নতুন আইন এখনই নয় : তবু বাড়ছে ভ্যাট

 

স্টাফ রিপোর্টার: ব্যবসায়ীদের তীব্র বিরোধিতার মুখে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। থাকছে প্যাকেজ ভ্যাটও। তবে আইনটি পিছিয়ে দেয়ার কারণ হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ঘাটতিকেই সামনে এনেছেন। সেই সাথে ২০১৭ সালের জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। নতুন ভ্যাট আইনটির বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়া হলেও হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট দেয় এমন অনেক পণ্য ও সেবারই ভ্যাট হার বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ভ্যাটের আওতাও। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য প্যাকেজ ভ্যাট প্রথা রাখলেও তা দ্বিগুণ করা হয়েছে। বর্তমানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা হিসাব করে এর উপর বছরে একবার ভ্যাট আরোপ করা হয়। এটি প্যাকেজ ভ্যাট হিসেবে পরিচিত। দেশের ভিন্ন ভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য এর পরিমাণও ভিন্ন। অন্যদিকে মোবাইল ফোনের কথা বলার উপর ফের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলো। ফলে বেড়ে যাবে মোবাইলফোনে কথা বলাসহ ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যয়ও। জর্দ্দা, গুল, বিড়িসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে রুটি, কেক, বিস্কুট, হাওয়াই চপ্পল, প্লাস্টিকের পাদুকাসহ বেশকিছু পণ্য ও সেবার ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে এর চাপ পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য পাটজাত পণ্য, রাবার উত্পাদন, লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স পরিবহন সেবাসহ কিছু খাতকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর পিছিয়ে দেয়া হলেও এটি আগামী বছর থেকে কার্যকরের লক্ষ্যে বেশকিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ এ বছরই হবে। বাজেট বক্তৃতায় এর রূপরেখাও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অন্যদিকে ভ্যাট ফাঁকি রোধে কিংবা ভ্যাট সংক্রান্ত মামলায় নিরুত্সাহিত করতে কিছু ব্যবস্থার কথাও ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে ২২টি সেবার উপর সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্যে ভ্যাট দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব খাতের ভ্যাট হার ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণও করা হয়েছে। অবশ্য কিছু খাতে বৃদ্ধির হার আরো কমও রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কসপ সেবা, ডকইয়ার্ড সেবা, সব ধরনের নির্মাণ সংস্থা, পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য পরিবহন ও অন্যান্য পরিবহন সেবা, ইমিগ্রেশন উপদেষ্টা,  স্থান ও স্থাপনা ভাড়া ও স্পন্সরশিপ সেবাসহ আরো কিছু খাত। অন্যদিকে ট্যারিফ মূল্য ধরে কিছু খাত ভ্যাট দিলেও এবার তাদের উপরও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়েছে। এ তালিকায় হাতে তৈরি বিস্কুট ও কেকও রয়েছে।

ভ্যাটের আওতা বিস্তৃত করে জেলা শহরের বাইরেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে ভ্যাটের আওতায় আনা হচ্ছে। বিশেষত ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় অবস্থিত সব ধরনের উত্পাদনমুখী প্রতিষ্ঠানকে ‘বাধ্যতামূলকভাবে’ ভ্যাটের আওতায় আনা হচ্ছে। জেলা শহরের বাইরের হোটেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ইসিআর (ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার) মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

প্যাকেজ ভ্যাট দ্বিগুণ: ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা আরো এক বছর বাড়ানো হলো কিন্তু এ হার দ্বিগুণ করে দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী- ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য এ ভ্যাট ২৮ হাজার টাকা। এর বাইরে অন্য সিটি করপোরেশনের জন্য ২০ হাজার টাকা, জেলা শহরের পৌর এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য ১৪ হাজার টাকা এবং বাদবাকি এলাকার জন্য ৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, মূলত ব্যবসায়ীদের নতুন আইনে নিতে উদ্বুদ্ধ করা কিংবা বাধ্য করতেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।