দামুড়হুদার বিভিন্ন সীমান্ত পথে পাচার করে আনা হচ্ছে ফেনসিডিল : আবারো জমে উঠেছে মাদকের কারবার

আকন্দবাড়িয়া ফেনসিডিলের চাঙ্গা মোকাম : দর্শনার কয়েকটি মহল্লায় বসছে বাজার

 

দর্শনা অফিস: দামুড়হুদার ঝাঝাডাঙ্গা, সুলতানপুর, দর্শনা জয়নগর, ও নিমতলা সীমান্ত পথে ভারত থেকে পাচার করে আনা হচ্ছে হেরোইন, মদ ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। হেরোইন ও ফেনসিডিলের মোকাম বসছে বহুল আলোচিত আকন্দবাড়িয়া, সিংনগর ও রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামে। দর্শনার চিহ্নিত কয়েকটি মহল্লা হেরোইন ও ফেনসিডিলের বাজারে পরিণত হয়েছে। প্রসাশনের বিভিন্ন বিভাগের নখদর্পনে সবই। পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মাদককারবারীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। এরই মধ্যে পালিয়ে থাকা ভেজাল মদকারবারীরা ফিরতে শুরু করেছে নিজ নিজ ঠিকানায়। পুরোনো পেশার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, দামুড়হুদার ঠাকুরপুর, চাকুলিয়া, সুলতানপুর, ঝাঝাডাঙ্গা, দর্শনা নিমতলা ও জয়নগর সীমান্তের বিভিন্ন পথে প্রতিদিন এক শ্রেণির হেরোইন আসক্ত যুবক জোন হাজিরায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারত থেকে পাচার করে আনছে ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ ও গাঁজা। সূত্র বলেছে, ভারতে ফেনসিডিল বাজারে প্রতি বোতল ফেনসিডিল যে দামে কিনে আনা হয় সে তুলনায় অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রসাশনের বিভিন্ন বিভাগকে ম্যানেজ করেই এ কারবার চলছে দীর্ঘদিন থেকে। মাঝে কয়েক মাস ফেনসিডিল ও হেরোইন কারবার দর্শনাসহ আশপাশ এলাকায় ব্যাপকভাবে কমলে আবারো মাথাচারা দিয়ে উঠেছে মাদককারবারীরা। কয়েক মাসের লোকসান পুষিয়ে নিতেই মাদককারবারীরা লেগেছে আটঘাট বেধে। মাস খানেক আগে ৬ বিজিবির দর্শনা কোম্পানি সদরের একটি বিশেষ দলের লাগাদার মাদকবিরোধী অভিযান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছিলো। অজ্ঞাত কারণেই সব গেছে ভেস্তে। ফলে যা ছিলো তার তুলনায় আরো বেড়েছে বলেই উঠেছে অভিযোগ। ফেনসিডিল পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে বহুল আলোচিত মোকাম আকন্দবাড়িয়া, সিংনগর ও রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামে।

অভিযোগ উঠেছে, ওই মোকামগুলো থেকে দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণচাঁদপুর, ঈশ্বরচন্দ্রপুর, ও জয়নগরসহ বিভিন্ন মহল্লার মাদককারবারীরা পায়কারি দরে ফেনসিডিল, হেরোইন ও মদ কিনে আনছে। ফেনসিডিল কারবারীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বাস, ট্রাক, ট্রেন, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহনে পাচার করছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ফেনসিডিল বিকিকিনি হলেও যেন দেখার কেউ নেই। মাসেক খানেক আগে বিজিবির অভিযানে দর্শনাবাসী স্বপ্ন দেখেছিলো মাদকমুক্ত দর্শনা দেখার। এলাকার চিহ্নিত ফেনসিডিল কারবারীরা এ কারবার ছেড়ে দেয়ার লিখিত অঙ্গীকার নামাও দিয়েছিলো দর্শনা বিজিবি ক্যাম্পে। কেন কি কারণে তা ভেস্তে গেলো তা নিয়ে শোনা যাচ্ছে নানামুখি গুঞ্জন।

এদিকে গত মাসে মাত্র ৬ দিনের ব্যবধানে দর্শনায় ভেজাল মদপানে প্রাণ হারিয়েছে ৫ জন। অন্ধ হয়েছে ৩ জন। অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে এ রকম মদ্যপের সংখ্যা কম নয়। প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুর ঘটনায় কয়েকদিন সক্রিয় হয়ে ওঠে স্থানীয় পুলিশ প্রসাশন ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। দু বাহিনীর লাগাতার অভিযানে স্ব-পরিবারে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয় চিহ্নিত ভেজাল মদ বিক্রেতারা। ৬ জনের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই খানেকটা হঠাত করেই ভেজাল মদকারবারীরা ফিরতে শুরু করেছে নিজ নিজ ঠিকানায়। অজ্ঞাত ইশারায় মাদককারবারীরা ফের পুরোনো পেশায় ফিরেছে। ঈদকে সামনে রেখে ও কয়েকদিনের লোকসান পুষিয়ে নিতে ভেজাল মদকারবারীদের তোড়জোড়ের যেন শেষ নেই। ভেজাল মদকারবারীরা যে সকল পয়েন্টে কারবার করছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, কেরুজ আমতলা, সুইপার কলোনী, প্রাইমারী স্কুলপাড়া, ক্লাবের পাশে, সিজিন্যাল ব্র্যাক, দর্শনা রেল বাজারের কয়েকটি স্থান, মোহাম্মদপুর, দর্শনা হল্টষ্টেশন ও আনোয়ারপুর।

দর্শনাবাসী ভেজাল মদপানে আর কোনো প্রাণ হারানোর খবর শুনতে চায় না, ফেনসিডিলের নেশা করতে দর্শনায় দেখতে চায় না, চায় না কোনো বহিরাগত ও স্থানীয় নেশাগ্রস্তদের। দেখতে চায় না যুবসমাজকে ধ্বংসের পথে ধাবিত হতে। তাই দর্শনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাকে মাদকমুক্ত রাখার লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের অধিনায়ক, উপঅধিনায়ক ও চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী।