দু ভারতীয় নাগরিকসহ ৯ জনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা

আলমডাঙ্গায় উত্তরা গ্রুপ লিমিটেডের উপদেষ্টা সেজে শতকোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় উত্তরা গ্রুপ লিমিটেডের উপদেষ্টা সেজে ভারতীয় নাগরিক পুরুষোত্তম কুমার পাডিয়া ও রাজা রাম পাডিয়া আলমডাঙ্গা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ ও ভোটার তালিকায় নাম সংযোজন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন অবৈধ তা বাতিলের দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ৮জনকে বিবাদী ও একজনকে মোকাবেলা বিবাদী করা হয়েছে। শতকোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে নানা প্রকার ঘটনার আশ্রয় নিচ্ছে ওই দু ভারতীয় নাগরিক।

চুয়াডাঙ্গার পোস্ট অফিসপাড়ার মৃত ফকির সাবদালের ছেলে মো. নুরুজ্জামান বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে জনস্বার্থে মামলাটি দায়ের করেছেন। গত ২৬ আগস্ট দায়ের করা মামলাটি অধিকতর শুনানির জন্য আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

মামলার বিবাদীরা হলেন-পুরুষোত্তম কুমার পাডিয়া ও রাজা রাম পাডিয়া (ভারত), আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মীর মহি উদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দীনেশ কুমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক এবং মোকাবেলা বিবাদী আলমডাঙ্গা গোবিন্দপুরের সবেদ আলী।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ৭২নং গোবিন্দপুর মৌজার পাডিয়া এস্টেটের অর্পিত সম্পত্তি ও অবাসিন্দাদের নাগরিকত্ব রহিত করে বাংলাদেশ সরকার অর্পিত সম্পতির তালিকাভুক্ত করে দখল গ্রহণ করে। যা জনস্বার্থে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হচ্ছে। যা অর্পিত সম্পত্তির (ক) তফশিলভুক্ত গেজেটের ৪৬৮,৪৬৯,৪৭০,৪৮২,৪৮৫,৪৮৭,৪৮৮,৪৯০,৪৯১,৪৯২,৪৯৩,৪৯৮,৫০৫,৫০৪,৫০৫,৫০৭,৫০৮, ৫০৯,৫১০,৫১১,৫২১,৫৩০ও ৫৩১নং ক্রমিকে লিপিবদ্ধ আছে। এসব সম্পত্তি আরএস রেকর্ডে বাংলাদেশ সরকারের নামে লিপিবদ্ধ হয়ে প্রচলিত আছে। সরকার কর্তৃক তালিকাভুক্ত দখলকৃত নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত এসব সম্পত্তি সরকার লিজ কেসের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে লিজ প্রদান করে ৩৮ বছরের উর্ধ্বকাল যাবত দখল ভোগ করে। বর্তমানে পাডিয়া এস্টেটের এসব সম্পত্তিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, বাসা-বাড়ি, প্রদর্শনী নার্সারি, উপজেলা খাদ্য গুদামসমূহের সংরক্ষিত এলাকা, একাধিক পাবলিক প্রতিষ্ঠান, অফিস, লিজ গ্রহীতার ‘স’মিল, আড়ত, দোকানঘর ও বসতবাড়ি অবস্থিত। এতে বাংলাদেশ সরকার অবাসিন্দা-অর্পিত সূত্রে বৈধ দাবিদার ও মালিকানা স্বত্ব বহাল আছে। ১/২নং বিবাদীদ্বয় সম্পত্তির সাবেক মালিকদের ক্রম ওয়ারিশ নয়। তারা ভুয়া,তঞ্চকী, যোগসাজশী কাগজপত্র সৃষ্টি করে মূল্যবান সরকারি সম্পত্তি গ্রাস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে।

উল্লেখিত রেকর্ডীয় ও গেজেটভুক্ত অর্পিত অবাসিন্দা সম্পত্তির প্রচলিত এসএ রেকর্ডীয় হিন্দু প্রজাগণ বা তৎকালীন পাডিয়া এস্টেটের স্বত্বাধিকারীগণ ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ সংঘটিত হলে তারা সপরিবারে এদেশ থেকে ভারতে চলে যায় এবং ভারতে নাগরিকত্ব নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস ও ব্যবসা বাণিজ্য করে সুপ্রতিষ্ঠিত আছে। ১/২নং বিবাদীর পিতা প্রহল্লাদ রায় পডিয়া ভারতে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের ওয়ারিশ উত্তরাধিকারীগণের অন্যতম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী ঠিকানা ‘অনুপ সেলস এন্টারপ্রাইজ ২৪২৩/২৯ সুরেখা বিল্ডিং এসএনমার্গ জিবি রোড সেন্ট্রাল নিউ দিল্লি ভারত এবং অনুপ সেলস এন্টারপ্রাইজ ২৬/১ স্ট্যান্ড রোড বিডিডি বাগ কোলকাতা ৭০০০০১ পশ্চিমবঙ্গ ভারত।’

দু ভারতীয় নাগরিক ১/২নং বিবাদীদ্বয় মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভারত থেকে এসে ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকায় নাম সংযোজন, জন্ম নিবন্ধন সনদ ও নাগরিকত্ব সনদ গ্রহণ করেন এবং উত্তরা লিমিটের উপদেষ্টা সেজে বাংলাদেশের নাগরিক পরিচয়ে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ ট্রাইবুনাল চুয়াডাঙ্গায় একাধিক দরখাস্ত দায়ের করেন।

এমামলার আইনজীবী খন্দকার নাসির উদ্দিন জানান, আগামী ৯ সেপ্টেম্বরমামলার পরবর্তী ধার্যদিনে আদালতে আবেদন করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতির পর জনস্বার্থে মামলায় পক্ষভুক্ত হতে পারবেন আগ্রহীরা।