ধারালো অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে দু পায়ের রগ কেটে লাশ ফেলে রাখার খবর প্রচার

স্টাফ রিপোর্টার: সুমন নামের এক যুবককে চুয়াডাঙ্গার কোর্টমোড়ের একটি দোকান থেকে ধারালো অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে ওয়াপদার মধ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও দু পায়ের রগ কেটে জখম করেছে একদল দুর্বৃত্ত। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কোর্টমোড়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেতর নিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়। রাত ৯টার দিকে মোবাইলফোনে কয়েকটি স্থানে সুমনের লাশ ফেলে রাখার খবর জানায় অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তি। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে মোবাইলফোনেই খবর পেয়ে সুমনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে রিকশাযোগে হাসপাতালে নেন তার বৃদ্ধ পিতা শান্তিপাড়া-মুসলিমপাড়া জোলের বাসিন্দা রুহুল আমিন।

সুমনকে (২০) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে কমপক্ষে ৫০টি সেলাই দিতে হয়েছে। রক্ত দিতে হয়েছে কয়েক ব্যাগ। দু পায়ের রগ ভয়াবহভাবে কেটে দেয়ায় অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে গতরাতেই তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করা হয়। মধ্যরাতে সুমনকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকার উদ্দেশে নেয়া হয়েছে। পথিমধ্যে তার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া চিকিৎসক বলেছেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সুমনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলেও পরে কয়েক ব্যাগ রক্ত দেয়ার ফলে সে অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। পায়ের শিরা কেটে দেয়ায় সে স্বাভাবিকভাবে হাটতে পারবে কি-না তা নিয়ে এখন ঘোর সন্দেহ রয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় কোর্টমোড়ের কম্পিউটার দোকান ঘাশফুল থেকে ধারালো অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে দু পায়ের রগই শুধু কাটা হয়নি; হাতে, পিঠে ও ঘাড়ে কোপ মেরে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। আর কিছুক্ষণ পড়ে থাকলে সুমনের লাশই উদ্ধার করতে হতো তার পিতাকে। এরকমই মন্তব্য করে চিকিৎসক বলেছেন, পায়ের রগ কাটা হয়েছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পোচিয়ে। বাম হাতের ওপরে ও তালুতেও কোপ মারা হয়েছে। পিঠের বাম পাজড়ে যেখানে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে সেটা শরীরের খুবই স্পর্ষকাতর স্থান। সুমনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেয়ার সময় সে ১১ জনের নাম বলেছে। সুমন বলেছে, চুয়াডাঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগ নেতা রাজুসহ কয়েকজন কোর্টমোড়ের দোকানে ঢুকেই ধারালো অস্ত্রের মুখে তুলে নেয় অটোতে। তারপর নিয়ে যায় ওয়াপদার মধ্যে। সেখানে তারেক, রাজু, রানা, রবিন, মোমিন, খালেক, হিমেল ও প্রান্ত ইচ্ছেমতো কুপিয়েছে। কেটেছে পায়ের রগ।

কেন নৃশংসভাবে কুপিয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে সুমন নীরব থেকেছে। তার পাশে থাকা তার ভাই সুরুজ এবং বৃদ্ধ পিতা রুহুল আমিন বলেছেন, সুমন রাজনীতি করে না। ফুডগোডাউনের বস্তা সেলাইয়ের কাজ করে। কেন ওইভাবে কুপিয়েছে তা বলতে পারবো না। তবে একাধিক সূত্র বলেছে, এই সুমন চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি রেলগেট এলাকায় দাপটের সাথে ঘোরে। সে এক সময় ছিলো ছাত্রদলের কিরণের সাথে। কিরণ গুলশানপাড়ার জিন্নাত আলীর ছেলে। কিরণ ২০১২ সালের ৬ সেপ্টম্বর রাত ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের স্কুল ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রাজুকে কেদারগঞ্জ ইম্প্যাক্ট হাসপাতালের সামনে কুপিয়ে জখম করে। সেই থেকে কিরণ চুয়াডাঙ্গায় প্রকাশ্যে ঘোরে না। কিরণের অবর্তমানে সুমন ছাত্রলীগের এক পক্ষের মিছিলে যোগ দেয়। এরই মাঝে গতকাল সন্ধ্যার পর তাকে কোর্টমোড়ের দোকান থেকে তুলে নিয়ে নৃশংসভাবে ক্ষতবিক্ষত করা হলো। যাদের বিরুদ্ধে সুমন অভিযোগ করেছে, তারা সকলেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

সুমন চুয়াডাঙ্গা মুসলিমপাড়া-শান্তিপাড়া জোলের ভেতরের বাসিন্দা রুহুল আমিনের ছেলে। রুহুল আমিনের স্ত্রীর বড় বোন শান্তিপাড়ার আলোচিত মাদকবিক্রেতা শিপরা। সুমনের বিরুদ্ধে মারামারির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে বলে জানা গেছে। সুমনের সাথে কিছুদিন আগে হাসপাতালের ট্রলি নিয়ে বিরোধ বাধে রাজুসহ কয়েকজনের সাথে। সেই বিরোধের জের ধরে রাজু এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে মন্তব্য সুমনেরই এক বন্ধুর।