দামুড়হুদার ফুলবাড়ি গ্রামে বিজিবির ছত্রছায়ায় চলছে ভারতীয় হাতুড়ে ডাক্তারের রমরমা ওষুধ ব্যবসা

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার ভারত সীমান্তবর্তী ফুলবাড়ি গ্রামে বিজিবির ছত্রছায়ায় অবাধে চলছে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা। ডাক্তার পরিচয়ে ভারতের চাপড়া থানার নলুয়াপাড়া গ্রামের আশাদুল হক রোগীপ্রতি বিজিবিকে উৎকোচ দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা। ডাক্তার নামধারী ভারতীয় নাগরিক আশাদুল বিজিবির লাইনম্যানদের সহায়তায় ঝোলাঝামটি নিয়ে প্রতিদিন ভোরে ৩/৪ জনকে সাথে নিয়ে অবৈধপথে সীমান্ত পেরিয়ে আস্তানা গেড়েছেন বাংলাদেশের ফুলবাড়ি গ্রামের নাজির টেংরা ও বক্সের বাড়িতে।
দালালদের প্রচার-প্রচারণায় ইতোমধ্যেই সর্বরোগের ডাক্তার হিসেবে চুয়াডাঙ্গার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে ওই হাতুড়ে ডাক্তার আশাদুলের নাম। ভারতের ডাক্তারের কথা শুনে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে রোগীরা। রোগী দেখে ভিজিট না নিলেও ভারতীয় তৈরি নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করে আশাদুল হাতিয়ে নিচ্ছেন কাড়িকাড়ি টাকা। অবৈধপথে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিদিন কিভাবে আসছেন ওই ডাক্তার নামধারী আশাদুল? কোন কোন রোগের কী কী ওষুধ দিচ্ছেন, তার সাথে আসা লোকজনের কাছে থাকা ব্যাগের মধ্যে ওষুধের আড়ালে কী থাকে এমন নানা প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে সচেতন মহলে। বিষয়টি বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপও কামনা করেছে এলাকাবাসী।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের নাম ফুলবাড়ি। ওই গ্রামের ঠিক ওপারেই ভারতীয় নলুয়াপাড়া গ্রাম। সরু একটি খাল থাকার কারণেই বুঝতে পারা যায় কোনটি বাংলাদেশের ফুলবাড়ি আর কোনটি ভারতের নলুয়াপাড়া গ্রাম। ফুলবাড়ি গ্রামের তেতুল টেংরার ছেলে কালু ও বুইচিতলা গ্রামের আ. জলিল বিজিবির লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত। তাদেরই সহযোগিতায় ভারতের নলুয়াপাড়া গ্রামের ডাক্তার পরিচয়ের আশাদুল নামের এক ব্যক্তি ঝোলাঝামটিসহ ৩/৪ জনকে সাথে নিয়ে অবৈধ পথে সীমান্ত পার হয়ে প্রতিদিন আসছেন ফুলবাড়ি গ্রামে। ভোর থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত কখনও ওই গ্রামের নাজির টেংরার বাড়িতে আবার কখনও বক্সের বাড়িতে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা। সর্বরোগের ওষুধ দেন তিনি। বিশেষ করে অ্যাজমা, হাঁপানি ও গ্যাস্টিক রোগের বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন তার ওষুধ ব্যবসা। এমনই তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি যাওয়া হয় সরেজমিন পরিদর্শনে। সাংবাদিক গ্রামে ঢোকার আগেই সংবাদ পৌঁছে যায় ওই ডাক্তার নামধারী ভারতীয় নাগরিক আশাদুলের কাছে। ফুলবাড়ি গ্রামের বক্সের বাড়ি খুঁজে পাওয়ার আগেই নৌকায় সরু খাল পার হয়ে চলে যান চতুর ওই ডিগ্রিবিহীন হাতুড়ে ডাক্তার।
রোগী সেজে প্রথমে কথা হয় বক্সের সাথে। তিনি বলেন, ওনার ডিগ্রি নেইতো কী হয়েছে? তার অনেক অভিজ্ঞতা। কোলকাতার এক নামী ডাক্তারের কাছে উনি দীর্ঘদিন ছিলেন। তাছাড়া উনি রোগী দেখতে কোনো ভিজিট নেন না। শুধু ওষুধের দাম নেন। প্রতিদিন কী সংখ্যক রোগী আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গড়ে এক দেড়শ রোগী হয়। আপনার বাড়িতে বসার জন্য ডাক্তারের কাছ থেকে কোনো টাকা নেন কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু দেয়। তাছাড়া মানুষের উপকার হচ্ছে এজন্যই বসতে দিই। তিনি আরো বলেন, ডাক্তার সাহেব শুধু আমার বাড়িতেই বসেন না, গ্রামের বিভিন্ন লোকের বাড়িতে বসেন। ভারতীয় নাগরিক হয়ে অবৈধ পথে প্রতিদিন আসে বিজিবি কিছু বলে না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোববার বাদে সপ্তাহে ৬ দিন রোগী দেখেন। রোববার উনি কোলকাতায় ওষুধ আনতে যান। মানুষের রোগ ভালো হচ্ছে তাই বিজিবি কিছু বলে না। এলাকার সচেতন মহল বলেছে ভিন্ন কথা। তারা বলেছেন বিজিবির ছত্রছায়ায় ওই ভারতীয় নাগরিক আশাদুল আসার সুযোগ পাচ্ছেন। ডাক্তার নামধারী আশাদুলের কোনো ডিগ্রি নেই। তিনি বিজিবির লাইনম্যানদের রোগী প্রতি ২০ টাকা আর থানার লাইনম্যানদের রোগীপ্রতি ১০ টাকা হারে দেন। এ নিয়ে কয়েকদিন আগে বিজিবি ও থানার লাইনম্যানদের মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছিলো। তাছাড়া তিনি ঝোলাঝামটিসহ ৩/৪ জন ভারতীয় নাগরিককে সাথে নিয়ে আসেন। তাদের ব্যাগে কী থাকে এটা নিয়েও সন্দেহ আছে। চিকিৎসার আড়ালে অস্ত্র পাচার হচ্ছে কি-না সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। যেহেতু এটা সীমান্ত এলাকা আর তিনি বিজিবির ছত্রছায়ায় আসা-যাওয়া করছে সে কারণে বিজিবির ভয়ে তাকে কেউ কিছু বলতেও পারছে না।
এবিষয়ে ফুলবাড়ি বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার আলাউদ্দীন বলেন, টাকার বিনিময়ে বিজিবি তাকে আসার সুযোগ দিচ্ছে কথাটি সঠিক নয়। এলাকার মানুষ বলছে ওই ডাক্তারের কাছে রোগ ভালো হচ্ছে। গ্রামের মানুষের কথা ভেবেই তাকে কিছু বলা হচ্ছে না।
এলাকার অনেকেই বলেছেন, বর্তমান সরকার যেখানে প্রতিটি ইউনিয়নেই একাধিক কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে। সেখানে এলাকার মানুষ কেন ওই ক্লিনিকে না যেয়ে ডিগ্রিবিহীন হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে, এটাও ভেবে দেখা দরকার। তাহলে কি ওই এলাকায় যে সমস্ত কমিউনিটি ক্লিনিক আছে সেগুলো কি নিয়মিতভাবে খোলা হয় না? না কী যারা দায়িত্বে আছেন তাদের কর্তব্য-কাজে অবহেলা হচ্ছে সেটিও স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করে।