দোষ স্বীকার না করলেও অপরাধী শাস্তি পাবে

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঘটনাস্থলে অপরাধ স্বীকার না করলেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাত্ক্ষণিক বিচারের মাধ্যমে কোনো অপরাধীকে শাস্তি দিতে পারবেন। এ ধরনের বিধান সংযোজন করে সংশোধন করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন-২০০৯। বিদ্যমান আইনে অপরাধ স্বীকার না করলে কাউকে শাস্তি দেয়ার সুযোগ নেই। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, আইন সংশোধনের কাজ চলছে। শিগগিরই তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর সেটি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠানো হবে।

প্রসঙ্গত, গত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদ্যমান আইন দ্বারা অপরাধীকে শাস্তি দেয়া কঠিন। কারণ, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী যতোক্ষণ কোনো অপরাধী তার দোষ স্বীকার না করে ততোক্ষণ তাকে শাস্তি দেয়া যায় না। সে কারণে এমন বিধান করা দরকার যে, দোষ স্বীকার না করলেও স্থানীয় সাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে অপরাধীকে যেন শাস্তি দেয়া যায়। জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে দণ্ডবিধির আরও ২৯টি ধারার অপরাধের বিচার  করার ক্ষমতা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপর অর্পণ করার প্রস্তাব করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাবের মধ্য থেকে ২৩টি ধারার অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ওইসব প্রস্তাব ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা পাঠায়। এ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন সংশোধনের কাজ শুরু করে।

সূত্র জানায়, দণ্ডবিধির ১৮০ ধারা ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ ধারায় বলা আছে, আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি কর্মচারীর নিকট প্রয়োজনীয় বিবৃতি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করা- অর্থাৎ যদি কেউ অপরাধ স্বীকার নাও করে তবে ১৮০ ধারার বাধ্যবাধকতার মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত কোনো অপরাধীকে ছয় মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচশ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দিতে পারবেন।

এছাড়াও নতুন এ সংশোধনীর ফলে নৌযান কিংবা সড়ক পথে চলাচলকারী যানবাহনের দ্বারা সংঘটিত দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারবেন এবং এ জন্য অপরাধীকে শাস্তি দিতে পারবেন। এছাড়া পরিবেশ দূষণ ও ভেজালবিরোধী যেকোনো কাজের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অপরাধীকে ঘটনাস্থলে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিতে পারবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। হরতালে অগ্নিসংযোগ করে জীবনহানি বা জীবনহানির চেষ্টা করলেও ভ্রাম্যমাণ আদালত অপরাধীকে শাস্তি দিতে পারবে।

সূত্র জানায়, এসব অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অপরাধীকে কমপক্ষে দু বছর জেল ও ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড দিতে পারবে-এমন সুযোগ রাখা হচ্ছে সংশোধিত আইনে। এছাড়া অন্য যে সব ধারার অপরাধ ভ্রাম্যমাণ আদালতে সংশোধিত আইনে সংযোজন করা হচ্ছে- সেগুলো হলো- দণ্ডবিধি ১৭০-ভুয়া সরকারি কর্মচারী বলে পরিচয় দেয়া, দণ্ডবিধি ১৭১- অসৎ উদ্দেশে সরকারি কর্মচারীর পোশাক পরিধান বা চিহ্ন বহন, দণ্ডবিধি ১৮২- কারও ব্যক্তিগত ক্ষতি বা বিরক্তির নিমিত্তে কোনো সরকারি কর্মচারীর আইনসঙ্গত ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য তাকে মিথ্যা খবর দেয়া, দণ্ডবিধি ২৭৭- সর্বসাধারণের ব্যবহারের ঝরনা বা সংরক্ষণাগারের পানি দূষিত করা, দণ্ডবিধি ২৭৮- আবহাওয়াকে স্বাস্থ্যের পক্ষে অনিষ্ট করা, দণ্ডবিধি ২৭৯- মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে এভাবে সাধারণের ব্যবহার্য রাস্তায় বেপরোয়া বা অবহেলার সাথে গাড়ি বা ঘোড়া চালানো, দণ্ডবিধি ২৮০- মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে এরূপভাবে নৌযান চালানো, দণ্ডবিধি ২৮৩- সর্বসাধারণের ব্যবহার্য রাস্তা বা নৌপথে বিপদ, বাধা বা ক্ষতির কারণ ঘটানো, দণ্ডবিধি ২৮৪- মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে এরূপ কোন বিষাক্ত দ্রব্য নিয়ে কারবার, দণ্ডবিধি ২৮৫- দহনশীল দ্রব্য বা আগুন নিয়ে কারবার, দণ্ডবিধি ২৮৬- বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে কারবার, দণ্ডবিধি ২৮৭- কোন যন্ত্রপাতি ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে কারবার, দণ্ডবিধি ২৮৮- ভাঙ্গিয়া ফেলা বা মেরামতের অধিকার সংক্রান্ত কোন ব্যক্তি কর্তৃক কোন স্থাপনা ভাঙ্গিয়া পড়ার ফলে মানুষের জীবনের প্রতি সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্কতা না করা, দণ্ডবিধি ২৮৯- মানুষের জীবনের প্রতি বিপদ বা গুরুতর আঘাত যাতে না ঘটাতে পারে সেজন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার দখলীয় পশু শৃঙ্খলাবদ্ধ না রাখা, দণ্ডবিধি ৩২৩- ইচ্ছামতো আঘাত করা, দণ্ডবিধি ৩২৪- ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত, দণ্ডবিধি ৩৭৪- বেআইনিভাবে পিটানো, দণ্ডবিধি ৪২৭- ক্ষতিসাধন এবং তা দ্বারা ৫০ টাকা মূল্যের অধিক ক্ষতিসাধন করা, দণ্ডবিধি ৪২৮- ১০ টাকা বা অধিক মূল্যের প্রাণী হত্যা করা, দণ্ডবিধি ৪৪৭- অন্যায়ভাবে প্রবেশ (খোলা জায়গায়), দণ্ডবিধি ৪৪৮- গৃহে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ।