দৌলতপুরে যাচাই-বাছাইয়ের নামে প্রতিবন্ধীদের হয়রানি : ১ জনের মৃত্যু : অসুস্থ শতাধিক

সমাজসেবা অফিসারের শাস্তি দাবি

 

দৌলতপুর প্রতিনিধি: যাচাই-বাছাই ও তালিকা করার নামে বোশেখের প্রখর রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে চরমভাবে হয়রানি করা হয়েছে কয়েক হাজার দুস্থ প্রতিবন্ধীকে। এতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শতাধিক প্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে কেউ কেউ স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযোগের তীর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কেকেএম ফজলে রাব্বির দিকে। এতে স্থানীয় মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের এ ধরনের হয়রানি করায় সমাজসেবা কর্মকর্তার শাস্তি দাবি জানিয়েছেন বাছাইয়ের জন্য আসা প্রতিবন্ধী ও তাদের স্বজনরা।

জানা গেছে, উপজেলার ১৪ ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ ও যাচাই-বাছাইসহ তালিকা করার নিয়ম থাকলেও সমাজসেবা কর্মকর্তা মাইকিং করে প্রচারের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ মাঠে প্রতিবন্ধীদের সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার প্রতিবন্ধী উপজেলা পরিষদ মাঠে জড়ো হন। একপর্যায়ে তা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। দিনভর খোলা মাঠে প্রখর রোদে অসহায় প্রতিবন্ধীরা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে এদের মধ্যে শুকুর আলী (৭০) নামে এক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ হার্টঅ্যাটাক করে মারা যান। তার বাড়ি উপজেলার গোয়ালগ্রাম এলাকার মৃত আতর আলীর ছেলে। উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের সালেহা খাতুন নামে এক বাকপ্রতিবন্ধী রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তাকে দ্রুত বাড়ি নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। এছাড়া প্রায় শতাধিক প্রতিবন্ধী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থরা দৌলতপুর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নেন। পরে সমাজসেবা কর্মকর্তা কেকেএম ফজলে রাব্বিসহ অন্য দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিবন্ধীদের তালিকা করতে গিয়ে হিমসিম খান এবং হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়। কর্মকর্তারা অব্যস্থাপনার মধ্যে তালিকা করতে ব্যর্থ হলে এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক প্রতিবন্ধী বাড়ি ফিরে যান।

খলিসাকুণ্ডি ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী নাসির বেলা ২টা পর্যন্ত তার নাম তালিকাভুক্ত করতে না পেরে বাড়ি ফিরে যান। তিনি বলেন, এভাবে অসহায় মানুষদের ডেকে নিয়ে তামাশা করা ঠিক হয়নি। আমাদের মতো মানুষদের ডেকে নিয়ে বড় কর্তারা আনন্দ পেলেও সেটা আমাদের জন্য চরম কষ্টের। একই অভিব্যক্তি জানালেন দুর্গম পদ্মাচর চিলমারী ইউনিয়ন থেকে আসা শারীরিক প্রতিবন্ধী এইচএসসি পরীক্ষার্থী রোকনুজ্জামান। তিনি বলেন, এতোদূর থেকে এসে কোনো কাজই হলো না। পরীক্ষার মধ্যে এভাবে ডেকে এনে রীতিমতো নাজেহাল করা হলো বলে তিনি মন্তব্য করেন।

দৌলতখালী গ্রামের হাসমত আলী, চরসাদিপুর গ্রামের নাহারুল ইসলাম, ফিলিপনগর গ্রামের রোকেয়া বেগম, একই গ্রামের জাহিদুল ইসলাম, গোবরগাড়া গ্রামের রাসেল উদ্দিন, তেলিগাংদিয়া গ্রামের নুর মহম্মদ জানান, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সংবাদ দিয়ে তাদের উপজেলা পরিষদ চত্বরে ডেকে আনা হয়। সে অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে তারা সেখানে এসে হাজির হন। দুপুর পর্যন্ত প্রচণ্ড রৌদ্রের খরতাপের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ তাদের কোনো খবর নেয়নি।

এ ঘটনায় রিফায়েতপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইছাহক আলী, মরিচা ইউপি চেয়ারম্যান মহাবুল হোসেন, মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ও প্রাগপুর ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম গেদু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়মবহির্ভুতভাবে হাজার হাজার অসহায় প্রতিবন্ধীকে একইদিনে এক সাথে জড়ো করে অযথা তাদের কষ্ট দিচ্ছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কেকেএম ফজলে রাব্বির সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রতিন্ধীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার তিনি বলেন, অনেক লোকের জমায়েত হলে সেখানে কিছু বিশৃঙ্খলা হতেই পারে। এটি মেনে নিতে হবে। পাইরেসি ঠেকাতে প্রতিবন্ধীদের একযোগে ডাকা হয়েছে। তিনি জানান, পুরোনো তালিকার সাথে শতকরা ২৭ ভাগ প্রতিবন্ধীকে নতুন করে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। তবে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাভোগীরাও প্রতিবন্ধী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশায় এখানে এসে উপস্থিত হওয়ায় বাড়তি মানুষের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে প্রতিবন্ধীদের যাচাই-বাছাইয়ে চরম বেগ পেতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কেকেএম ফজলে রাব্বির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পানয় না। ১৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার প্রতিবন্ধী ও জনপ্রতিনিধিরা এ সমাজসেবা অফিসারের শাস্তি দাবি করেন।