দামুড়হুদার কামারপাড়া সীমান্তে বাংলাদেশি গরুব্যবসায়ী আবুকে পিটিয়ে হত্যা পতাকা বৈঠকে হত্যার কথা অস্বীকার করেছে বিএসএফ : সীমান্তঘেষা মাথাভাঙ্গা নদী থেকে আবুর লাশ উদ্ধার

দর্শনা অফিস/দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার কামারপাড়া সীমান্তে বাংলাদেশি গরুব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয়দের অনেকেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ’’র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও পতাকা বৈঠকে বিএসএফ প্রতিনিধি তা অস্বীকার করেছেন। স্থানীয় একাধিকসূত্র বলেছে, সীমান্ত থেকে বাংলাদেশি গরুব্যবসায়ী আবুকে আটকের পর তার ওপর দীর্ঘ সময় ধরে নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে তিনি মারা গেলে তার লাশ সীমান্তের মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। গতকাল শুক্রবার বিকেলে লাশ দেখে স্থানীয়রা বিজিবি সদস্যদের খবর দেন। আবু সীমান্তবর্তী নাস্তিপুর স্কুলপাড়ার রহিম বক্সের ছেলে। পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয়। এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের নাস্তিপুর হাইস্কুলপাড়ার রহিম বক্সের ছেলে আবুল হোসেন ওরফে আবু দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত পথে জোন হাজিরায় গরু পাচার করে এনে জীবিকা নির্বাহ করতো। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিদিনের মতো গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে খাওয়া-দাওয়া শেষে কামারপাড়া সীমান্তপথে ভারতের বিজয়পুর এলাকায় যান জোন হাজিরায় গরু আনতে। সীমান্ত থেকে প্রতিদিন রাতেই বাড়ি ফিরলেও ওই দিন বাড়ি ফেরেননি আবু। পরদিন সকালে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। গতকাল শুক্রবার সকালে ভারত থেকে খবর আসে আবু বিজয়পুর বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়ে। এ খবরে বাড়াদী বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের জন্য বিজয়পুর বিএসএফকে পত্র দিলে সকাল ১০টার পর সীমান্তের ৮১ নং মেন পিলারের কাছে অনুষ্ঠিত হয় বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক। ১০টা ২২ মিনিটে বৈঠক শুরু হলেও মাত্র ৭ মিনিটের মাথায় বৈঠকটি শেষ হয়। এ বৈঠকে বিএসএফ’র পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে তারা আটক করেননি। পরে বিজিবি ও গ্রামবাসী আবুকে খুঁজতে শুরু করে। এক পর্যায়ে দুপুরে যখন যে যার মতো বাড়ি ফেরে সেই সুযোগে আবু’র লাশ সীমান্ত ঘেঁষা মাথাভাঙ্গা নদীর ধারে কে বা কারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফেলে যায়। বিকেল ৩ টার দিকে দ্বিতীয় দফা খোঁজাখুঁজির সময় কামারপাড়ায় মাথাভাঙ্গা নদীর ধারে আবুর লাশ পড়ে থাকতে দেখে বাড়াদী বিজিবি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আলয় সিউসের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্য ও স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থল থেকে বিজিবি সদস্যরা গ্রামবাসীর সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার করেন। খবর দেয়া হয় থানা পুলিশে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের ইন্ট অফিসার ক্যাপ্টেন মাজহারুল ইসলাম ও ঠাকুরপুর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার জমশেদ আলী। খবর পেয়ে থানার এসআই ইব্রাহিম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বিজিবির পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে ৪ সন্তানের জনক আবুর (৪৫) লাশ হস্তান্তর করা হয়। আবুর লাশ আনা হয় নিজ গ্রামের স্কুলমাঠে। এ সময় স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস। পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে সন্ধ্যায় ময়নাতদন্তের জন্য নেয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আবুর লাশ ময়নাতদন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে আজ শনিবার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে আবুর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। ফলে স্বজনরা আবুর লাশের অপেক্ষার প্রহর গুনছে। এদিকে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। আসলে কি বিএসএফ আবুকে হত্যা করেছে নাকি নেপথ্যে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে দাবি তুলেছে এলাকাবাসী।