দ্বিগুন টাকা পাওয়ার লোভে প্রায় দু লাখ টাকা হারিয়েছে ভালাইপুরের দুজন

 

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: টাকায় টাকা। এক টাকায় দু টাকা। এ প্রলোভনে পড়ে চুয়াডাঙ্গা ভালাইপুর মোড়ের মিরাজুল ও তার মামাতো ভাই লিটন ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা হারিয়ে এখন হায় হায় করছে। দ্বিগুন টাকার লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালানো জাদুকর মুকুল সরকার আত্মগোপন করেছে। তাকে ধরে দিতে অপর জাদু শিল্পী নজুরুলকেপরিবারসহ আটকে রাখা হয়েছে।

মিরাজুল ও লিটন জাদু শিল্পী মুকুল সরকারের প্রলোভনে পড়লো কীভাবে? জানতে গিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্থানীয়রা বলেছে, সম্প্রতি ভালাইপুর মোড়ে মেলা হয়। মেলায় জাদু প্রদর্শনের জন্য প্যান্ডেল নেন বগুড়া সারিয়াকান্দির ফুলবাড়িয়ার মোহাম্মদ আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম। তিনি তার স্ত্রী টুলি বিবিসহ এক ছেলে রবিউলকে নিয়ে ভালাইপুর মোড়ের মিরাজুলের বাড়িতে আশ্রয় নেন। জাদু প্রদর্শনের সহযোগী হিসেবে নজরুল ইসলাম ডেকে আনেন সিরাজগঞ্জের তারাস উপজেলার মানিক চাপড়ের মুকুল সরকারকে। মেলা শেষে মুকুল সরকার ফিরে যায়। সপ্তা দু আগে ফের নজরুলের সাথে দেখা করতে ভালাইপুরের মিরাজুলের বাড়িতে আসে। এ সময় তার মিষ্টি কথায় ভুলতে শুরু করে মিরাজুল। সে তার স্ত্রীকে বাধ্য করানোর তথা বশীকরণের দাওয়ায় নেয়। তেলপড়ায় কাজ হচ্ছে বলে মিরাজুলের মনে হলে মুকুলের ওপর বিশ্বাস বেড়ে যায়। এ সুযোগে মুকুল জানায় সে এক টাকা দু টাকায় রূপান্তর করার মন্ত্র জানে। মিরাজুল তার মামাতো ভাই লিটনকে বলে। লিটন টাকা দ্বিগুন করতে রাজি হয়। যন্ত্রপাতি কিনতে লিটন প্রথমে ৩০ হাজার টাকা দেয়। সেই টাকা নিয়ে ফিরে যায় মুকুল। কয়েকদিন পর ফের ভাইলাইপুর মোড়ের মিরাজুলের বাড়িতে আসে। মিরাজুল ঋণ নিয়ে ৭০ হাজার টাকা আর লিটন তার মোটরসাইকেল বিক্রি করে মুকুল সরকারের হাতে তুলে দেয় ৯০ হাজার টাকা। এ টাকা দ্বিগুন করে দেয়ার কথা বলে মাটির হাঁড়ি, কাফনের কাপড়, মমবাতি ম্যাচ, কাঠের গুঁড়ো জোগাড় করে। মিরাজুলের ঘরের মধ্যে হাড়ি রাখে। সেখানেই মন্ত্রতন্ত্র জপের নাটক করে। মিরাজুল ও লিটনকে দিয়েই টাকার মাপে কাটা সাদা কাগজের বান্ডিল কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে ওই হাঁড়ির মধ্যে রাখতে বলে। বাকি টাকার নোট মুকুল হাঁড়ির মধ্যে রাখার নাটকও করে। কৌশলে সে প্রকৃত টাকাগুলো হাতিয়ে নিয়ে বলে, এক সপ্তাহ পর কাগজগুলোও টাকা হয়ে যাবে। টাকার পরিমাণ পাওয়া যাবে যা রাখা হয়েছে তার দ্বিগুন। এক সপ্তাহ পর আমি নিজেই এসে হাঁড়ি খুলবো বলে মুকুল ফিরে যায়। সপ্তাহ পার হয়। মুকুলের হদিস মেলে না। তার মোবাইলফোনও বন্ধ। মিরাজুল ও তার মামাতো ভাই লিটনের বুঝতে আর বাকি থাকে না, সর্বনাশ হয়ে গেছে। এখন?

মিরাজুলের বাড়িতেই রয়েছেন যাদু শিল্পী নজরুল। তিনিই যেহেতু মুকুল সরকারকে ভালাইপুর মোড়ের মেলায় এনেছিলেন, সেহেতু তিনি মুকুলকে ধরে আনবেন বলে দাবি। এ দাবিতে নজরুলকে গতপরশু মিরাজুলের বাড়িতে সপরিবারে আটকে রাখা হয়। এ সময় নজরুলর বলেন, এতোকিছু হয়েছে তার কিছুই আমি জানি না। আমাকে মিরাজুল বা লিটন কিছুই বলেনি। কেনো? এ প্রশ্নের জবাবে মিরাজুল বলেছে, ওই মুকুল সরকারই বলেছিলো, যদি নজরুল জানতে পারে তা হলে টাকা আর দ্বিগুন হবে না, মন্ত্র নষ্ট করে দেবে। এ কারণেই তখন বিষয়টি গোপন করেছিলাম।