দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যানভাইস চেয়ারম্যানসহ ২১ নেতাকর্মীর নামে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের ২১ নেতাকর্মীর নামে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গত ১৮ মে রোববার দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই আবু জাহের ভূঁইয়া বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় জামায়াতের যে ২১ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীর নাম রয়েছে তারা হলেন-চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান দর্শনা পৌর জামায়াতের আমির আব্দুল কাদের, দামুড়হুদা উপজেলা জামায়াতের আমির নায়েব আলী, সেক্রেটারি আ. গফুর, দামুড়হুদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন জামায়াতের আমির প্রভাষক শরীফুল আলম মিল্টন, সদর ইউনিয়ন সেক্রেটারি মনিরুল আলম মুকুল, উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাও. আব্দুস সাত্তার, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক আমির আবুল বাশার, হাউলী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির নজরুল ইসলাম, জামায়াতকর্মী উপজেলার জয়রামপুরের মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে হাউলী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম টিক্কা, কুড়ুলগাছির গোলাম রহমানের ছেলে মোজাম্মেল হক, দামুড়হুদার কাবির হুজুর, সদাবরি গ্রামের আজির বক্সের ছেলে হাফেজ আসাদুল ইসলাম, দর্শনা শ্যামপুরের মোহাম্মদের ছেলে আব্বাস উদ্দিন, কোমরপুর গ্রামের খেদের আলীর ছেলে আশাদুল হক, একই গ্রামের সাইদুল ইসলাম, বুইচিতলার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মোস্তফা, একই গ্রামের নওয়াজ্জেস আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন, লোকনাথপুরের এলার উদ্দিনের ছেলে একরামুল হক, জয়রামপুর কলোনিপাড়ার মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে হাজি পল্টু মিয়া ও একই গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে আলাউদ্দিন।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি শিকদার মশিউর রহমান জানান, উল্লেখিত আসামিগণসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৪-১৫ জন জামায়াতের দলীয় নেতাকর্মীরা বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পাঁয়তারাসহ বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে এলাকায় নাশকতামূলক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ঘটানোর উদ্দেশে একত্রিত হয়ে আসামি শরীফুল আলম মিল্টনের দামুড়হুদা গুলশানপাড়াস্থ নিজ বাড়িতে গোপন বৈঠক করছিলেন। গোপন সংবাদ পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পাঁচিল টপকে অন্যরা পালিয়ে যান। বাড়ি তল্লাশি করে ২টি সাটারগান, ৪টি বন্দুকের গুলি, ৪টি বোমা ও বিপুল সংখ্যক জিহাদি বই ও লিফলেট উদ্ধারসহ গ্রেফতার করা হয় মিল্টনকে। এ ঘটনায় মিল্টনসহ ৩ জনের নামে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়। ঘটনাটি যেহেতু রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল সে কারণে মিল্টনকে আদালতে সোপর্দ করা হয় এবং অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর (মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট) আদেশের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আদেশের কপি হাতে পেলেই পলাতক আসামিদের গ্রেফতারসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে দামুড়হুদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক শরীফুল আলম মিল্টনকে গ্রেফতার এবং বাড়ি তল্লাশি করে অস্ত্র, গুলি, বোমা ও জিহাদি বই উদ্ধার দেখিয়ে তাকে জেলহাজতে দেয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার বেশকিছু জনগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, পুলিশ মিল্টনকে এমনিতেই গ্রেফতার করতো সেটা দুদিন আগে আর পরে। তবে অস্ত্র, গুলি, বোমা ও জিহাদি বই উদ্ধারের বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ বিষয়ে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান বলেন, জামায়াতের নেতাকর্মীরা দামুড়হুদায় এমন কোনো ঘটনা ঘটায়নি যে মিল্টনের মতো একজন শান্তিপ্রিয় নিরীহ ছেলেকে গ্রেফতার করে অস্ত্র দিয়ে চালান দিতে হবে। ওই দিনের ঘটনা আমি যতোটুকু জেনেছি মিল্টন ওই সময় মাগরিবের নামাজ পড়ে জায়নামাজেই বসেছিলো। দামুড়হুদা থানার একদল পুলিশ তার বাড়িতে প্রবেশ করে এবং বলে ওসি সাহেব আপনাকে সালাম দিয়েছেন। আমাদের সাথে আপনাকে যেতে হবে। এরপর তাকে থানায় নিয়ে অস্ত্র, গুলি, বোমা দিয়ে চালান দেয়া হলো। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষ এমনটা প্রত্যাশা করেনা। আমরা বলি পুলিশ জনগণের সেবক বা বন্ধু। জনগণের বন্ধু পুলিশের এ ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ মোটেও যে ভালো চোখে দেখছে না।