দামুড়হুদার ফকিরপাড়ায় পানিতে ডুবে যমজ শিশু হাসান-হোসেনের মৃত্যু

বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার ফকিরপাড়ায় পানিতে ডুবে দেড় বছর বয়সী যমজ দু ভাই শিশু হাসান ও হোসেনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। হাসান-হোসেন দামুড়হুদা ফকিরপাড়ার রঙমিস্ত্রি পান্নুর ছেলে। গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে বসতঘরের পাশে খেলা করার সময় গর্তের পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়। বাদ আসর দু শিশুর নামাজে জানাজা শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে বেদনা-বিধুর পরিবেশে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ঈদগাপাড়ার মৃত খন্দকার শফি উদ্দিনের ছেলে পান্নু মিয়া প্রায় ৮ বছর আগে শ্বশুরবাড়ি দামুড়হুদার ফকিরপাড়ায় চলে আসেন এবং শ্বশুরের ভিটেয় ছাপড়া ঘর তৈরি করে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে স্বপনকে (৮) নিয়ে বসবাস শুরু করেন। দেড় বছর আগে জন্ম নেয় যমজ দু পুত্রসন্তান। বৃদ্ধ নানি রাবেয়া খাতুন তাদের নাম রাখেন হাসান ও হোসেন। দিনমজুর পিতা পান্নু অভাবের সংসারের চাকা ঘোরাতে পেশা বদল করে বর্তমানে জামান মিয়ার ফ্যাক্টরিতে রঙমিস্ত্রির কাজ করছেন।

গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পান্নুর স্ত্রী আমেনা খাতুন যমজ দু শিশুসন্তান হাসান-হোসেনকে ঘরে বসিয়ে রেখে বাড়ির অদূরে একটি বাগানে খড়ি কুড়োতে যান। এ সময় অবুঝ দু ভাই হাসান ও হোসেন ঘর থেকে নেমে ঘরের পাশেই একটি বাঁশঝাড়ের নিচে টিউবওয়েলের পানি যাওয়া গর্তের পাশে খেলা শুরু করে। এরই এক ফাঁকে অসাবধানতাবশত হাসান ও হোসেন ওই গর্তের পানিতে পড়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে মা আমেনা খাতুন খড়ি কুড়িয়ে বাড়ি ফিরে আসেন এবং ঘরে হাসান-হোসেনকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে মা আমেনা তার দু শিশুসন্তানকে গর্তের পানিতে ভাসতে দেখে চমকে ওঠেন। শুরু করেন চিৎকার। তোমরা কে কোথায় আছো আমার হাসান-হোসেনকে বাঁচাও। গৃহবধূ আমেনার চিৎকারে ছুটে আসে প্রতিবেশীরা। দু শিশুকে ওই গর্তের পানি থেকে মৃত অবস্থায় ডাঙ্গায় তোলে। খবর পেয়ে পিতা পান্নু তার কর্মস্থল থেকে দ্রুত বাড়ি ফেরেন। পিতা পান্নু, মা আমেনা, নানি রাবেয়া খাতুনসহ স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। পরিবারে নেমে আসে শোকের মাতম। বাকরুদ্ধ মা আমেনাকে নিহত দু শিশু সন্তানের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা আর পিতা পান্নুর বুকফাটা আহাজারিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি অনেকেই। পিতা পান্নু পাগলের মতো ধুলোয় গড়াগড়ি করছিলো আর বলছিলো আমার সব শেষ হয়ে গেলো। খোদা তুমি এমন শাস্তি কেন দিলে। শোকে কাতর হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় মা আমেনা খাতুনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যমজ দু শিশু হাসান-হোসেনের মৃত্যুর খবরে এলাকার শ শ নারী-পুরুষ ছুটে আসে ওই বাড়িতে। বেদনাবিধুর পরিবেশে বিকেল ৫টার দিকে নামাজে জানাজা শেষে তাদের লাশ নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

যমজ দু ভাই হাসান-হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন দামুড়হুদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক শরীফুল আলম মিল্টন, চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য যুবলীগ নেতা হযরত আলী প্রমুখ।