দিনাজপুরে তিন সপ্তায় ১১ শিশুর মৃত্যু : তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার: দিনাজপুরে অজ্ঞাত রোগে ১১ শিশুর মৃত্যু নিয়ে চলছে তোলপাড়। কীটনাশক প্রয়োগ করা লিচু খেয়ে এসব শিশুর মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. আবদুল ওয়ারেস রোগটিকে অজ্ঞাত বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআর’র সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তাদের পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

অবশ্য আইইডিসিআর গবেষক দল বলছে, মৃত শিশুদের পরিবারগুলো দরিদ্র। এ কারণে তারা পুষ্টিহীনতায় ভোগে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম রাখে। লিচু বাগানের অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশকের প্রভাব এবং ঝরে পড়া ফাটা লিচু শিশুরা কুড়িয়ে খেয়ে অসুস্থ হয়ে থাকতে পারে। এ কারণে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার পর আইইডিসিআর গবেষক দল দুদফায় আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবক ও  প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এলাকার শিশুদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ, লিচু বাগান পরিদর্শন এবং লিচু সংগ্রহ করেছেন। পরে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সাথে মতবিনিময় করেন।

ঘটনার পর সরজমিন পরিদর্শন করা হয় বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের পূর্ব সাদুল্ল্যাপাড়া গ্রাম। সেই গ্রামের মৃত শিশু স্বপন আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বাড়িটি লিচু বাগানবেষ্টিত। বাড়ির চারপাশে প্রায় ২০০ গাছের দুটি লিচু বাগান রয়েছে। মৃতের পিতা রবি চান জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তার ছেলে খেলাধুলা করলেও অসুস্থ ছিল না। রাত ১০টার দিকে হঠাৎ করে প্রচণ্ড খিঁচুনি ও কাঁপুনি উঠলে চিৎকার করতে তাকে। এরপর শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় তাকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতেই সে মারা যায়। মৃত স্বপন আলীর সহপাঠী মাসুদ জানায়, তারা সারা দিন লিচু বাগানে খেলা করে এবং সেখানে পড়ে থাকা লিচু খেয়ে ছিলো। একই এলাকার ধুলট দাসপাড়া গ্রামের গজেন চন্দ্র দাস জানান, তার একমাত্র সন্তান ফুল কুমারের প্রচণ্ড খিঁচুনি ও কাঁপুনি উঠলে চিৎকার করতে শুরু করে। এরপর তার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় প্রথমে তাকে দিনাজপুর সদরের অরবিন্দু শিশু হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে একদিন থাকার পর দিনাজপুর  মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুদিন পর সে মারা যায়।

গজেন চন্দ্র দাস জানান, তিনি লিচু বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কাজ শেষে বাড়িতে ফেরার পথে সন্তানের জন্য কিছু লিচু নিয়ে আসেন। লিচু বাগানে কাজ করার সময় মালিক বিষ প্রয়োগ করেন। ব্যবহারের পর বাগান মালিক বিষের প্যাকেট ও বোতলগুলো লুকিয়ে রাখেন। এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, এ ধরনের অভিযোগ তারা পেয়েছেন। সম্ভবত ভারত থেকে চোরাই পথে এসব বিষ এনে ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি জানার পর বাগান মালিক ও লিচু ব্যবসায়ীদের নিয়ে তারা মতবিনিময় করেছেন। সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিচুবাগান এলাকায় সভা-সমাবেশ করেছেন।