দৌলতদিয়ায় ফেরি পারের অপেক্ষায় গরুবাহী শতাধিক ট্রাক : চরম দুর্ভোগ

নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিন ও রাতের বিভিন্ন সময়ে স্পিডবোড নিয়ে এলাকা টহল দিচ্ছে পুলিশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া গরুভর্তি শতাধিক ট্রাক রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আটকে পড়েছে। গরুব্যাপারি ও গরু নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া খামারিদের পড়তে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে।

জানা গেছে, নৌরুট স্বাভাবিক রাখতে কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পদক্ষেপ সত্ত্বেও দৌলতদিয়া প্রান্তে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফেরি পার হতে আসা ঢাকাগামী শতাধিক গরুবাহী ট্রাকসহ আটকে পড়েছে বিভিন্ন যানবাহন।

আমাদের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি মাসুম মণ্ডল জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তবর্তী জেলা থেকে গরুবাহী শ শ ট্রাক নদী পার হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন যানবাহনের পাশাপাশি দৌলতদিয়া ঘাটে আটকে গেছে গরুবাহী শ শ ট্রাক। দৌলতদিয়া ঘাটে বিশাল ট্রাক টার্মিনালটিও অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ট্রাকগুলোকে। আটকে পড়া যানবাহনের সারি ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার দূরের দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত রয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ী শেখ নজরুল ইসলাম বাবু জানান।

কর্তৃপক্ষ ঈদ উপলক্ষে ফেরি বাড়ানোর কথা বললেও নৌরুটে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে ৯টি রো রো ফেরি (বড় ফেরি) ও ৩টি কে টাইপ ফেরি (ছোট ফেরি) দিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ এ রুটে ১৪/১৫টি ফেরির প্রয়োজন হলেও এ সময় চলাচল করছে মাত্র ১২টি ফেরি। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে দৌলতদিয়া ঘাটে প্রতিরাতে ও দিনে গরুবাহী শ শ ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন আটকা পড়েছে। এ সুযোগে স্থানীয় দালালচক্র ও ফেরির লোকজন গরুবাহী ট্রাক থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে চালকরা অভিযোগ করেছেন।

পাটুরিয়া ঘাটের সহকারী টার্মিনাল তত্ত্বাবধায়ক শরিফুল ইসলাম জানান, পাটুরিয়া ঘাটে পারের অপেক্ষায় তিনশ ট্রাক ও শতাধিক যাত্রীবাহী বাস এবং প্রাইভেটকার রয়েছে।  বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত সহকারী মহাব্যবস্থপক জিল্লুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার তিনশ ৫৩টি গরুবাহী ট্রাক নদী পার করা হয়েছে। রুটে যানবাহন পারাপার স্বাভাবিক রাখতে চলাচলকারী কোনো ফেরি বিকল হলে সাথে সাথে তা মেরামত করার জন্য পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতিকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এজন্য ওই মেরামত কারখানার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।

রাজবাড়ী পুলিশ সুপার রেজাউল হক জানান, পবিত্র ঈদুল আজহা ও শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাও ঢেলে সাজানো হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি শাদা পোশাকেও পুলিশের বিভিন্ন শাখা কাজ করছে। এ কারণে নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিন ও রাতের বিভিন্ন সময়ে স্পিডবোড নিয়ে এলাকা টহল দিচ্ছে পুলিশ। সব মিলিয়ে এবার ঈদে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে দৌলতদিয়াঘাট এলাকা নিরাপত্তার বিশেষ চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। অপরদিকে ঘাটের সার্বিক অবস্থা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে দৌলতদিয়া রেস্ট হাউজে প্রশাসনের উদ্যোগে ঘাট এলাকা স্বাভাবিক রাখতে প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছরোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন- গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আবুল বাসার, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, বাসমালিক সমিতির কর্মকর্তারা। সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে যানবাহন দেখা ব্যতীত কাউকে ফেরির টিকিট দেয়া হবে না, যাত্রী ডাকতে মাইক ব্যবহার করা যাবে না এবং ঘাটের আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে দুটি টিম সার্বক্ষণিক কাজ করবে ঘাট এলাকায়।