দালাল ও চোরসহ সকল প্রকার দুর্নীতিমুক্ত করার দাবি : তিন দিনের আল্টিমেটাম

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে ছাত্রসমাজের মানববন্ধন

 

কামরুজ্জামান বেল্টু/উজ্জ্বল মাহমুদ: ‘সকল প্রকার দুর্নীতিমুক্ত হাসপাতাল চাই, চোর নেশাখোর অনুপ্রবেশকারীসহ হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে হবে। পরিষ্কার-পরিছন্নতা নিশ্চিত করো করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের বাইরে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সাথে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের ভিজিট করা চলবে না, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করো, করতে হবে।’ এরকম নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা ছাত্রসমাজ ব্যানারে শুরু হয়েছে আন্দোলন।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় প্রাঙ্গণে মানববন্ধন সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রসমাজ অব্যাহত রাখবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলনকারীরা সিভিল সার্জনকে কাছে না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। উত্তাপ ছড়ায়। সিরাজ ও লালুসহ দুজন বহিরাগতকে হাসপাতালের ভেতর থেকে তাড়িয়ে হালকা উত্তমমধ্যম দিয়ে বের করে দেয়ারও ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর গাজী ইব্রাহিম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পৌঁছান। তিনি পরিস্থিতি শান্ত করেন। সিভিল সার্জনের সাথেও মোবাইলফোনে কথা বলেন। সিভিল সার্জন অবশ্য কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।

ছাত্রসমাজ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার মানবৃদ্ধির আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সেবাদান ও সেবাগ্রহণের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে সকলের সহযোগিতাও চান বক্তারা। বক্তব্য রাখেন মো. জানিফ, জাহাঙ্গীর হোসেন, জনি, বাবু, টিটু, ইমদাদ, সুজন, জ্যামি, বিপ্লব, নয়ন, আকিব, মিলন, রানা, ইরান, আক্তার, লিপটন, কনক, সুমন, শাওন, টোটন, আনন্দ প্রমুখ। বক্তারা অভিন্ন ভাষায় বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের দালালরা ঘুর ঘুর করে। সরল-সোজা রোগী ও রোগীর লোকজনকে তারা প্রভাবিত করে নিয়ে যায় ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে। রোগী নিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়, দালালরা পায় কমিশন। তাছাড়া ডায়গনস্টিকে অল্প বয়সী কর্মচারীদের উৎপাত লেগেই থাকে। ডায়গনস্টিকগুলোতে যারা পরীক্ষা করেন তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও স্বাস্থ্য প্রশাসনের পক্ষে কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয় না।

বক্তারা বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী মাদকাসক্তের দল অব্যাহতভাবে চুরি করে। গ্রাম থেকে রোগী সাধারণ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসে, আর তাদের অধিকাংশকেই দালাল ও চোরের উৎপাতের শিকার হয়ে হাহাকার নিয়ে ফিরতে হয়। তাছাড়া মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিড়ে রোগী সাধারণকে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। অথচ কিছুদিন আগে সিভিল সার্জনের তরফে ঘোষণা দিয়ে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা সাক্ষাত করবেন। নির্ধারিত সে সময়ের তোয়াক্কা যেমন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা করছেন না, তেমনই চিকিৎসকরাও তাদের নিয়ে মেতে থাকছেন। এ অবস্থা চলতে দেয়া হবে না।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধিতে চিকিৎসকদের যেমন আন্তরিক হতে হবে, তেমনই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দায়িত্বশীল করতে হবে। তদারকির অভাবে যাচ্ছেতাই অবস্থা। এসব অবস্থা থেকে চুয়াডাঙ্গা ছাত্রসমাজ পরিত্রাণ চায়। আগামী তিনদিনের মধ্যে সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশু পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। ছাত্রসমাজের ব্যানারে মানববন্ধনে যেসব দাবি সংবলিত স্লোগান নিয়ে প্ল্যাকার্ড মেলে ধরা হয়, স্থানীয় সাধারণ জনতাসহ রোগী সাধারণের লোকজনও একাত্মতা ঘোষণা করেন।