ধর্মান্তরিত সাইফুল্লাহ ওজাকিই হোলি আর্টিজান হামলার মাস্টারমাইন্ড : রিপোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার: গুলশানের হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড ধর্মান্তরিত মুসলিম মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি। এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুল্লাহ ওজাকি ওরফে সুজিত দেবনাথই হচ্ছেন বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট এর কথিত আমির। গত বছরের জুলাইয়ের ১ তারিখ গুলশানের ৭৯ নাম্বার রোডে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে যাতে নিহত হয় ২৪ জন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, হামলাকারীরা নব্য জেএমবির সদস্য। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে আইএস এর দাবিক ম্যাগাজিনে কথিত বাংলাদেশি আমিরের সাক্ষাতকার ছাপা হয়। ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয় শাইখ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ ছদ্মনামে ছাপা হওয়া বাংলাদেশের কথিত আমির সাইফুল্লাহ ওজাকি। এই ওজাকিই হোলি আর্টিজানসহ আইএসের দাবি করা হত্যাকাণ্ডগুলোর মাস্টারমাইন্ড।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কড়ুইবাড়ি গ্রামের জনার্ধন দেবনাথের ছেলে সুজিত চন্দ্র দেবনাথ এই সাইফুল্লাহ ওজাকি। জাপানে যাওয়ার পরই ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বিয়ে করেন জাপানী নারীকে। তাদের তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে যাদের নাম নবীদের নামে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ছোট ছেলের নাম অনুসারে ছদ্মনামটি গ্রহণ করেছেন ওজাকি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পিএইচডি ডিগ্রিধারী সাইফুল্লাহ জাপানের রিৎসুমেইকান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন এবং ইসলামি অর্থনীতি ও ধর্মীয় তত্ত্বে গভীর জ্ঞান রাখেন তিনি। ২০১৫ সালে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ ছদ্মনাম ধারণ করেন কারণ বাংলাদেশের পুলিশ গাজী সোহান ও আমিনুল ইসলাম বেগ নামের দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করলে তার পরিচয় প্রকাশিত হয়ে পড়ে। সাইফুল্লাহকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে আইএসের আমির হিসেবে মনোনীত করা হয়, সেই সময় তুরস্ক থেকে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে জাপানে ফিরেছিলেন।

আইএসের প্রভাবশালী সদস্য ও তার পরামর্শদাতা জাপানি নাগরিক হাসান কো নাকাতা ওরফে শাইখ হাসান আল ইয়াবানি তার নাম বাংলাদেশের আমির হিসেবে ওজাকির নাম সুপারিশ করেন। ওজাকির পৃষ্ঠপোষকতায় ও নির্দেশনায় ২০১৫ সালের জুলাইয়ে আইএস আদর্শানুসারী দাওলাতুল ইসলাম বেঙ্গলের সৃষ্টি বলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটিতে বলা হয়।

কানাডীয় বংশোদ্ভূত জঙ্গি তামিম আহমেদ চৌধুরী ওরফে আবু দুজানাহ আল বাঙালিকে সামরিক ও গোপনীয় অপারেশন প্রধান নিয়োজিত করা হয়, আর সারওয়ার জাহানকে নিয়োজিত করা হয় মাঠপর্যায়ে ওজাকির প্রতিনিধি হিসেবে। গুলশান হামলার পরে ধারণা করা হয় তামিমই হচ্ছেন আইএসের ম্যাগাজিনে উল্লিখিত শাইখ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ। তবে পরবর্তীতে আইএসের রুমিয়াহ ম্যাগাজিনে তামিম আহমেদ চৌধুরীকে আবু দুজানাহ আল বাঙ্গালি নামে অভিহিত করে বলা হয় তিনি বাংলাদেশে আইএসের সামরিক ও গোপনীয় অপারেশনের প্রধান।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইতালিয় নাগরিক সেজার তাভেল্লাকে দিয়ে বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড শুরু করে আইএস তথা নব্য জেএমবি। এরপরই তারা রংপুরে হত্যা করে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে। ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগ পর্যন্ত এই গোষ্ঠী সিরীয় যুদ্ধের জন্য জঙ্গিদের নিয়োগ করা। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ওজাকি বাংলাদেশি জঙ্গি নিয়োগের বিষয়টির প্রধান চালক। ২০১৪ সালে ওজাকি ও সৌদি নাগরিক নাসির মোহাম্মদ আওয়াদ শীর্ষ জঙ্গি নিয়োগকারীর পুরস্কার হিসেবে ২০১৫ সালে তাদের আমির হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়।

সাইফুল্লাহ ওজাকি বর্তমানে কোথায় আছেন তা সম্পর্কে কারো কাছেই সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পরিবার নিয়ে ২০১৫ সালে বুলগেরিয়া দিয়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় গেছেন তিনি। কিন্তু কিছু কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ওজাকি মালয়েশিয়া অথবা ইন্দোনেশিয়ায় আছেন। ওজাকির পরামর্শদাতা হাসান কো নাকাতার সাথে ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জেমাহ ইসলামিয়াহর দীর্ঘদিনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। শুধু তাই নয়, দাবিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাক্ষাতকারটি ওজাকির কাছ থেকে হাসান কো নাকাতাই নিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।