দোকান মালিক সমিতির সভাপতির গালে চড়-থাপ্পড়সহ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে মারপিট : এসপির অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু

চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারের দু দোকানির জরিমানা করায় ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অবরুদ্ধ করে কটূক্তি : মুক্ত করতে পুলিশের লাঠিচার্জ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলেও আজ সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা নিচের বাজার ও মাছের বাজার খোলা রেখে সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপাতি হাজি আসাদুল হক লেমনকে চড়-থাপ্পড়সহ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে মারপিটের প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের অবিলম্বে অপসারণের দাবিতে আনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় গতরাতে মাইকিং করে বলা হয়, পবিত্র রমজানে রোজদারদের প্রতি সম্মান জানিয়ে সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারস্থ নিচের বাজার ও মাছের বাজার খোলা রাখা হবে। পরে আজ সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।
জানা গেছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফকরুল আলমের নেতৃত্বে গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গার রেলবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। সহযোগিতায় ছিলেন বিএসটিআই খুলনা অঞ্চলের পরিচালক কামরুজ্জামানসহ একদল পুলিশ। রেলবাজারের বিশ্বাস স্টোরের মালিক আলা উদ্দিন ও নিউ বিশ্বাস স্টোরের মালিক সালাউদ্দিনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ২ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ বিস্কুট থাকার কারণে ভোক্তা আধিকার সংরক্ষণ আইন এ অর্থদ-াদেশ দেয়া হয়। একদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেন, অপরদিকে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির সামনে বেঞ্চ চেয়ার দিয়ে অবরোধ গড়ে তোলে। তাদের কেউ কেউ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অপত্তিকর কথাও বলতে থাকে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিষয়টি জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের। তারা জানান পুলিশ সুপারকে। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরুদ্ধে স্বেচ্চাচারিতার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দকে ঘটনাস্থলে আসার আহ্বান জানান। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে দোকান মালিক সমিতির সভাপাতি হাজি আসাদুল হক লেমন, সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দারসহ অনেকেই পৌঁছান সেখানে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে বাঁধা দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ দলকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে পুলিশ সুপারের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এসপি ঘটনাস্থলে পৌঁছেই মারমুখি আচরণ শুরু করেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে উত্তেজনা তীব্রতর হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলতেই আশাদুল হক লেমনের গালে চড় থাপ্পড় মারতে শুরু করেন পুলিশ সুপার। পুলিশ সদস্যরা লাঠিচার্জ শুরু করে ব্যসায়ীদের ওপর। অবরোধ মুক্ত করে পুলিশ সুপারসহ উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সকলকে উদ্ধার করে ফেরার সময় আটক করে থানায় নেয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবুসহ সাধারণ ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম ও সেলিম হোসেনকে। তাদের মারধর করে গেঞ্জি ও পাঞ্জাবি ছিড়ে দেয় পুলিশ। এদেরকে আটক করে থানায় নেয়া হলে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। পুলিশের লাঠির আঘাতে শান্তি নামের এক ব্যবসায়ী রক্তাক্ত জখম হন। তিনি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফতে আলী বিশ্বাসের ছেলে। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। অপরদিকে আটকের ঘণ্টা খানেকের মাথায় আটক তিনজনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। বেলা ৩টার দিকে জেলা শহরের ফেরিঘাট রোডস্থ সমিতির নিজস্ব কার্যালয়ে জরুরি সভায় মিলিত হন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। বেলা সাড়ে ৪টায় জেলা শহরের বড় বাজারে রাস্তার ওপর সমবেত হয়ে কর্মসূচির ঘোষণা দেয় দোকান মালিক সমিতি। সমিতির জেলা সভাপতি আসাদুল হক লেমন বলেন, ‘এসপি সাহেব নিজে আমার গালে চড়-থাপ্পড় মেরেছেন। অনেক ব্যবসায়ী পুলিশের হাতে আহত হয়েছেন। তাই এসপির অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত জেলা শহরের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ থাকবে।’ একই ঘোষণা দেন সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার। এ ঘোষণার পরপরই সাধারণ ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সঠিক নয়। মারধরের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে তারা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। আমরা তাদেরকে উদ্ধারের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। এ সময় দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কয়েকশ’ ব্যবসায়ী আমাদের ওপর হামলে পড়ে। এ কারণে তিনজনকে সাময়িকভাবে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিলো। তারা পরবর্তীতে সরকারি কাজে বাধা দেবেন না মর্মে মোচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।’
জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘ভেজাল বিরোধী অভিযান চলছিল জেলা শহরে। ব্যবসায়ীদের দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ সামগ্রী পাওয়ায় জরিমানা করা হয়। তারা জরিমানার টাকা না দিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে অবরুদ্ধে করে রাখেন। এ কারণে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো।’ এদিকে রোববার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নামে ব্যবাসায়ীদের হয়রানির প্রতিবাদ করায় জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদুল হক লেমন ও সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবুকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের নির্যাতনের ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ ও চেম্বার সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক তীব্র নিন্দা জ্ঞাপনসহ দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। সেই সাথে চলমান আন্দোলনের সাথে চুয়াডাঙ্গা চেম্বার একাত্মতা ঘোষণা করেছে বলে তিনি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান।