দুদক কমিশনারের তোপের মুখে দ্রুততম সময়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস

দামুড়হুদায় দুদকের গণশুনানিতে মুখোমুখি অভিযোগকারী ও বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ

বখতিয়ার হোসেন বকুল: ‘সবাই মিলে গড়বো দেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে দামুড়হুদায় দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চত্বরের মুক্তমঞ্চে ওই গনশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর অতিথিদের জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা এখলাস আহম্মেদ। কোরআন তেলাওয়াতের পরপরই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।
বিশ্ব ব্যাংক ও দামুড়হুদা উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহযোগিতায় এবং জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আয়োজিত গণশুনানিতে অর্ধশতাধিকের বেশি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। গণশুনানিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের করতে হয় জবাবদিহিতা। উপজেলা ভূমি অফিস, দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি, কাস্টম্স, আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন কর্মকর্তা, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস, সাবরেজিস্ট্রার অফিস, পল্লী বিদ্যুত, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিস, প্রকল্প বাস্তাবয়ন অফিস, ফুড অফিস, কৃষি অফিস, উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, কৃষি ও রূপালী ব্যাংক, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন দফতরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের পর দুদক কমিশনারের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে অধিকাংশ দফতর প্রধানদের। একাধিকবার মঞ্চে দাড়িয়ে জবাবদিহিতা করতে হয়েছে তাদের। অভিযোগকারীদের প্রশ্ন বানে নাকানি-চুবানিও খেতে হয়েছে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার, পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ বেশকিছু দফতর প্রধানকে। গণশুনানি চলাকালে দর্শকদের মুর্হুমুর্হু করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে উপজেলা পরিষদ চত্বর। অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখোমুখি হতে হয়েছে দফতর প্রধানদের। তারা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগকারীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুততম সময়ে সমাধানের আশ্বাস দিতেও বাধ্য হয়েছেন।
এছাড়া গৃহনির্মাণ কাজে নকশা তৈরি বাবদ অনৈতিকভাবে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে উপজেলা গৃহনির্মাণ কমিটির সদস্য সচিব উপসহকারী প্রকৌশলী রওশন হাবিবকে তার পদ থেকে অপসারণের ঘোষণা দেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার। দামুড়হুদা আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মিল্টন কুমার সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ড. আবুল হাসান, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জসিম উদ্দীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আব্দুল মোমেন, পরিচালক (প্রজিপর্ব ও গণসচেতনতা দুদক ঢাকা) মো. মনিরুজ্জামান, দুদক কুষ্টিয়ার উপপরিচালক আব্দুল গাফ্ফার, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দা নাফিস সুলতানা, চুয়াডাঙ্গা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক রেবেকা সুলতানা, নির্বাহী সদস্য মাহবুবুল ইসলাম সেলিম, দামুড়হুদা উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক আব্দুল গফুর, সহসভাপতি সাবেক উপাধ্যক্ষ মোর্শারফ হোসেন, আশরাফুল হক উলুম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ কামাল উদ্দীন। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছালমা জাহান, কার্পাসডাঙ্গা কলেজের প্রিন্সিপাল হামিদুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য আব্দুল মান্নান, রফিকুল ইসলাম পিন্টু, বশীর আহমেদ, মাহফুজুর রহমান খাঁনসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রতিনিধিবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম সকল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দুদকের জালে একবার আটকা পড়লে দুর্নীতিবাজ কোনো কর্মকর্তাই রক্ষা পাবেন না। তাদের আইনের আওতায় আনতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় দুদকের আয়োজনে এ গণশুনানি অনুষ্ঠান শুরু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বে দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বর্তমানে তা অনেকাংশে কমে এসেছে। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের পদক্ষেপের ফলে তা সম্ভব হয়েছে। প্রধান অতিথি অভিযোগকারীদের অভিযোগগুলো লিপিবদ্ধ করেন। এর মধ্যে বেশকিছু অভিযোগকারী উপস্থিত না থাকলেও তাদের অভিযোগগুলোও শুনানি করা হয়। যে সকল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। গণশুনানি কাজে দুদক কমিশনারের সার্বিক সহযোগিতা করেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জসিম উদ্দীন।