দশ বছরেও শেষ হলো না গ্রেনেড হামলার বিচার

 

আজ ২১ আগস্ট : বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সেই ভয়াল দিন

স্টাফ রিপোর্টার: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেডহামলা মামলার বিচার দশ বছরেও শেষ হয়নি। আর কবে নাগাদ শেষ হবে এই আলোচিতহত্যা মামলার বিচার, তা সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না। মামলার মোটসাক্ষী ৪৯৪ জন। অথচ গতকাল বুধবার পর্যন্ত মাত্র ৯৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষহয়েছে। ৯৯তম সাক্ষী পুলিশ ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমানের জেরা চলছে। মামলায়মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এদের মধ্যে ১৯ জন পলাতক, জামিনে রয়েছেন ৮ জন, কারাগারে রয়েছেন ২৫ জন। পুরানো ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন এজলাসে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২১ আগস্ট গ্রেনেডহামলার মামলার বিচার কাজ চলছে।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলিবিশেষ পিপি সৈয়দ রেজাউর রহমান জানান, মামলার ৯৯ তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণচলছে। কবে নাগাদ বিচার কাজ শেষ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে কিছুটা সময় লাগবে। তাই নির্দিষ্ট করে সময়সীমা বলা সম্ভবনা।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় পুলিশ বাদী হয়েপৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। কিন্তু বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ঘটনাভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। হামলার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়আওয়ামী লীগের ওপর। সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক। গ্রেফতার করা হয় আওয়ামী লীগনেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার মোখলেছুর রহমান, ভবঘুরে যুবক জজ মিয়াসহ ২০জনকে। এমনকি নষ্ট করা হয় গ্রেনেড হামলা মামলার আলামত। জজ মিয়া নাটকজানাজানি হবার পর বন্ধ হয়ে যায় মামলার কার্যক্রম। তবে ২০০৭ সালেতত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে শুরু হয় মামলার কার্যক্রম। মামলারতদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির। তিনি ২০০৮ সালের ১১জুন বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানাতাজউদ্দিন, হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করেআদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের৯ জুন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। তবে ওই চার্জশিটেগ্রেনেড হামলার ঘটনায় গ্রেনেড সংগ্রহ ও সরবরাহকারী, পরিকল্পনাকারীআসামিদের সনাক্ত ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনেরপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।মামলার তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দকে।তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০জনের বিরুদ্ধে সম্পুরক চার্জশিট দাখিল করেন। আর ২০১২ সালের ১৮ মার্চসম্পূরক চার্জশিটের ৩০ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে শুরু হয় বিচারকাজ।

৮ জনের জবানবন্দি: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আট জনআদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, মহিবুল্লাহ ওরফেমফিজুর রহমান ওরফে অভি, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফহাসান সুমন ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।

পলাতক রয়েছেন ১৯ জন: তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতিশফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব)ওবায়দুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর (অব.) এটিএম আমিন, মাওলানাতাজউদ্দিন (গ্রেনেড সরবরাহকারী দক্ষিণ আফ্রিকায়) ঝিনাইদহের ইকবাল, বরিশালেরমাওলানা আবু বকর, মাগুরার খলিলুর রহমান, ঢাকার দোহারের জাহাঙ্গীর আলমওরফে বদর ও গোপালগঞ্জের মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার। আরভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন হুজির সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুলমোত্তাকিন।

জামিনে রয়েছেন ৮ জন: পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শকআশরাফুল হুদা, শহুদুল হক, খোদা বকস চৌধুরী, সিআইডির সাবেক তিন কর্মকর্তারুহুল আমিন, মুন্সী আতিকুর রহমান, আবদুর রশিদ, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে.কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক বিএনপি নেতাকাউন্সিলর আরিফুর রহমান।