দামুড়হুদার বাঘাডাঙ্গায় ১৪টি পরিবারের ২২টি ঘরসহ সর্বস্ব গ্রাস করেছে আগুন

 

পাড়ার পুকুর পানিশূন্য : মাঠের শ্যালোমেশিনের পানি নিয়ে আগুন নেভাতে দু ইউনিট ফায়ার সার্ভিসের হিমশিম

কার্পাসডাঙ্গা/ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গা বাঘাডাঙ্গার ভূমিহীনপাড়ার হতদরিদ্র ১৪টি পরিবারের ২২ ঘর আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে ঠিক কতো টাকার ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত করে জানা না গেলেও ১৪টি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। তারা ঘরবাড়ি হারিয়ে রয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।

প্রাথমিকভাবে স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সকলেই হতদরিদ্র। অধিকাংশই দিনজমুর, বর্গাচাষি। এদের একজন মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য ভুট্টা বিক্রি করে ঘরে নগদ ২০ হাজার টাকা রেখে ছিলেন। তিনি ওই টাকা দূরের কথা বাড়ির কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি। হতদরিদ্র পরিববারগুলোর দুর্দশার যেন শেষ নেই। আগুন নেভাতে গিয়ে দর্শনা ফায়ার সাভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্য আমিনুর রহমান আহত হয়েছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর দর্শনা তথা লোকনাথপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেছেন, প্রাথমিক তথ্যমতে বৈদ্যুতিক সটসার্র্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আগুন লাগার পর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছুনোর আগেই বেশকটি ঘর পুড়ে যায়। ঘরের সাথে ঘর লাগানো এবং তীব্র খরায় সব কিছু দাহ্য হয়ে থাকায় দ্রুত আগুন ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। যা স্থানীয়রা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি। জীবননগর ও দর্শনা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রায় দু ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনে। ভূমিহীনপাড়ার আশপাশে পানি না থাকার কারণে মাঠের শ্যালোমেশিনের সহযোগিতা নিয়ে আগুন নেভাতে হয়। একটি পুকুর থাকলেও তাতে পানি নেই। ফলে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়ে।

স্থানীয়রা বলেছেন, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বাঘাডাঙ্গা ভূমিহীনপাড়ার কালু মল্লিকের ছেলে আফছার আলীতে প্রথমে আগুন লাগে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বাড়ির বিদ্যুতের সটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত প্রতিবেশীদের ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয় ২২টি ঘর। আগুনে পুড়ে যাদের ঘর বাড়ি, বাড়ির সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তারা হলেন- মৃত মস্ত বারির ছেলে বাবু, মৃত কালু মল্লিকের ছেলে আফসার ও তার ভাই শাহ জামাল, শাহ জামালের ছেলে আলম, স্বামী পরিত্যাক্ত হামেদা, মৃত সামসুল মল্লিকের ছেলে ফিরোজ, তার ভাই ফরজ, মৃত নজির আহম্মেদের ছেলে আবু তালেব, সাহজামালের ছেলে সেলিম, আফসারের ছেলে বক্কর আলী, তার ভাই আকছেদ, স্বামী পরিত্যাক্ত লাইলী খাতুন, বাবুর ছেলে বেল্টু, তালেবের ছেলে আ. আলীম। এদের সকলেই দিনমুজুর, রাস্তার মাটি কাটা শ্রমিক।

একেতো হতদদ্রি, তারপর ঘরবাড়ি, বাড়ির সব কিছু আগুনে পড়ে গেছে। সব কিছু পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আগুন নিয়ন্ত্রণ আনতে গিয়ে আমিনুর রহমান নামের এক ফায়ার সার্ভিস কর্মী আহত হন। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরমালিক স্বামী পরিত্যাক্ত লাইলী খাতুন জানান, আমি ভিক্ষা করি। আমার শেষ সম্বল টুকু আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার আর কিছুই থাকলো না। ক্ষতিগ্রস্ত ফিরোজ জানান, আমার মেয়ের বিয়ের জন্য ভুট্টা বিক্রির ২০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। সেই টাকা আগুনে পুড়ে গেছে। কেউ কেউ তাদের পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই পাননি। ঘটনাস্থলে কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই সুব্রত বিশ্বাসসহ অনেকেই পরিদর্শন করেন। তাৎক্ষণিক সহযোগিতার হাতও বাড়ান অনেকে। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দরিদ্র যে পরিবারগুলোর বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়েছে, তাদের দুর্দশা না দেখলে বোঝানো সম্ভব নয়, মানুষ কতোটা অসহায় হতে পারে।