দামুড়হুদার জয়রামপুরে খুনি বেপরোয়া : আরো একজন নিজ বিছানায় জবাই

 

ছেলের রক্ত দেখে হতবিহ্বল মায়ের বাকরুদ্ধ : সন্দেহভাজন আলমগীরকে ধরতে পুলিশি অভিযান

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার জয়রামপুরে আরো একজনকে নিজ ঘরের বারান্দায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করেছে রহস্যাবৃত ঘাতক। গতরাত সাড়ে ১২টার দিকে জয়রামপুর চৌধুরীপাড়ার মন্টুকে (৩০) খুন করে বেড়া ভেঙে পালিয়ে যায় খুনি। রাতেই পুলিশ খুনি ধরতে অভিযান শুরু করে। ডাক্তারপাড়ার আলমগীর পুলিশি সন্দেহের শীর্ষে। তাকে ধরতে তার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ।

পক্ষকাল ধরে জয়রামপুরে একের পর এক বাড়িতে হামলা চালিয়ে ঘুমন্ত মানুষকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করছে অজ্ঞাত পরিচয়ের দুর্বৃত্ত। গতপরশু একই গ্রামের ডাক্তারপাড়ার মোফাজ্জেল হোসেন মোফা ও তার শিশুকন্যাকে ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে হামলাকারী সটকে পড়ে। এর একদিন পর গতরাতে একই গ্রামের চৌধুরীপাড়া সংলগ্ন দোহারপাড়ার বাসিন্দা মন্টুকে তার ঘরের বারান্দায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জবাই করে সটকে পড়ে ঘাতক। এ ঘটনার পর গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ সিকদার মশিউর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছুলে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী উচ্চস্বরেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটায়।

‌                জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জয়রামপুর চৌধুরীপাড়া দোহারপাড়ের মৃত ছমির উদ্দীন ওরফে নূর হোসেনের ছেলে মন্টু মিয়া কয়েক মাস আগে ভ্যান চালানো ছেড়ে দোহা পাহারার চাকরি নেন। গতরাতেও দোহা পাহারা ও দোহাপাড়ের শ্যালোইঞ্জিন চালানোর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে মন্টু বাড়ি ফিরে বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা মাকে ডেকে তোলেন। মা তাকে ঘুমিয়ে পড়তে বলেন। বারান্দায় মায়ের বিছানাতেই শুয়ে পড়েন মন্টু। আনুমানিক রাত সাড়ে ১২টার দিকে গুংরানি শব্দে মায়ের ঘুম ভাঙে। দৌঁড়ে একজনকে পালানো দেখে চমকে ওঠেন মা। আলো জ্বালাতেই চোখে পড়ে রক্তাক্ত ছেলের মৃতদেহ। ছেলের তাজা রক্ত ঝরছে দেখে মা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। গ্রামজুড়ে নেমে আসে অজানা আতঙ্ক। রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছুলে স্থানীয়দের অনেকেই ঘটনাস্থলে ভিড় জমান। মন্টুকে কে বা কারা কেন খুন করেছে? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি। গত ১৫ দিন ধরে একের পর এক বিভিন্ন বাড়িতে হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে লোকজনকে ক্ষতবিক্ষত করার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ হামলাকারীকে ধরতে পারেনি। এ কারণে গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে দানা বেঁধেছে ক্ষোভের।

নিহত মন্টু তিন বোনের একমাত্র ভাই। তিনি ছিলেন তিন ছেলের জনক। পরিশ্রমী মন্টু বসে থাকেননি। তবে গ্রামের কিছু গাঁজাখোরদের সাথে তার ওঠাবসা ছিলো। গত ১৫ দিন ধরে একের পর এক হামলার শিকার পরিবারগুলোর সাথে গাঁজা সংশ্লিষ্টতার গন্ধ পেয়েছে পুলিশ। এরই সূত্র ধরে গতরাতেই পুলিশ জয়রামপুর ডাক্তারপাড়ার মজিদ বিশ্বাসের ছেলে আলমগীরকে ধরতে অভিযান চালায়। তাকে আটক করেছে বলে স্থানীয় একটি সূত্র জানালেও পুলিশ তা সরাসরি স্বীকার করেনি। অপরদিকে স্থানীয় সূত্র বলেছে, আলমগীর আগে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলেও সম্প্রতি তাকে দিনের বেলায় নামাজি হিসেবে দেখা গেছে। তিনি কেন ধারাবাহিকভাবে হামলা চালাবেন?

জয়রামপুর এলাকার একটি বিশাল বড় গ্রাম হিসেবে পরিচিত। বর্ধিষ্ণু জনপদ। গত ২২ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্রে নিজ ঘরের বারান্দায় খুন হন জয়রামপুর চৌধুরীপাড়ার আমজাদ। তার স্ত্রী স্থানীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করলেও পুলিশ স্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনকে সন্দেহের দৃষ্টিতে রেখেছে। ধরতে পারেনি ঘাতক। ২৪ এপ্রিল রাতে দোকানি আবুল কাশেমকে দোকানেই কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে সটকে যায় ধারালো অস্ত্রধারী। এর পরদিন ২৫ এপ্রিল রাতে জয়রামপুরের বরুইপাড়ার ভাজা বিক্রেতা বুদো ও তার স্ত্রী রহিদাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। গত পরশু রাতে জয়রামপুর ডাক্তাপাড়ার মোফাজ্জেল হোসেন মোফা ও তার চার বছর বয়সী মেয়ে খাদিজাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে দুর্বৃত্ত। এ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা ঘুরতে না ঘুরতে আবারও ঘটলো খুনের ঘটনা।

কে এই খুনি? কে এই হামলাকারী? গ্রামের সাধারণ মানুষ খুঁজে না পেলেও পুলিশের ব্যর্থতা গ্রামবাসীর কাছে ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামবাসী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছে, পুলিশ আন্তরিক হলে একই গ্রামে একের পর এক হামলা, খুনের ঘটনা ঘটে না। পুলিশি তৎপরতার অভাবেই খুনি হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।