দামুড়হুদা দাখিল মাদরাসার নিকটস্থ বাড়িতে ডাকাতদলের তাণ্ডব

অস্ত্রের মুখে জিমি করে ডাকাতি

 

দামুড়হুদা অফিস: দামুড়হুদা উপজেলা শহরের দাখিল মাদরাসার নিকটস্থ এক বাড়িতে শনিবার মধ্যরাতে সশস্ত্র একদল ডাকাত ডাকাতি করে পালিয়েছে। ডাকাতির সময় গৃহিণীকে ইচ্ছেমতো পেটানো হয়েছে। খবর পেয়ে দামুড়হুদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছানোর আগেই ডাকাতদল পালিয়ে যায়।

জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলা সদরের দাখিল মাদরাসার নিকটে জনবসতি এলাকায় এক বাড়িতে দু কর্মজীবী দু ফ্লাটে পরিবারসহ চলতি বছরের শুরু থেকে বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে একজন দামুড়হুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ব্র্যাক) প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ (৪০)। তিনি রাজশাহীর কুঠিয়া গ্রামের ছেলে। অপরজন ব্র্যাকের সিনিয়র কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম (৪০)। শনিবার রাত ১টার দিকে এ দুজনের বসতঘরে আনুমানিক ১০/১২ জনের সংঘবদ্ধ ডাকাতদল প্রায় ঘণ্টাখানেক ডাকাতির তাণ্ডব চালায়। এ তথ্য দিয়ে নুরুল ইসলামের স্ত্রী মারুফা ইসলাম আরো বলেন, অফিসের কাজে আমার স্বামী খুলনায় থাকায় ৫ বছরের একমাত্র সন্তানকে বুকে চেপে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, রাত তখন প্রায় ১টা। ভাঙাভাঙির শব্দ কোথা থেকে আসছে উপলব্ধির জন্য বিছানা ছেড়ে বারান্দায় আসি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি ৭/৮ জনের হাতে সাবল আর হেঁসো। ভয়ে চিৎকার দিতেই আমার দু গালে ওরা চড় থাপড়া মারে। দেখুন আমার চোখের কি অবস্থা বলে উনি দেখালেন তার দু চোখের কোনে রক্তের জমাটবাধা। ততোক্ষণে পাশের ফ্লাটের ভাবী জেগে গেছে। বাড়িতে ডাকাত বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারে কিছু লোক ওখানে যেয়ে ভাবীকে মারতে থাকে। আর এরা আমার সমস্ত ঘর তল্লাশি করে পায় ৬ হাজারের কিছু বেশি টাকা আর মোবাইলফোন কেড়ে নিয়ে আমার ঘরে বন্দি করে রাখে।

ডাকাতের কবলে পড়া স্কুলশিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, সংখ্যায় ওরা অনেক। প্রথমে ক্লপসিকেবল গেটের দুটি তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। এখানে এসে আমাকে পিঠমোড়া করে বেধে স্ত্রী রুকসানাকে রড আর দা’র উল্টোপিঠ দিয়ে পেটায়। কারণ হিসেবে বলে ডাকাত বলে চিল্লালি কেন? আমার বড় মেয়ে ১২ বছর বয়সের হায়ফা ডাকাতদের বলে আমার মাকে আর মেরো না। এ অপরাধে মেয়েটাকেও মারতে থাকে, এ সকল ঘটনা আমার ছোট মেয়ে ৫ বছর বয়সের হিয়াম দেখে ভয়ে জড়সড়ো হয়ে পড়ে। ওরা সাবল দিয়ে আলমারি ভেঙে নগদ ৬ হাজার টাকা পায়। আর কিছু না পেয়ে স্ত্রীর কানে থাকে ৪ আনা ওজনের সোনার দুল দুটি খুলে নেয়। আমার ল্যাপটপটি নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে ওরা বের হলে ল্যাপটপটি না নেয়ার অনুরোধ রাখি। ল্যাপটপটি ফিরিয়ে দিলেও ওরা আমার মোবাইল ২টি নিয়ে যায়। সবমিলিয়ে সে এক রুদ্ধশ্বাস।

ডাকাতি হওয়া বাড়ির পেছনের প্রতিবেশী আবু ম্যাকানিক বলেন, ভাবীর চেচামেচিতে ঘুম ভাঙলে এ বাড়িতে ডাকাত পড়েছে তা বুঝতে পারি। লাঠিশোটা নিয়ে আমি আর আমার কলেজপড়ুয়া ছেলে বাড়ির বাইরে বের হতে গেলে ডাকাতেরা আমার বাড়ির মেন গেটটি বাইরে থেকে বন্ধ করে রাখে। এমন সময় বিদ্যুত চলে গেলে আমার গেট ও পাঁচিলের চারিধারে ৩টি টর্চলাইটের আলো জ্বালিয়ে আমার গতিবিধি লক্ষ্য করে। আর কোনো রকম চেচাতে নিষেধ করে। অবস্থা বেগতিক বুঝে পাড়ার পরিচিত লোকদের ফোনে জানাতে থাকি। পাড়ার লোকজন দলবেধে এলে ততোক্ষণে ওরা ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। পুলিশের ফোন নম্বর জানা ছিলো না, জানলে ওদেরকে ধরা যেতো কারণ অনেকখানি সময় ওরা এখানেই ছিলো।

দামুড়হুদা থানা পুলিশ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌছায়ে এর চারপাশ এলাকায় ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়। পুলিশের উপস্থিতির আগেই ডাকাতদল পালিয়ে যায় বলে জানান দামুড়হুদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জান। এ বিষয়ে তিনি আরো জানান, এ ঘটনার সংবাদ পুলিশকে জানাতে এলাকাবাসী দেরী করে। এ কারণে এদের গ্রেফতার সম্ভব হয়নি। তবে এদের ধরতে পুলিশ অনুসন্ধানে আছে। এলাকাবাসীর উচিত আরো সজাগ হওয়া এবং ঘটনা পুলিশকে অবগত করা। একই দিনে দামুড়হুদার বেগোপাড়ায় এক বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিছক ঘটনা। তদন্তপূর্বক ২/১ দিনের মধ্যেই সব বেরিয়ে পড়বে।