দাফতরিককাজে কাউকেঘুষদিতে হয় কি-না জানতে চায় মন্ত্রণালয়

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: দাফতরিককাজে কাউকে ঘুষ দিতে হয়েছে কি-না তা জানতে চেয়ে বেসরকারিবিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ছয় ধরনের কাজেরওপর তথ্য ছকসংবলিত এ চিঠি বুধবার ৭৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরজবাব আজ বিকেল ৩টার মধ্যে দিতে হবে। পাশাপাশি আগামী ৬ জুলাই মন্ত্রণালয়েঅনুষ্ঠিত হবে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকও। সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছেবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানদের।মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাবে ইতোমধ্যেই কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, দাফতরিককাজে কোনো ঘুষ দিতে হয় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

শিক্ষা সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক জানান, ট্রান্সপারেন্সিইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ঘুষলেনদেনের যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেনতারা। মূলত এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্যই এভাবেতথ্য আহ্বান করা হয়েছে। এ নিয়ে ৬ জুলাই অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সংশ্লিষ্টদেরবক্তব্যও শোনা হবে।তবে এ ধরনের পদক্ষেপে খোদ মন্ত্রণালয়েই কর্মকর্তাদেরপর্যায়ের হাসি-তামাশার সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করে একাধিক দায়িত্বশীলকর্মকর্তা জানান, এভাবে লিখিত বা আনুষ্ঠানিক সভায় কেউ কোনোদিন ঘুষপ্রদানের কথা স্বীকার করবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া ঘুষ প্রদানযেখানে অপরাধ এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজও যে দফতরের কাছে, সেখানেকোনোদিনই এভাবে আনুষ্ঠানিক ঘুষ লেনদেনের তথ্য বের করা সম্ভব নয় বলে মনেকরেন তারা। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে খোদ শিক্ষাসচিবও স্বীকার করেনযে, কেউ হয়তো স্বীকার করবে না। কিন্তু ঘুষদাতা হিসেবে বেসরকারিবিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের ব্যাপারেও অভিযোগটি এসেছে। তাই এ ব্যাপারে তাদেরওবক্তব্য থাকতে পারে। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে তাদেরও (বেসরকারিবিশ্ববিদ্যালয়) কথা শোনা দরকার বা তারাও তাদের সমস্যার কথাও জানাতে পারে।এসব কারণেই মন্ত্রণালয় ওই তথ্য ছক পাঠিয়ে ঘুষ লেনদেন বা কাকে ও কতো টাকাদিতে হয়েছে তা জানতে চেয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো চিঠিতে দেখাগেছে, যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিরকার্যক্রমকেন্দ্রিক। অর্থাৎ ওই দুদফতরের ছয় ধরনের কাজে কোনো ঘুষ দিতেহয়েছে কিনা সেটিই নিশ্চিত হতে চাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রেজানিয়েছে, পত্র পেয়েই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ত্বরিত জবাব দিতেও শুরু করেছে।বুধবার বেলা ১টা পর্যন্ত ‘কাউকে ঘুষ দিতে হয়নি’ এমন জবাব দিয়ে চিঠিপাঠিয়েছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে সবার আগে উত্তর পাঠিয়েছেচট্টগ্রামের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএসটিসি)। যার বিরুদ্ধেরয়েছে বিভিন্ন মহলের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। এরপরই ঢাকার ওয়ার্ল্ডইউনিভার্সিটি তথ্য পাঠিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি একটি পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়হিসেবে পরিচিত। এছাড়া চিঠির উত্তর যারা পাঠিয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যহচ্ছে- স্টেট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি) ও প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি।

উত্তর জমা দিয়ে ফেরার পথেবুধবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের ১৮ তলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিনিধিরসঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করে ওই ব্যক্তি জানান, ঘুষদিতে হয়েছে- এমন কথা বললে তাকে প্রমাণ দিতে হবে। কিন্তু এই প্রমাণ তার কাছেনেই। এর বাইরে তদন্ত কমিটি হলে ১০-১২ দিন সাক্ষ্য দিতে আসতে হবে। এর চেয়েনা বলাই ঝামেলামুক্ত বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।টিআইবির নির্বাহীপরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের গবেষণাপ্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাকেআমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু এই পদক্ষেপ যদি লোক দেখানো এবং দায় এড়ানোর জন্যহয়, তাহলে জাতির কোনো উপকারে আসবে না। বরং উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুর্বৃত্তায়নঅব্যাহত থাকবে। আমরা সামগ্রিকভাবে মন্ত্রণালয়, ইউজিসি বা সববিশ্ববিদ্যালয়কে বলিনি যে, তারা অসৎ। তাই বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে না নিয়েসমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এভাবে আনুষ্ঠানিক ঘুষ লেনদেনের তথ্য জানা সম্ভব নয়, যেখানে ঘুষ দেয়া এবংগ্রহণ উভয়ই অবৈধ। তবে সরকার যদি চায়, তাহলে তথ্য-উপাত্ত তারা (টিআইবি)সাহায্য করবেন।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিন পৃষ্ঠার ওইতথ্য ছকে মোট ৬টি প্রশ্নে ১২টি বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন থেকে পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো অর্থ (ঘুষ) দিতে হয়েছে কিনা, যদি দিয়ে থাকেন তবে কোনো পর্যায়ে কাকে কতো টাকা, ভিসি-প্রোভিসি কোষাধ্যক্ষ অনুমোদনের জন্য কোনো পর্যায়ে অর্থ দিতে হয়েছেকিনা, যদি দিয়ে থাকেন তবে কোন পর্যায়ে এবং কাকে কতো টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়স্থাপনের জন্য ইউজিসির পরিদর্শনকালে কোনো অর্থ দিতে হয়েছে কিনা, যদি দিয়েথাকেন তবে কোনো পর্যায়ে কাকে কতো টাকা ঘুষ দিয়েছেন, অনুষদ অনুমোদনের জন্যকোনো টাকা দিয়েছেন কিনা, যদি দিয়ে থাকেন তবে কোন পর্যায়ে কাকে কতো টাকা।এভাবে বিভাগ এবং পাঠ্যক্রম অনুমোদনেও কোনো ঘুষ দিতে হয়েছে কিনা বা কাকে কতটাকা দিতে হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়।

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামনাহিদ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, টিআইবির অভিযোগকে আমরা সঠিক মনেকরি না। এটা অবাস্তব এবং অসম্ভব ব্যাপার। তারা দুবছর ধরে গবেষণা করছে। অথচআমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। তাদের উচিত ছিলো আমাদের সঙ্গে কথা বলা। তারপরও আমরাবসে নেই। এ ব্যাপারে ৫ তারিখের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করে পরবর্তী পদক্ষেপআপনাদের জানাব। তিনি আরও বলেন, টিআইবির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে কাউকেইরেহাই দেয়া হবে না।গত ৩০ জুন টিআইবি তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশকরে। এতে তারা বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষা অন্তত ৬০ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি, ১১ খাতে ঘুষ বাণিজ্য, সনদ বাণিজ্যসহ নানা বিষয় তুলে ধরে।