দামুড়হুদার কুনিয়া চাঁদপুর মাদরাসার অফিস সহকারী শফির ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন

খুনের রহস্য নিয়ে গুঞ্জ : পরকীয়া?  নাকি নিয়োগের টাকা ভাগাভাগি

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার কুনিয়া চাঁদপুর দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী নাপিতখালী গ্রামের নিহত শফি উদ্দিনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায়। দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেল ৩টার দিকে নিজ গ্রামে কবরস্থানে নিহতের দাফন সম্পন্ন করা হয়। বুধবার সকালে র‌্যাব-৬’র এসআই মোফাজ্জেল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। নিহত শফির বড় ভাই হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল বুধবার দামুড়হুদা মডেল থানায় অজ্ঞাতদের নামে মামলা দায়ের করেছেন।

এদিকে খুনের নেপথ্যে পরকীয়ার ঘটনা থাকতে পারে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করলেও নেপথ্য নিয়ে এলাকায় শুরু হয়েছে গুঞ্জন। গত ২৪ ডিসেম্বর ওই মাদরাসায় ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে একজন সহকারী শিক্ষক (গণিত পদে) নিয়োগ দেয়া এবং নিয়োগ বাণিজ্যের ওই টাকা মাদরাসার ফান্ডে জমা না দিয়ে অফিস সহকারী শফি উদ্দিন, মাদারাসার সুপার মাও. শামসুল আলম ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জামাল হোসেন ভাগাভাগি করে নেয়। নিয়োগের পর থেকেই শফিকে ওই টাকার ভাগ দেয়ার জন্য একটি পক্ষ তাকে মোবাইলফোনে নিয়মিতভাবে চাপ দিচ্ছিলো। নিয়োগের ৭ লাখ টাকার ভাগাভাগি নিয়েও এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে এলাকার অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

নিহত শফির স্ত্রী এক সন্তানের জননী বুলবুলি খাতুন স্বামীকে হারিয়ে পাগল প্রায় অবস্থা। একমাত্র শিশু সন্তান বাপ্পী (১১) অনেকটাই বাকরুদ্ধ। বৃদ্ধ পিতা-মাতাসহ নিকটজনদের মাঝে নেমে এসছে শোকের মাতম।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আহসান হাবিব জানান, নিহত শফির ব্যবহৃত দুটি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি বাংলালিংক সিমের কললিস্ট চেক করে দেখা গেছে গত ৯, ১০ ও ১১ তারিখ সন্ধ্যার পর একই সময়ে অর্থাৎ সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত কথা বলা হয়েছে। ঘটনার আগেও ওই একই নম্বরে ১৫ মিনিট করে দুবারে ৩০ মিনিট কথা হয়েছে। খুনের নেপথ্য উন্মোচন এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করতে নিহত শফির ব্যবহৃত মোবাইলফোনের কললিস্ট ধরে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তদন্তের স্বার্থেই গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। শিগগিরই এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য উন্মোচন করে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, কুনিয়া চাঁদপুর দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী নাপিতখালী গ্রামের শফি গত মঙ্গলবার এশার আজানের পরপরই রাতের খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পাড়ার জনৈক মাবুদের দোকানে বসেন। এর কিছুক্ষণ পর তার মোবাইলফোনে একটি ফোন আসে। শফি মোবাইলফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে চায়ের দোকানের অদূরে চলে যায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে জনৈক ওই মাবুদের চায়ের দোকানে বসে থাকা নিহত শফির আপন ৩ ভাই ও প্রতিবেশীরা গোঙানির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় দেখতে পান। ওই চায়ের দোকানের অদূরে শেওড়াতলা নামক স্থানে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা শফিকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায় বলে প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে মারা যান।

এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আতাউর রহমান পুলিশ প্রশাসনকে না জানিয়ে নিহত শফির লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করায় দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ফকির আজিজুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।