দামুড়হুদার চিৎলায় কোলের ঘুমন্ত শিশুকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা ঘটনার নেপথ্য ফাঁস

 

দীর্ঘ ১৬ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদে ছেলেকে হত্যার দায় স্বীকার করলেন পাষাণী মা হাসিনা

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার চিৎলা গ্রচ্ছগ্রাম পাড়ায় ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা কোলের শিশু সন্তানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা ঘটনার জট খুলেছে। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আর মিথ্যা বলতে পারেননি ঘাতক পাষাণী মা তিন সন্তানের জননী হাসিনা বেগম। পুলিশের কাছে অকপটে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার নিহত শিশু আলামিনের মা হাসিনা বেগম। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জিজ্ঞাসাদের একপর্যায়ে তিনি একাই তার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই উত্তম ভট্টাচার্জ বলেছেন, পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীনের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোমেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) মো. কলিমুদ্দীন, দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ এবং ওসি (তদন্ত) জিএম ইমদাদুল হক ঘাতক মা হাসিনাকে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ঘাতক মা হাসিনা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন ছেলে আলামিন একটু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ধরনের ছিলো। সে তার মায়ের সাথে প্রতিনিয়ত ঝৈ-ঝগড়া করতো। সে মাঝে মাঝে বাড়িতেও থাকতো না এবং গাঁজা-তাড়ি খেতো। মায়ের কাছে বোঝা হয়ে উঠেছিলো শিশু আলামিন। মা সহ্য করতে না পেরে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় নিহত শিশু আলামিনের পিতা আজিবার রহমান বাদী হয়ে ঘাতক স্ত্রী হাসিনাকে আসামি করে গতকাল শুক্রবার বিকেলে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত শিশু আলামিনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেল ৫টার দিকে মরদেহ নিজ বাড়িতে নেয়া হয়। নিহত আলামিনের লাশ দেখতে এলাকার শ শ নারী-পুরুষ ভিড় জমায়। রাত ৮টার দিকে জানাজা শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। এলাকাবাসী বলেছে, পৃথিবীর সবচেয়ে নিরপদ স্থান হচ্ছে মায়ের কোল। সেই মায়ের কোলেই নির্মমভাবে খুন হতে হলো শিশু আলামিনকে। তাও আবার আপন মায়ের হাতেই। যা কেউ কখনও কল্পনাও করতে পারে না। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ বলেছেন, আটক ইব্রাহিম ও জহুরুল ওই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নয় বিধায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মায়ের সাথে অন্য কেউ জড়িত ছিলো কি-না সেটিও আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই উত্তম ভট্টাচার্জকে ৫ হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করেছেন পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় আপন বড় ছেলে আলামিনকে (১২) নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে নাটক সাজান ঘাতক মা হাসিনা বেগম। তিনি পুলিশকে জানান, ‘প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বেরুলে তিন ব্যক্তি বাড়িতে ঢুকে ছেলে আলামিনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই তিনজনের মধ্যে আমি দুজনকে চিনতে পারি। অপরজনের মুখ বাঁধা ছিলো বিধায় তাকে চিনতে পারিনি।’ হাসিনা বেগম পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যা বললেও প্রথম থেকেই এলাকাবাসীর সন্দেহের তীর ছিলো মায়ের দিকে। পরে তার দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পুলিশ একই গ্রামের ইব্রাহিম ও জহুরুল নামের দুজনকে আটক করে। এছাড়া নিহত আলামিনের মা হাসিনা বেগমের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়। রাত দেড়টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়।