দামুড়হুদায় ব্লাস্ট রোগ কেড়ে নিয়েছে কৃষকের হাসি : নবান্ন উৎসব ম্লান

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদায় বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়নি এলাকার কৃষকসমাজ। অন্যান্য বছর বর্ষবরণে এলাকার কৃষকদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও এবার তাদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। ধানে ক্ষতিকর ব্লাস্ট রোগ কৃষকের সব আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে মুখের হাসি। বোশেখের প্রথম দিনে গ্রামবাংলার গৃহবধুদের মধ্যে নুতন ধানের ক্ষীর-পায়েশ আর পিঠাপুলি তৈরির ধুমপড়ার দৃশ্য লক্ষ্য করা গেলেও এ বছর তা অনেকটাই ম্লান। ব্লাস্টে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রস্তুতসহ ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ পূর্বক আর্থিক সহায়তার বিষয়টি অবশ্যই ভেবে দেখবেন কৃষকবান্ধব বর্তমান সরকার।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে দামুড়হুদা মাদরাসাপাড়ার সিরাজুল ইসলাম কারু জানান, তিনি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে বাসমতি-৫০ জাতের ধান রোপন করেছিলেন। গাছও ভালো হয়েছিলো। কিন্ত মাঝপথে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানের অধিকাংশ শীষ চিটে হয়ে গেছে। দেড় বিঘা জমিতে ৩৫ মণ ধান ফলনের আশা করেছিলাম। অর্ধেক জমির ধান কাটা হয়েছে। মাত্র ৪ মন হয়েছে। এ অবস্থায় কী করে উৎসব করি বলেন। বাজারপাড়ার ধানচাষি রফিকুল জানান, এ বছর কলেজ মাঠে ১ বিঘা জমিতে সুপার-২৮ ধান রোপন করেছিলাম। আশাছিলো ২০/২২ মন হবে। কিন্ত যে হারে চিটে হয়ে গেছে তাতে ৪/৫ মনের বেশি হবে বলে মনে হয় না। তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর ধরে ধানচাষে উপর্যুপরি লোকসানের কারণে অনেক চাষিই ধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। লোকসান হলেও ঘরের ধানে ভাত খাওয়া আর গরুর খাবারের জন্যই মূলত ধানের আবাদ করতে হয়। এভাবে লোকসান হলে আগামীতে হয়তো আর ধানের আবাদ করা সম্ভব হবে না। একই পাড়ার চাষি আব্দুল বারিক জানান, তিনি এ বছর বিল মাঠে ১ বিঘা জমিতে হাইব্রিড-১০ জাতের ধান রোপণ করেছিলেন। কিন্ত ক্ষতিকর ব্লাস্ট রোগে ধানের অধিকাংশ শীষই চিটে হয়ে গেছে। ৮ থেকে ১০ মনের বেশি হবে বলে মনে হয় না। দামুড়হুদা দশমীপাড়ার চাষি দুঃখ মিয়ারও একই দশা। তিনি এ বছর ১ বিঘা জমিতে সুপার-২৮ ধান রোপণ করেছিলেন। ব্লাস্ট সব শেষ করে দিয়েছে। ফলন বড় জোর ৭ থেকে ৮ মণ হতে পারে। ব্লাস্ট রোগের কারণেই এ বছর বাংলার চিরায়িত নবান্ন উৎসবে পড়েছে ভাটা।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেছেন, প্রথম দফা জরিপে দামুড়হুদা সদর ও হাউলী ইউনিয়নের মোট ৫৮ বিঘা ধানক্ষেত ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। পরবর্তীতে দামুড়হুদা ও হাউলী ছাড়াও হোগলডাঙ্গা এলাকার কিছু জমিতে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ব্লাস্ট একটি ছত্রাকজনিত ক্ষতিকর রোগ। এ রোগটি আগে ধানের পাতায় দেখা যেত। রোগটি কান্ডের গিটে, শীষের নীচে এমনকি ছাড়ায়ও দেখা দিতে পারে। এ রাগের প্রাথমিক লক্ষন হলো  ধানের পাতায় ছোট ছোট দাগ দেখা দেয়। পরে দাগগুলো একটু লম্বাটে হয়। দেখতে ঠিক চোখের মত হয়। রোগটি শীষের নীচে আক্রমন করে গিট পচে কালচে হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ছড়ায় আক্রমনের ফলে ধান চিটে হয়ে যাচ্ছে। দিনে প্রচন্ড গরম আর রাতে ঠাণ্ডা এ অসম তাপমাত্রাই এর মূল কারণ। করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, ব্লাস্ট আক্রান্ত জমিতে পানি ধরে রাখতে পারলে এ রাগের ব্যাপকতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। যে সমস্ত জমি এখনও পাতা, গিট ও ছড়া আক্রন্ত হয়নি সে সমস্ত জমিতে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমন-টুপার-৮ গ্রাম ১০ লিটার পানি অথবা নাটিভো-৬ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। আর যে সমস্ত ধানের জমিতে ইতোমধ্যেই ধানের পাতা, গিট ও নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে সেমস্ত জমিতে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমন পিলিয়া ৫২৫ এসই ২০ মিলি ১০ লিটার পানিতে অথবা অ্যামিস্টার টপ ১০ মিলি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে ৭-১০ দিন অন্তর দু বার বিকেলে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া ব্লাস্টের ব্যাপকতা প্রতিরোধে প্রতিটি ধানক্ষেতেই স্প্রে করার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম অব্যহত রাখা হয়েছে।