দ্বিতীয় পর্বেও লাখো মুসল্লির ঢল : বিশাল ময়দান জুড়ে আল্লাহু আকবার ধ্বনি

ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে লাখো মুসল্লির জুমা আদায়

 

স্টাফ রিপোর্টার: টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ইজতেমা ময়দানে লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে দাওয়াতে তাবলিগের ৪৯তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। মুসল্লিদের পদচারণা, ইবাদত-বন্দেগি আর আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে এখন মুখরিত ময়দান ও আশপাশের এলাকা।

বাদ ফজর দাওয়াতে তাবলিগের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ভারতের মাওলানা জামশেদের আমবয়ানের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। মূলমঞ্চ থেকে উর্দু ভাষায় করা এ বয়ান সাথে সাথেই বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। প্রথম পর্বে ছিলো চুয়াডাঙ্গা, দ্বিতীয় পর্বে রয়েছেন মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলার মসুল্লিরা।

দুপুরে পবিত্র জুমার নামাজে ইজতেমার জন্য নির্ধারিত এলাকার মুসল্লি ছাড়াও রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কয়েক লাখ মুসল্লি অংশ নেন। ইজতেমার ময়দান ছাপিয়ে আশপাশের সড়কগুলোতে ছড়িয়ে পড়েন মুসল্লিরা। এমনকি বিভিন্ন ভবনের ছাদ, সড়ক ও যানবাহনে যে যেভাবে পারেন, মিলেমিশে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে জুমার নামাজ আদায় করেন।

এখনও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা জামাতবদ্ধ হয়ে ময়দানে আসছেন। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে পুরো ময়দানকে ৩৮টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এতে দেশের ৩৩ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। সেইসাথে রয়েছেন ৭০ দেশের বেশ কয়েক হাজার মুসল্লি। পবিত্র হজের পর এটি হচ্ছে বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত।

জুমার নামাজে মুসল্লিদের ঢল: সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকার কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ ইজতেমায় বৃহত্তর জুমার জামাতে অংশ নিতে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মাঠ ভরে গেলে তারা আশপাশের সড়ক, ভবন, যানবাহন যে যেখানে পারেন নামাজের জন্য বসে যান। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অগণিত মুসল্লিকে রাস্তা, মহাসড়ক ও খোলা জায়গায় জায়নামাজ, পলিথিন, হোগলা ও খবরের কাগজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
বেলা দেড়টায় জুমার খুতবা পড়া শুরু করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের। পৌনে ২টায় দাঁড়ান নামাজে। স্থানীয়দের ধারণা, ইজতেমা মাঠে শুক্রবার অনুষ্ঠিত জুমার নামাজ দেশে স্মরণকালের বৃহত্তম জামাত। তাদের মতে, আবহাওয়া ও পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এবার প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি এদিন জুমার নামাজ আদায় করেছেন।
এবার বিশ্ব ইজতেমার মূল মঞ্চের বাইরে তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে বিশেষভাবে স্থাপিত মঞ্চ থেকে জুমার নামাজের ইমামতি করা হয়। বলা হয়, দিনের সেরা দিন হচ্ছে জুমা। এমনকি ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের চেয়েও বেশি ফজিলতপূর্ণ দিন এটি। এদিন হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়। এদিনই দুনিয়া ধ্বংস হবে। এদিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবে (হারাম কিছু ছাড়া), মহান আল্লাহ তা পূরণ করে দেবেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, তথ্য সচিব মুর্তজা আহমেদ, জেলা প্রশাসক মো. নুরুল ইসলামসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জুমার জামাতে অংশ নেন।

এদিকে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ট্রাক চাপায় একজনসহ ৫ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। অন্য চার মুসল্লি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

ইজতেমার মাসলেহাল (লাশের) জামায়াতের জিম্মাদার আদম আলী জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে মাগুরার শালিখা থানার হাজরাহাটি গ্রামের তোজাম সরদার (৭২), বৃহস্পতিবার রাত ১১টার টার দিকে কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার কুরচাব গ্রামের আব্দুল লতিফ (৭৫), একই রাত ৩টার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার দুর্গাপুর এলাকার নূরে আলম (৬৫) এবং বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোপালগঞ্জের মোকছেদপুর থানার ফকিরহাটখোলা এলাকার আব্দুর রব শেখ (৭০) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।

টঙ্গী থানার ওসি জানান, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়ক পার হতে গিয়ে দু ট্রাকের মধ্যে চাপা পড়ে নোয়াখালী সদরের বাতিয়া গ্রামের মাওলানা হেদায়েত উল্লাহ (৭০) মারা যান। তিনি মাইজদি মদিনাতুল উলুম কওমি মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।