দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত : জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ

টানা শৈত্যপ্রবাহে বোরো বীজতলার ক্ষতি : পান গাছে দেখা দিয়েছে কাণ্ডপচা রোগ: হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শিশুজনিত রোগীর সংখ্যা

 

স্টাফ রিপোর্টার: শীতে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন বিপর্যস্ত। গতকাল মঙ্গলবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৭ দশিমক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস বলছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, রংপুর বিভাগসহ টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, সীতাকুণ্ডু, কুমিল্লা, শ্রীমঙ্গল, পাবনা, বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কমে যেতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গায় চুয়াডাঙ্গায় ৭ দশিমক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৪ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো কক্সবাজারে ২৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Jibannagar Pic. (2)

এদকে প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে শীত বেশি অনভূত হচ্ছে। কনকনে ঠাণ্ডায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ রয়েছে সবচেয়ে কষ্টের মধ্যে। কাজের সন্ধানে বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে দিনমজুরা। এদিকে টানা শৈত্যপ্রবাহে বোরো বীজতলার ক্ষতি ঠেকাতে শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। কুয়াশা, ঠাণ্ডায় জেলার প্রধান অর্থকরি ফসল পানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দেখা দিয়েছে পান গাছের কাণ্ডপচা রোগ। আর এতে অসময়ে ঝরে পড়ছে পানের পাতা। লোকসান ঠেকাতে পানচাষিরা আগেভাগেই অপুষ্ট পান তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে কৃষকদের এখন নতুন কৌশলে বীজতলা সংক্ষণের চেষ্টা করছে। ঝিনাইদহে গত এক সপ্তায় ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শিশুজনিত রোগীর সংখ্যা।

এপেক্স ক্লাব অব বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গার উদ্যোগে শীতার্ত নারী-পুরুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় চুয়াডাঙ্গা আলী হোসেন মার্কেটে এপেক্স ক্লাব অব বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গার কার্যালয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এপেক্স ক্লাব অব বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গার সভাপতি আ. রশিদ, আরশাদ উদ্দীন চন্দন, সাধারণ সম্পাদক হাফিজ জোয়ার্দ্দার, আজীবন সদস্য সোহরাব উদ্দিন, জেলা-৬’র গভর্নর অ্যাড. আসাদুজ্জামান, এনআইআরডি অ্যাড. রেজাউল করিম, সাইফুল হাসান জোয়ার্দ্দার টোকন প্রমুখ।

জামজামি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জামজামির মধুপুর বাজারে গতকাল বিকেল ৩টায় ইউনিয়ন আ.লীগের উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। জামজামি ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো. দিদার আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জামজামি ইউপি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তপন কুমার বিশ্বাসের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন আ.লীগ নেতা রিপন শাহ, শরিফ উদ্দিন, সিরাজ মণ্ডল, ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রতন শাহ, লালু মিয়া, আবু মুছা, লাল্টু রহমান, জমির উদ্দিন প্রমুখ।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, টানা শৈত্যপ্রবাহের কারণে হাড়কাঁপানো তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার ফলে উপজেলার সর্বত্র বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। কুয়াশা থেকে বীজতলা রক্ষা করতে উপজেলার দত্তনগরের কৃষকরা কৌশল অবলম্বন করেছেন। তারা বীজতলা পলিথিন দিয়ে সম্পূর্ণ মুড়িয়ে দিচ্ছেন। এদিকে টানা শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ে বীঝতলা শুকিয়ে যাওয়াতে উপজেলার বোরো চাষিরা বোরো ধানচাষ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মরসুমে উপজেলায় এবার ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখিত জমি চাষ করতে কৃষকূল ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু ১০ দিনব্যাপি তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে উপজেলার অধিকাংশ বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে শুকিয়ে গেছে।

উপজেলার উথলী গ্রামের বোরো চাষি ছমির উদ্দীন জানান, তিনি এবার ১ একর জমিতে বোরো আবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই জমি চাষ করতে তিনি ৫ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু দু দফায় টানা ১০ দিনের শৈত্যপ্রবাহের ফলে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজ তলার চারা শুকিয়ে গেছে। আপ্রাণ চেষ্টা করেও বীজ তলা ভালো রাখতে পারছেন না তিনি। এ ধরনের চিত্র প্রায় উপজেলার সর্বত্র।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ জানান, দু দফায় শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে উপজেলার কিছু বোরো বীজ তলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে তিনি খবর পেয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে বোরো চাষিদেরকে প্রতিদিন ভোরে বীজতলার পানি পরিবর্তন, ভোরবেলা বীজতলায় চারার আগা থেকে শিশির ফেলে দেয়া, রাতে বীজতলা সচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা ও বীজ তলায় ধানের চারার গোড়া পর্যন্ত ছাই দিয়ে ঢেকে দেয়া এবং আক্রান্ত বীজতলায় ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে হঠাৎ করেই বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা। জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। গত এক সপ্তায় সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়া আক্রান্ত ৩ শিশু মারা গেছে। রোগীর বাড়তি চাপ থাকায় চিকিৎসা দিচ্ছে হিমসিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শয্যার তুলনায় বেশি রোগী ভর্তি থাকায় অধিকাংশেরই স্থান হচ্ছে হাসপাতালের মেঝেতে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪৬ জন শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রায় দেড়শ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার অপূর্ব কুমার সাহা জানান, হঠাৎ করে ঠাণ্ডা বেড়ে যাওয়ার কারণে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। জেলার অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতেও চিত্র একই। বছরের এ সময়টা বৃদ্ধ ও শিশুরা একটু ঝুঁকির মধ্যেই থাকেন। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট যাদের, তারা শীতের সময় ভোগেন বেশি।