নজরুলের শ্বশুরের দাবি: ছয় কোটি টাকা নিয়ে খুন করেছে র‌্যাব

 

স্টাফ রিপোর্টার: নাসিক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দনসরকারসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা ঘটনায় র‌্যাব-১১’র তিন কর্মকর্তা জড়িত বলেঅভিযোগ করেছেন নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। গতকাল দুপুরেনারায়ণগঞ্জের রাইফেলস ক্লাবে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন। তিনিবলেন, নজরুল হত্যাকাণ্ডের সাথে র‌্যাব ১১’র সিও লে. কর্নেল তারেক সাইদ, মেজর জাহাঙ্গীর ও মেজর রানা জড়িত। তারাই নজরুলসহ অন্যদের তুলে নিয়েগিয়েছিলো। ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। শহীদুল ইসলামবলেন, নজরুলকে যেখান থেকে তুলে নেয়া হয় সেখানে কয়েকজন বালিশ্রমিক কাজকরছিলেন। তারা সেখানে র‌্যাব-১১ লেখা দুটি মাইক্রোবাস ও একটি জিপ দেখেছেন।তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই আমি এমপি শামীম ওসমানকে বিষয়টি জানাই। তিনি র‌্যাবসিও’র সাথে দেখা করতে বলেন। তার কাছে গেলে তিনি আমাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখেনানারকম প্রশ্ন করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে শামীমওসমান জড়িত বলে জানান। শহীদুল ইসলাম বলেন, আমার ছোট ভাই হাসমত আলী হাসুরসাথে নুর হোসেনের সখ্য রয়েছে। হাসুর অ্যাকাউন্ট থেকে দু কোটি টাকা হস্তান্তরহয়েছে। এ অ্যাকাউন্টগুলো চেক করলেই ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসবে। তিনি টাকারবিষয়টি কিভাবে জানতে পারলেন প্রশ্ন করলে তার আরেক ছোট ভাই তাকে এসব তথ্যজানিয়েছে বলে জানান। শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি প্রথম দিনই এ ঘটনা জানতেপারি। র‌্যাবের ওই তিন কর্মকর্তাসহ মোট ১৩ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জথানায় মামলা করতে যাই। কিন্তু এসপি ও ওসি আমার মামলা নেয়নি। তারা আমাকেবলেছে সরকারি বাহিনীর কারও বিরুদ্ধে মামলা করলে তদন্ত হালকা হয়ে যাবে। তারাআমাকে দু দিন ঘুরিয়েছে।
এদিকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গেজানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএমহাবিবুর রহমান বলেন, ভিকটিম পরিবার একেক সময় একেক রকম কথা বলছেন। তারা কখনওরাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আবার কখনো র‌্যাবের কথা বলছেন। এটি আসলেউদ্দেশ্যমূলকভাবে বলা হচ্ছে। তারপরও র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে বিষয়টি খতিয়েদেখা হচ্ছে।

অভিযোগের কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: নারায়ণগঞ্জের আলোচিতসেভেন মার্ডারের ঘটনার সব অভিযোগের কেন্দ্রে এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী। একদিকে যেমন অপহরণের পর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক)প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণেরঘটনাটির সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।অপরদিকে তেমনি অপহরণের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেয়া পদক্ষেপ নিয়েওপ্রশ্ন উঠেছে, অপহৃতদের জীবিত উদ্ধারে কার্যকরী কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনিপুলিশ। লাশ উদ্ধারের পরও নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ আমলে নেয়নিপুলিশ। গ্রেফতার করা হয়নি অভিযুক্তদের। একারণে এজাহারভুক্ত আসামিরাওপালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সাতদিন পর এজাহারভুক্ত আসামিদের বাড়িতেপুলিশের তল্লাশিকে সবাই বলছে আইওয়াশ। একই সাথে আলোচিত এই অপহরণ ওহত্যাকাণ্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়েছে রাজনীতি। নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীমওসমান ও নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত হিসেবেপরস্পরকে দোষারোপ করছেন। নিহতের পরিবারের সদস্যরাও প্রথমে হত্যাকাণ্ডের সাথেওসমান পরিবারের হাত থাকার কথা বললেও এখন সুর পাল্টিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, প্রধান অভিযুক্ত নুর হোসেন বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরএকটি বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে এই সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা করিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরাজানান, নারায়ণগঞ্জের শিবু মার্কেটের যেখান থেকে নাসিক প্যানেল মেয়র ওআইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে ধরে নেয়া হয় সেই দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। তবেভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। সেখানে র‌্যাব-১১লেখা দুটি মাইক্রোবাস ও একটিজিপ দাঁড়িয়ে ছিলো। ঘটনার পরপরই পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নজরুলসহ অন্যদেরসরকারের একটি বিশেষ বাহিনী আটক করেছে বলে জানতে পারেন। একারণে উদ্ধারেওতেমন তৎপরতা দেখাননি তারা। কিন্তু তিন দিন পর তাদের লাশ উদ্ধার হলে টনক নড়েপুলিশ কর্মকর্তাদের। কিন্তু কিছুই করার নেই তাদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাতদিন পর নুর হোসেনের বাসায় অভিযান চালানো এবং গাড়ি আটক করার বিষয়টি রীতিমতোহাস্যকর। নুর হোসেনের নিজের মালিকানাধীন তিনটি মাইক্রোবাস ও চারটিপ্রাইভেটকার রয়েছে। অন্য গাড়িগুলো সরিয়ে রেখে কথিত রক্তমাখা মাইক্রোবাসটিকেন বাসায় রাখতে যাবে?আবার পুলিশ কর্মকর্তারা নুর হোসেনের বাসা থেকে ১১জনকে আটক করলেও তারা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কি-না তা নিশ্চিত করতে পারেনিপুলিশ। এমনকি নিহত চন্দন সরকারের মোবাইলসহ গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিওহত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত নয় বলে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। মূলঅভিযুক্ত নূর হোসেন প্রথম তিন দিন এলাকায় অবস্থান করলেও তাকে ধরতে অভিযানচালায়নি পুলিশ। লাশ উদ্ধারের দিন নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা হওয়ারসাথে সাথে সে আত্মগোপনে চলে যায়।