ব্যয় ক্রসড চেকে পরিশোধ করতে হবে। আদায়কৃতটাকা বেশি পরিমাণে জমা না রেখে তা ছাত্রছাত্রী ও প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে ব্যয়করতে হবে।

পরিপত্রে পারিশ্রমিক বা পারিতোষিক প্রদান সংক্রান্ত ধারায়বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় (প্রশ্নসংগ্রহ/প্রণয়ন, ছাপা, উত্তরপত্র প্রস্তুত, মূল্যায়ন, সরবরাহ, আপ্যায়ন, মনোহরী ইত্যাদি) আর্থিক বিধিবিধানের আলোকে সম্পন্নের পর অবশিষ্ট অর্থ ‘জ’ তফসিলে নির্ধারিত হারে বণ্টন করতে হবে। ‘জ’ তফসিলে মূলত আদায়কৃতভাগবাটোয়ারা দেয়া হয়েছে। এই অর্থ শিক্ষা বোর্ড ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরবিভিন্ন পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এর ফলে সুইপার থেকে শুরু করেপ্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ পর্যন্ত সবাই সর্বোচ্চ পরিমাণ (৫৬ থেকে ৬০ ভাগ)ভাগ করে নেবেন। বাকিটার ৩২-৩৮ ভাগ প্রশাসন, অফিস ও পরীক্ষা কমিটি ব্যয়করবে। শিক্ষক পরিষদ সব ক্ষেত্রেই ২ ভাগ পাবে অর্থের। তবে ইতিবাচক দিকহচ্ছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত সব ধরণের আয় সরকারের অর্থ বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শনের অধীনে থাকবে।

১৫৪ খাতে আদায়: এতে বলাহয়েছে, কারিগরি প্রতিষ্ঠান বাদে উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান/তদূর্ধ্ব পর্যায়েরপ্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৩০টি খাতে অর্থ নেয়া যাবে। এর মধ্যে ছাত্রসংসদ ওলাইব্রেরি খাতে ২৫ টাকা করে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পরিচয়পত্র ৩০, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বহির্ক্রীড়া খাতে ও মসজিদ-মন্দির, ব্যবস্থাপনা ফি খাতে৫০ টাকা করে, অভ্যন্তরীণ ক্রীড়ায় ৪০, ম্যাগাজিন খাতে ৩০, বহির্পরীক্ষা-ভর্তিকেন্দ্র ফি, রোভার, স্কাউট, গার্লস গাইড, বিএনসিসি, রেঞ্জার, কাব, হলুদপাখি, রেড ক্রিসেন্ট, অধিভুক্তি ফি ইত্যাদি খাতে বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়নির্ধারিত হারে, উন্নয়ন ফি ২০০, চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা ৭৫, আইসিটি ওবিজ্ঞান ক্লাবে ২০ টাকা করে এবং বিবিধ খাতে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা নেয়া যাবে।এর বাইরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২২, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ২৮, পলিটেকনিকইন্সটিটিউটে ২৫, টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে ২৩, টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ২৬খাতে অর্থ আদায় করা যাবে।