দামুড়হুদার জগন্নাথপুরে একদল দুর্বৃত্তের ভয়াবহ হামলা : যুবলীগকর্মী গুলিবিদ্ধ

 

আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছ নবীর পিছু ধাওয়া করে বোমার পর বোমা নিক্ষেপেও প্রাণ রক্ষা

ভ্রাম্যমাণ/কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার জগন্নাথপুরে সন্ধ্যারাতে একদল অস্ত্রধারী তাণ্ডব চালিয়েছে। আছের হালসানা নামের এক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হলেও প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইয়াছ নবী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ইয়াছ নবীকেই লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে হামলাকারীরা। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলিটি লাগে তার পাশে থাকা আছের হালসানার হাতে। তিনি যুবলীগকর্মী বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছ নবী দৌঁড়ে পালালে দুর্বৃত্তরা তার পিছু ধাওয়া করে ৪টি বোমা নিক্ষেপ করলেও প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় জগন্নাথপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার আটকবর-জগন্নাথপুর সড়কের জগন্নাথপুর বাজারের অদূরেই সাংবাদিক মাহবুবুর রহমানের ফটোস্ট্যাট ও কম্পিউটার কম্পোজের দোকান। গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর দোকানের সামনে এসে বসেন নতিপোতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসাধারণ সম্পাদক নাটুদহের ইয়াছ নবীসহ কয়েকজন। ইয়াছ নবী নাটুদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও জগন্নাথপুর দাখিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি। রাত পৌনে ৮টার দিকে ৭/৮ জনের একদল অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত দোকানের সামনে এক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গুলিটি লাগে ইয়াছ নবীর পাশে থাকা আছের হালসানার (৪০) হাতে। তিনি আবু বক্কর হালসানার ছেলে। হামলাকারীদের গুলিবর্ষণ দেখে দৌঁড়ে স্থান ত্যাগ করেন ইয়াছ নবী। দোকানের সামনেই পর পর দুটি বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। ইয়াছ নবীর পিছু ধাওয়া করে জগন্নাথপুর বাজার মোড়েও দুটি বোমা নিক্ষেপ করে হামলাকারীরা। নিক্ষিপ্ত ৪টি বোমার সব কটিই লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় ইয়াছ নবীসহ অন্যরা অক্ষত থাকেন। বোমাঘাতে কেউ আহত না হলেও জগন্নাথপুর বাজার তটস্থ হয়ে ওঠে। হামলাকারীরা সটকে পড়ে।

গুলিবিদ্ধ আছের হালসানাকে উদ্ধার করে প্রথমে গ্রাম্য চিকিৎসক আব্দুল জব্বারের নিকট নেয়া হয়। তিনি দ্রুত মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। গতরাতেই তাকে ঢাকার উদ্দেশে নেয়া হয়েছে। রক্তক্ষরণে তার অবস্থা প্রথম দিকে আশঙ্কাজনক হয়ে উঠলেও পরে অবশ্য তিনি আশঙ্কামুক্ত বলেই মন্তব্য করেন চিকিৎসক।

কম্পিউটার ও ফটোস্ট্যাট দোকানি মহাবুব হোসেন দৈনিক মাথাভাঙ্গার আটকবর জগন্নাথপুর প্রতিনিধি। তার দোকানের সামনে সন্ত্রাসী হামলায় আছের আলী হালসানা গুলিবিদ্ধ হলেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার কারণে ইয়াছ নবী প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন বলে মন্তব্য প্রত্যক্ষদর্শীদের। কেন তার ওপর সন্ত্রাসী হামলা? এ প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। ইয়াছ নবীও তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি। তবে স্থানীয়দের অনেকেরই ধারণা ইয়াছ নবী আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এ কারণে তার প্রতিপক্ষদের কেউ সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা চালাতে পারে। ঘটনার পর পরই খবর পেয়ে দামুড়হুদার নাটুদহ ক্যাম্প ইনচার্জ টিপু সুলতান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি গুলির খোসা ও বিস্ফোরিত বোমার আলামত উদ্ধার করে হামলাকারীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান বলেছেন, ঘটনার পর থেকেই হামলাকারীদের শনাক্ত এবং গ্রেফতারের জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয়রা আরো বলেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নবগঠিত নাটুদহ ইউনিয়নের জগন্নাথপুর বাজারের সাংবাদিক মাহবুবুর রহমানের নিশান কম্পিউটার অ্যান্ড ডিজিটাল স্টুডিও’র সামনে আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছ নবী (৪০), একই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান ওরফে দোলার ছেলে ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন (৪৬), মোবারক আলী মাস্টারের ছেলে নাটুদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম মাস্টার (৩৯) ও হাজি আবু বক্কর হালসানার ছেলে যুবলীগকর্মী আছের হালসানা (৪০) দোকানের সামনে আসেন। এরপর তারা পার্শ্ববর্তী দোকানে চায়ের অর্ডার দেন। চা আসার আগেই রাত পৌনে ৮টার দিকে বাজারের পশ্চিম দিক থেকে আনুমানিক ৬/৭ জন সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত আচমকা দোকানের সামনে এসে বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করে।