দামুড়হুদায় স্কুলছাত্রীসহ দু কিশোরী ভারত থেকে ১৯ দিন পর সুবলপুরে ফিরেছে

 

 

অপহরণকারী মোজাম ভারতে পালিয়ে গেছে!

স্টাফ রিপোর্টার:চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সুবলপুর গ্রামের দু কিশোরী ১৯ দিন পর ভারত থেকে নিজ গ্রামে ফিরে এসেছে। ঝালমুড়ি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাদেরকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে। জ্ঞান ফিরে জানতে পারে তারা দুজনেই ভারতে রয়েছে। এঘটনার সাথে জড়িত মোজাম আলী ঘটনার পর থেকে ভারতে অবস্থান করছে। পাচার ঘটনায় এক কিশোরীর পিতা ও বিজিবি পৃথক পৃথক মামলা দায়ের করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট দামুড়হুদা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী রোজী (ছদ্মনাম) (১৫) এবং একই গ্রামের পপি (ছদ্মনাম) (১৫) দামুড়হুদা থানা মোড় থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাদের পরিবার জানতে পারে তাদেরকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একপর্যায়ে রোজীর মা মুন্সিপুর সীমান্তে মেয়ের খোঁজে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তিনি দালালদের খপ্পড়ে পড়েন। পড়ে বিজিবির হস্তক্ষেপে তিনি বাড়ি ফিরে এলেও মেয়েটির কোনো সন্ধান পাননি।

এঘটনার পর বিজিবির পক্ষ থেকে দামুড়হুদা মডেল থানায় মুন্সিপুর বিওপির হাবিলদার তোতা মিয়া সোহেল রানা (৩৫), আবুল কালাম মোড়ল (৪২) ও রুহুল আমীনের (৩০) নামে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আসামিরা গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে যায়।

গত ২৫ আগস্ট নিখোঁজ দু কিশোরী অবশেষে নিজ গ্রাম সুবলপুরে ফিরে আসে। গত ২৭ আগস্ট দুকিশোরীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন দামুড়হুদা থানা মোড়ে দুজনের সাথে দেখা হয় গ্রামের চাচা সম্পর্কের মোজাম আলীর। মোজাম আলী তাদের দুজনকেই ঝালমুড়ি খাওয়ার প্রস্তাব দেয়। এতে তারা প্রথমদিকে আপত্তি জানালেও পরে তারা ঝালমুড়ি নেয় এবং খাই। এরপর তারা দুজনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। যখন জ্ঞান ফেরে তখন তারা মুন্সিপুর সীমান্তের বিপরীতে ভারতের হাটখোলা গ্রামে। সেখানে থেকে তাদেরকে ভারতের চাপড়া ও ধোপাখালী এলাকায় বিক্রির উদ্দেশে দালালদের কাছে নিয়ে যায় এবং প্রচণ্ড মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করে। যে বাড়িতে রাখা হয় সেই বাড়ির একজনের পা ধরে তাদেরকে দেশে ফেরার আকুতি জানালে বাধ্য হয়ে মোজাম আলী তাদেরকে হাটখোলা সীমান্তের তারকাঁটা বেড়া পার করে দেয়। এরপর তারা দুজনেই মুন্সিপুর খাল পার হয়ে মুন্সিপুর গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি আশ্রয় নেয়। পরে সেখান থেকে তারা বিকেলে বাড়ি ফেরে। বিষয়টি তারা পরিবার ও থানায় জানায়।

এদিকেদামুড়হুদা থানা মোড়ে যেদোকান থেকে ঝালমড়ি কেনে সেই দোকানটি ঘটনার পর থেকেই রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

চুয়াডাঙ্গা জজকোর্টের আইনজীবী আফতাব উদ্দিন জানান, এঘটনায় সুবলপুর গ্রামের রোজীর পিতা বাদী হয়ে গত ২১ আগস্ট চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন- মোজাম আলী, তার স্ত্রী ছালমা খাতুন, রুহুল আলী, সোহেল ও জাহিদুল মিস্ত্রি। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। দামুড়হুদা মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিকদার মশিউর রহমান বিজিবির মামলার সত্যতা স্বীকার করেন। তবেআদালতের মামলা সম্পর্কে কোনো খবর জানা নেই বলে জানান।