দামুড়হুদায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে ফেসবুকে মন্তব্য করার অভিযোগ : স্কুলছাত্র সুজন কর্মকারকে গণধোলাই শেষে পুলিশে সোপর্দ

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদায় ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি ও মহানবী (স.) সম্পর্কে ফেসবুকে বাজে মন্তব্য করার অভিযোগ তুলে সুজন কর্মকার (১৮) নামের এক স্কুলছাত্রকে মাথার চুল ঢেরাকাটাসহ গনধোলাই দেয়া হয়েছে। পুলিশ আহত সুজনকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত সুজন দামুড়হুদার পোড়াপাড়া গ্রামের অনন্ত কর্মকারের ছেলে। তবে ওই লেখা তার নয় এবং সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে সুজন। এদিকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি ও মহানবী (স.) সম্পর্কে বাজে মন্তব্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ধর্মীয় নেতারা। গতকাল রোববার বেলা ৫টার দিকে দামুড়হুদা মডেল স্কুলের সামনে ডেকে এনে সুজনকে মারধর করা হয়।

জানা গেছে, দামুড়হুদা বাজার পাড়ার কয়েকজন যুবক সুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে সে ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (স.) সম্পর্কে বাজে মন্তব্যসহ নানা কটূক্তি করে ইন্টারনেটে ছেড়েছে। বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সম্প্রতি দামুড়হুদা বাজারপাড়ার কয়েক যুবক সুজনের ফেসবুকে বন্ধু হয় এবং কৌশলে তার আইডি নম্বরসহ বিস্তারিত জানার চেষ্টা করে এবং গতকাল রোববার বিকেলে ওই কয়েক যুবক হাস খোঁজার নাম করে সুজনদের বাড়ি যায় এবং পিকনিক করার নাম করে তাকে মোটরসাইকেলযোগে দামুড়হুদা বাজারপাড়ায় নিয়ে আসে। ফেসবুকে ইসলামধর্ম নিয়ে কটূক্তি ও মহানবী (স.) সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে উত্তেজিত লোকজন সুজনকে গণধোলাই দিয়ে মাথার চুল ঢেরাকাটা করে কেটে দেয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে উত্তেজিত জনতার ভিড়। এসময় সুজনকে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে বাঁচাতে দামুড়হুদা মডেল স্কুলের সামনে একটি ঘরে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়া হয়। দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই কাইয়ুম হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং আহত সুজনকে উদ্ধার করে চিৎলা হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সুজনের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতরাত ৮টার দিকে থানায় নেয়া হয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুজন বলেছে, যে পেজে লেখা দেখানো হচ্ছে ওই পেজ আমার। কিন্তু ওই লেখা আমার নয়। আমার আইডি একবার হ্যাক হয়েছিলো। নোয়াখালীর অর্জুন নামের এক বন্ধু ওটা ঠিক করে দেয়। ওই লেখা অন্য কেউ লিখে পোস্ট করে থাকতে পারে বলেও দাবি করেছে সে। এলাকার বেশকিছু সচেতন লোকজন এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন,সুজন আসলেই কি ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি বা মহানবী (স.) সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেছে, নাকি ঘটনার আড়ালে অন্য কিছু আছে যার কারণে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তার ফেসবুক চেক করা হয়। কিন্ত সে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি বা মহানবী (স:) সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেছে এরকম তথ্য পাওয়া যায়নি। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে মারধর করা হয়েছে। আমি কয়েক জনের নাম পেয়েছি তারাও ছাত্র। আমি তাদের থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।

এ দিকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি ও মহানবী (স.) সম্পর্কে বাজে মন্তব্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি দামুড়হুদা বাসস্টান্ড জামে মসজিদের ইমাম মাও. শফিকুল ইসলাম ও দশমী জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মহসিন আলী অভিন্ন ভাষায় বলেছেন ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোনো সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কাউকে লাঞ্ছিত করার শিক্ষা ইসলাম দেয় না। সঠিক তথ্য বের করে ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।