দামুড়হুদার গোবিন্দপুরে বাউল আশ্রমে অগ্নি সংযোগ মারধর ও চুল কর্তন মামলায় গ্রেফতার ২

 

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিলেন এমপি আলী আজগার টগর

দর্শনা অফিস/দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার গোবিন্দপুরে বাউল আশ্রমে হামলা ঘটনায় এখনো কাটেনি আতঙ্ক। হামলা মামলায় পুলিশ অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। দুর্বৃত্তদের ধরিয়ে দেয়া আগুনে বাঁশি, কাশি, ঢোল, খোল, ডুগি, তবলা, হারমোনিয়াম, একতারা, দোতারা, জিপসিসহ সমস্ত বাদ্যযন্ত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেই সাথে পুড়ে গেছে সৌর বিদ্যুতের ব্যাটারি এবং একটি শ্যালোমেশিন। ভয়ে আতঙ্কে আশ্রম ছেড়ে অন্যত্র রাতযাপন করেছেন সাধু বাউল গুরু জুলমত শাহসহ তার ভক্তরা। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, পুলিশ সুপার রাশীদুল হাসান ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হালিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গতকাল সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর। এ সময় এমপি টগর ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শোনেন। তাৎক্ষণিক দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খানকে ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের কথা বলেন। সেই সাথে বাউলদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি। এমপি টগর ক্ষতিগ্রস্ত আশ্রম পুনর্নির্মাণের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সাথে ছিলেন দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, উপজেলা আ.লীগের যুগ্মসম্পাদক,ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাজি সহিদুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা জেলা বাউল পরিষদের সভাপতি মনিরুজ্জামান ধীরু, আ.লীগ নেতা আতিয়ার রহমান হাবু, আজাদুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা হবা জোয়াদ্দার, যুবলীগ নেতা আ. হান্নান ছোট, আব্দুস সালাম ভুট্রো, মামুন শাহ, অহিদুল ইসলাম, স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান মতি, ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ববি, নাহিদ পারভেজ, তোফাজ্জেল হোসেন তপু, আলামিন প্রমুখ।

দামুড়হুদার হাউলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাউল আশ্রমে অগ্নিসংযোগ ও হামলা মামলায় আলাউদ্দিন (২৮) ও নাসিরুল ইসলাম কালু (২৬) নামের দু যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দর্শনা আইসি ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কালু ও আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতারকৃত আলাউদ্দিন উপজেলার মদনা গ্রামের মোলাম হোসেনের এবং কালু একই গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে গতকাল সোমবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলার বাদী আশ্রমের মালিক সাধু গুরু জুলমত শাহ গ্রেফতারকৃতদের শনাক্ত করেছেন বলে পুলিশসূত্র জানিয়েছে। ওসি বলেছেন, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আরও তথ্য উদঘাটনের জন্যই আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কুমিল্লার ল্যাংটা বাবার অনুসারী চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুলচারার হোসেন শাহ’র ভক্ত দামুড়হুদা প্রতাপপুরের মৃত খোয়াজ মণ্ডলের ছেলে বাউল গুরু জুলমত শাহ গোবিন্দপুরস্থ মোল্লারচর মাঠপাড়ায় প্রায় ৬ বছর আগে তিন বিঘা নিজস্ব জমির ওপর বাউল আশ্রম গড়ে তোলেন। ওই বাউল আশ্রমে গত শুক্রবার গভীর রাতে ৮-১০ জনের সশস্ত্র দুর্বৃত্ত হামলা চালায়। মুখোশধারী হামলাকারীরা আশ্রমের সকলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাউল গুরু জুলমত আলী শাহ, তার স্ত্রী মোমেনা বেগম ও বাউল ভক্ত হরেন্দ্রনাথ গোঁসাইকে আলাদা আলাদা গাছের সাথে বাঁধে। বেঁধে বেধড়রক মারধর করে ৩ জনকে। এ সময় হামলাকারীরা হরেন্দ্রনাথ গোঁসাই ও জুলমত আলী শাহর মাথার চুল কেটে দেয়। দুর্বৃত্তরা বাউল আশ্রমের পাশের দুটি ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় শনিবার বিকেলে বাউল গুরু জুলমত শাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৮-৯ জনকে আসামি করে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এদিকে বাউল আশ্রমে হামলা ঘটনায় জেলার সকল বাউলদের মধ্যে চরমভাবে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাউলদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি করেছেন জেলা বাউল পরিষদের সভাপতি মনিরুজ্জামান ধীরু।