দামুড়হুদার মোক্তারপুর মাঠের বুড়ো ভাটামগাছটি ঘিরে প্রতারণার ফাঁদ

গুজবে কান দিয়ে মেতেছে হুজুগে বাঙালি

তাছির আহমেদ/মো. শাহাবুদ্দিন: হুজুগে মেতে দামুড়হুদার মানুষকাটা মাঠের বুড়ো ভাটাম গাছের নিচে ভিড় জমাতে শুরু করেছে নারী-পুরুষ। তাদের দেখে শিশু-কিশোরদেরও ভিড় বাড়ছে প্রতি বৃহস্পতিবার। রোগমুক্তি ও মনের বাসনা পূরণের আশায় অনেকে মানত শোধের মাংস রান্নাসহ রকমারি আয়োজন ভাটামাগাছটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। স্থানীয় সচেতন যুবসমাজ বুড়ো ভাটামাগাছটিকে প্রতারণার দোকান বলে পরিচয় দিয়ে হুজুগে মাতা নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের সচেতন করার চেষ্টা করলেও তেমন ফল মিলছে না। কেউ কেউ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছেন, এ ধরনের প্রতারণার দোকান আর কতোদিন চলবে? কে জানে!

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার চিৎলা গোবিন্দহুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অদূরে রাস্তার বিপরীতে তথা দক্ষিণপ্রান্তের মেঠোপথ। এ রাস্তা ধরে দু কিলোমিটার এগোলেই পাওয়া যাবে একটি চৌরাস্তার মোড়। এ স্থানটির নাম মূলত মানুষকাটা মাঠ। বেশ কিছুদিন ধরে স্থানটির পুরোনো নাম বদলে বনবিবির মাঠ বলে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে কেউ কেউ। তাদেরই প্রচরণায় দীর্ঘদিনের ভাটামগাছটি রোগমুক্তির স্থানে রূপ নিয়েছে। ভাটামগাছটি মোক্তারপুর গ্রামের আনসার মোল্লার জমিতে। এ গাছের নিচেই প্রতি বৃহস্পতিবার বসানো হয় তাবিজ-কবজ ও পানি রাখার আসর। ওতে কেউ কি কোনো উপকার পেয়েছেন? স্বচ্ছ জবাব নেই। কেউ কেউ বলেছেন, বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, কেউ কেউ বলেছেন, ওসব হুজুগে মেতে মানুষ হায়রানি হচ্ছে। কান কথায় মেতে প্রতারিত হচ্ছে মানুষ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন পদির্শনকালে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন ছাগল, হাঁস-মুরগি ও চালডাল সাথে এনে ভাটামাগাছের অদূরে রান্নাবান্না শুরু করেছেন। রান্না শেষে খাওয়া-দাওয়া শেষে ভাটামাগাছের নিচে রাখা পানির বোতল, তেল, তাবিজ-কবজ নিয়ে তারা ফিরছেন। হাতিভাঙ্গা গ্রামের ইয়াসিন আলীর ছেলে নফর আলী, চিৎলার মৃত কালাচাঁদ মালিথার ছেলে লুৎফর মালিথা, চুয়াডাঙ্গা পোস্টঅফিসপাড়ার মুনছুর মল্লিকের ছেলে আক্তারুজ্জামান লালু ও মোক্তারপুর গ্রামের মহাসিনের স্ত্রী আশুরা বেগমের সাথে কথা হয়। এরা বলেন, মানুষের মুখে বনবিবির ভাটামাগাছের কথা শুনে রোগমুক্তির আশায় এসেছি। দেখি কিছু হয় কি-না। তবে আশুরা খাতুন বললেন, আমি উপকার পেয়েছি বলেই তো আবার এসেছি।

স্থানীয়রা বলেন, মোক্তারপুর গ্রামের মৃত ফটিক শেখের ছেলে বদর উদ্দিন শেখ এ স্থানটি দেখভাল করেন। তিনি জানান, বছর দুয়েক আগে আমি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলাম, তারপর এখানে আসা-যাওয়ার পর আমার স্ট্রোক ভালো হয়েছে। সেই থেকে এখানে সপ্তার প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে যারা আসে আমি তাদের খেদমত করি।

গোবিন্দহুদা গ্রামের ছাত্তার আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই শুনে আসছি, এখানে এক ধার্মিক মহিলা এসেছিলেন। তার কারণেই মাঠটির নাম বনবিবি। এখানে পানির জন্য একটি টিউবওয়েল বসানো হয়েছে আর রান্নাবান্নার জন্য কাটা আছে চুলা।

চিৎলা গ্রামের আক্কাচ আলী ও সাহেবজানসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন বলেন, এলাকায় সচেতনতার যে যথেষ্ট অভাব তা এ হুজুগে মাতা দেখে অনুমান করতে কষ্ট হয় না। পরিকল্পিতভাবেই বানোয়াট গল্প প্রচার করা হয়েছে। সেই প্রচারণায় কান দিয়ে অনেকেই মেতে ওঠে। বৃহস্পতিবার এলাকার অসচেতন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর ভিড় জমাচ্ছে। এখনও অর্থ নেয়ার তেমন তোড়জোড় লক্ষ্য করা না গেলেও পরিস্থিতি সেদিকেই এগোচ্ছে। সচতেনতার আলো ছড়াতে পারলে এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ হবে। হুজগে মাতা নারী-পুরুষের হয়রানি রুখতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।