দু দিনের টানা বর্ষণে রাজধানীতে চরম দুর্ভোগ : আলমডাঙ্গায় দেয়াল ধসে মধ্যবয়সী নারী আহত

স্টাফ রিপোর্টার: দু দিনের টানা বর্ষণে রাজধানী ঢাকার যতোটা দশা অতোটা নাজুক পরিস্থিতি একদিনে ফেনীতেও হয়নি। এক দিনেই ফেনীতে ৩৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর চুয়াডাঙ্গা? গতকাল ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যদিও আকাশের গুমোটভাব কাটেনি এখনও। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় দেয়াল ধসে পড়ে এক নারী আহত হয়েছেন।
এক সময় টানা বর্ষণ মানেই ছিলো মাটির দেয়াল ধসে পড়ে হতাহত হতো হনেক। এখন গ্রামবাংলায় মাটির দেয়াল নেই বললেই চলে। এরপরও যা আছে তার মধ্যে কিছু ধসে পড়ে আহত হওয়ার খবর মেলে। গত দু দিনের বৃষ্টির মাঝে মাটি রসে মাটির দেয়াল নয়, মাটি দিয়ে গাথা ইটের দেয়াল ধসে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ভোগাইলবগাদীর মধ্যবয়সী এক নারী আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকালে তিনি রান্নাঘরে বসে রান্নার প্রস্তুতি নেয়ার সময় রান্নাঘরের দেয়াল ধসে পড়ে। ইটের দেয়ালের নিচে পড়ে আহত হন জেলেমান বেগম (৫০)। তিনি ভোগাইলবগাদী গ্রামের নবীছদ্দিনের স্ত্রী। এছাড়া তেমন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বৃষ্টির কারণে চাষাবাদের ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত খবর পাওয়া গেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়ক শহীদ আবুল কাশেম সড়কটির অধিকাংশ স্থানেই ভাঙাচোরা। ফলে বৃষ্টির পানি জমে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পথচারীদের অনেকেরই রাস্তার কাদা মেখে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পথচারীদের বাস-ট্রাকের পাশ দিয়ে হাটার জো নেই। হাঁটতে গেলেই রাস্তার পানি ছুটে সারা শারীর একাকার করে দিচ্ছে। বিদ্যুত পরিস্থিতি মাঝে মাঝে নাজুক হলেও বৃষ্টির মধ্যেও তা দ্রুত মেরামতের কারণে গ্রাহক সাধারণকে তেমন ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি।
ঢাকা অফিস জানিয়েছে, দু দিনের অবিরাম বর্ষণসহ বৈরী আবহাওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সড়কসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় হাজার হাজার পরিবার হয়ে পড়েছে পানিবন্দি। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দেয়াল ধসে গাজীপুর ও কুষ্টিয়ায় এক শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে পড়ে থাকা তারে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে খিলগাঁওয়ে এক মাদরাসা ছাত্র মারা গেছে। জোয়ারের পানিতে ভোগান্তি বেড়েছে চট্টগ্রাম নগরীর নিম্নাঞ্চলের মানুষদের। নিম্নচাপের প্রভাবে ঝরা বৃষ্টির দাপট রাজধানীতে বেশি হওয়ায় নগরবাসীকে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোয়াতে হয়েছে। বিশেষ করে ব্যস্ততম সড়কগুলোতে পানি নিষ্কাষনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা আর যানজটে জীবনযাত্রা পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ায় রাজধানীর সব বিপণীবিতান, শপিংমল ও মার্কেটে দৈনন্দিন বেচাকেনায় ভয়াবহ ধস নেমেছে। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। রোববারও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে এবং সকালের দিকে দেশের বেশকিছু এলাকায় টানা বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে দুপুরের পর বৃষ্টিপাত কমতে পারে। এছাড়া দেশের নদী ও সমুদ্রবন্দরসমূহকে সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরসমূহকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের উড়িষ্যা এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শনিবার সকাল ৯টায় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় অবস্থান করছিলো। এটি আরও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাস প্লাবিত হতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব/দক্ষিণ দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি ও অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ডাকবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন এখন দূরস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তিন দিনের হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও বাতাসের কারণে শ শ বিঘা জমির ধান পানিতে পড়ে গেছে। সাধুহাটি, মধুহাটি, সাগান্না, হলিধানী, কুমড়োবাড়িয়া, গান্না, মহারাজ ইউনিয়নের মাঠের ধান পানিতে পড়ে নষ্ট হতে বসেছে। সাধুহাটির উপসহকারী কৃষি অফিসার মিলন ঘোষ গতকাল শনিবার মাঠ ঘুরে জানান, অধিকাংশ জমির ধান ফুলে সারা হয়ে গেছে। যার জন্য খুব একটা ক্ষতি হবে না। এদিকে সদর উপজেলার কৃষি অফিসার ড. খান মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, কৃষি বিভাগ থেকে এসওদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যে জমির ধান পড়ে গেছে সে সমস্ত জমির ধান তিন চার গোচা এক সাথে করে বেঁধে দিলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।
বদরগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অবিরাম বর্ষণে চুুয়াডাঙ্গার বদরগঞ্জের আলিয়ারপুর গ্রামের বসবাসকারী শতাধিক পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তার ওপর দিয়ে পানি বের করার ফলে আলিয়ারপুর গ্রামীণ টাউয়ারের সামনের রাস্তার অংশ ভেঙে ভেঙে খাল হয়ে গেছে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় মাটির দেয়াল চাপায় রুপচাদ (৫২) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মল্লিকপাড়ায় শনিবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রুপচাদ চিথলিয়ার ইউনিয়নের মল্লিকপাড়ার মৃত মনসুর আলীর ছেলে। চিথলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন জানান, দুই দিনের টানা বর্ষণের ফলে চিথলিয়ার মল্লিকপাড়ার মাটির দেয়াল ধসে পড়ে রুপচাদের শরীরের ওপর। এ সময় তিনি ঘুমিয়েছিলেন। পরে পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা মাটি কেটে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই মারা যান তিনি