দামুড়হুদা ধান্যঘরার দিনমজুর কুরবান নিহত : নারী-শিশুসহ আহত ২০

?????

কালীগঞ্জে বাইসাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে গিয়ে দর্শনা ডিলাক্স পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি/দর্শনা অফিস/কুড়ুলগাছি প্রতিনিধি: জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকায় যাওয়ার পথে লাশ হলেন দামুড়হুদার ধান্যঘরা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম কুরবান। যাত্রীবাহী দর্শনা ডিলাক্স পরিবহন দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হয়েছেন। ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের জামতলা নামকস্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন শিশুসহ কমপক্ষে ২০জন। পরিবহনের চালক, হেলপার ও সুপার ভাইজারসহ আহত যাত্রীদের স্থানীয় ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। উল্টে যাওয়া পরিবহন উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিহত কোরবান কুড়ালগাছি ইউনিয়নের ধান্যঘরা গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে।
গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে ২৬-২৭ যাত্রী নিয়ে দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় দর্শনা ডিলাক্সের একটি যাত্রীবাহী বাস। সকাল ১০টার দিকে বাসটি কালীগঞ্জের ঈশ্বরবা জামতলা নামক স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খাদে উল্টে যায়। আহতদের মধ্যে একই পরিবারের ৪ জন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের একজন ডেপুটি ডিরেক্টর, একজন সাংবাদিক, সেনাবাহিনীর একজন সদস্য, পরিবহনের চালক, হেলপার ও সুপার ভাইজারসহ মোট কমপক্ষে ২০ জনকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশসূত্রে জানা গেছে, সকালে দর্শনা থেকে ঢাকাগামী ‘দর্শনা ডিলাক্স’ পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব ১৪-১৭২৮) একটি দ্রুতগামী বাস ঈশ্বরবা জামতলা নামক স্থানে পৌঁছায়। এ সময় এক বাইসাইকেল আরোহী সড়ক পার হচ্ছিলেন। সাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফল বাসটি রাস্তার পাশের খাদে উল্টে পড়ে। বাসের নিচে যাত্রীরা চাপা পড়ে। প্রথমে স্থানীয়রা বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। কালিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার শামসুর রহমান জানান, তারা খবর পেয়ে মোবারকগঞ্জ সুগার মিল থেকে লোহার চেন এনে ট্রাক্টর দিয়ে উল্টে যাওয়া বাসটি টেনে তোলেন। বাসের নিচ থেকে ৮ জনকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে ভর্তি করেছে। এদের মধ্যে কোরবান মারা যান। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের ডা. মাহফুজুর আলম সোহাগ জানান, দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দামুড়হুদা উপজেলার শিবনগর গ্রামের শামসুর রহমানের ছেলে সেনা সদস্য সাইদুর রহমান (৩২), কালীগঞ্জ উপজেলার ঈশ্বরবা গ্রামের ইদ্রিস আলী (৬০), ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভালাইপুর গ্রামের এম এ বাদশার স্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের ডেপুটি ডিরেক্টর উম্মে হাবিবা (৫০), চন্দ্রজাসি গ্রামের খোদা বক্সের ছেলে মতিয়ার রহমান (৫০), সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম (৩৫), তার স্ত্রী তাহমিনা (২৮), জীবননগর উপজেলার সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী জান্নাতুল (৩০), কালীগঞ্জের ধানসিঁড়ি হোটেলের শফিকুল ইসলাম শফিক, একই উপজেলার একই পরিবারের ওলিয়ারের স্ত্রী হাজেরা বেগম, ছেলে শিমুল (১৭), মেয়ে সোনিয়া ও নাতনি সোহানা (৪), বাসচালক দর্শনা আনোয়ারপুরের লিটন (৪০), সুপার ভাইজার দর্শনা আজমপুরের আবদুল হান্নান (৪৮) ও হেলপার কার্পাসডাঙ্গা ভূমিহীনপাড়ার চন্দনসহ (৩০) আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০জন। আহতদের মধ্যে মতিয়ার ও উম্মে হাবিবার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য কালীগঞ্জ উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার, কালীগঞ্জ পৌর মেয়র আলহাজ মকছেদ আলী বিশ্বাস, সাবেক পৌর মেয়র ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বিজু। কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান খাঁন জানান দুর্ঘটনায় ২০-২১ জন আহত হয়েছেন। তাদের কালীগঞ্জ ও যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর পরিবহনের ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজার পালিয়ে যান। বাসটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। বিকেলে নিহত জাহাঙ্গীর আলম কুরবানের লাশ নিজ গ্রাম ধান্যঘরায় আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে বাতাস। গতরাত ৯টার দিকে বেদনা বিধুর পরিবেশে স্থানীয় গোরস্তানে তার লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।