দামুড়হুদার ঠাকুরপুর সীমান্তে গরু আনতে গিয়ে বিএসফ’র নির্যাতনের শিকার শাহিন

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার ঠাকুরপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফ’র নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিন গরু ব্যবসায়ী। গতকাল শনিবার বিকেলে দামুড়হুদার চাকুলিয়া গ্রামের রহিম বক্সের ছেলে শাহিন আলী অবৈধভাবে গরু আনতে গেলে ঠাকুরপুর সীমান্তের ৮৮ নং মেন পিলারের কাছ থেকে ভারতের ১১৩ মালুয়া বিএসএফ ক্যাম্প সদস্যরা তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে সেখানেই ফেলে রেখে যায়। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে সে এখন আশঙ্কামুক্ত বলে জানান হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক। দামুড়হুদার ঠাকুরপুর সীমান্তে একের পর এক নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন গরুর পাসিং ম্যান (রাখাল)। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু আনতে গেলে তাদের আটক করে নির্যাতন করছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গতকাল শনিবার বিকেলে ঠাকুরপুর সীমান্ত থেকে একই পন্থায় গরু আনতে গেলে শাহিন আলী (২৩) নামের আরেক পাসিং ম্যান বিএসএফ’র নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে সীমান্তের কিছু অংশে কাঁটাতারের বেড়া না থাকা ও গরু পাচার চক্রের সাথে জড়িত রাঘববোয়ালদের প্রলোভনে অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা ওই কাজ করছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা। শাহিনের পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, বিকেলে ব্যবসার কাজে বাড়ি থেকে বের হয় শাহিন। পরে বিএসএফ তাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে গ্রামের লোকজন বাড়িতে খবর দেয়। বেশকিছুক্ষণ পর তাকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ঠাকুরপুর বিজিবি ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, শাহিন চুরি করে ভারত থেকে গরু আনতে গেলে তাকে নির্যাতন করে বিএসএফ সদস্যরা। চুয়াডাঙ্গার ৬ বিজিবি অধিনায়ক মোহাম্মদ রাশিদুল আলম জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। ঘটনাস্থলে বিজিবি সদস্যদের পাঠানো হয়েছে।

এদিকে চাকুলিয়া গ্রামের বেশ কয়েকজন জানান, এলাকার গরু পাচারকারীরা মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে কিছু গরিব লোকদেরকে তাদের কাজে ব্যবহার করে। বিজিবির চোঁখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে গরু আনতে ভারতে পাঠায় তাদের। এদেরকে স্থানীয়ভাবে পাসিং ম্যান বলা হয়। মোটা অংকের টাকার লোভে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ভারত থেকে গরু আনেন তারা। এরমধ্যে কেউ বিজিবি বা বিএসএফ’র হাতে আটক হয়। আবার অনেকেই গরু নিয়ে বেরিয়ে আসে। পাসিং ম্যানরা আটকা পড়ে নির্যাতনের শিকার হলেও প্রকৃত পাচারকারীরা থাকে আড়ালে। একের পর এক নির্যাতনের ঘটনায় নষ্ট হচ্ছে এলাকার শান্তি। তাই অবিলম্বে গরু পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। এদিকে একাধিক সূত্র ও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন গরু পাচারকারীর নাম। এরা হলো- ঠাকুরপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে রেজা, একই গ্রামের মান্দার মোল্লার ছেলে আশাদুল মোল্লা, আমিরের ছেলে আনিছুর, আফসার আলীর ছেলে সাদিক, ফজুর ছেলে আরিফ, ছাত্তার আলীর ছেলে আকরাম, রসুলের ছেলে মোঝো খোকা, আবু তালেবের ছেলে ছালাম, আশাদুল হকের ছেলে জসিম, ফাজেলের ছেলে হযরত আলী, আজিজুলের ছেলে রাজু, ইদ্রিসের ছেলে মহাসিন, নুরু গোল্দারের ছেলে মালেক, আব্বাসের ছেলে তাজমুল ও কালু এবং নসকরের ছেলে ইস্রাফিল। এরা ঠাকুরপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু নিয়ে আসে। কখনো আবার নিজেরাও যায়। নিজেদের অবৈধ ব্যবসার স্বার্থে এরা হতদরিদ্র পরিবারের লোকজন ও বেকার যুবকদের মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখায়। বিজিবি বা বিএসএফ গরু পাচারের সময় তাদের ধরে নির্যাতন করলেও আড়ালে চলে যায় রাঘববোয়ালরা। তারা ওই সমস্ত দরিদ্র পরিবারের লোকজনকে বিজিবি বা বিএসএফ’র বন্দুকের নলের সামনে রেখেই তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের ফাঁদে পা দেয়া হতদরিদ্র পরিবারগুলো। চিহ্নিত গরু পাচারকারীদের গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঠাকুরপুর গ্রামের মৃত গোপাল মণ্ডলের ছেলে আবু বক্করকে সীমান্তে গবাদি পশু চরানোর সময় মাঠ থেকে তুলে নিয়ে যায় বিএসএফ। পরে বিজিবি পতাকা বৈঠকের আহ্বান করলে প্রথম দিনে তাতে সাড়া দেয়নি বিএসএফ। পরদিন পতাকা বৈঠকে তারা জানায়, ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে আবু বক্করকে নদীয়া জেলার ভিমপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়া একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হকের ছেলে আব্দুল মালেক একই কারণে নির্যাতনের শিকার হন। পরে বিএসএফ সদস্যরা নির্যাতন শেষে সীমান্তে ফেলে রেখে গেলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।