দলিল লেখক সমিতির বেপরোয়া চাঁদাবাজি : রেজিস্ট্রিতে ঘুষের রমরমা

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে দলিল লেখক সমিতির নামে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের (নিবন্ধন) ক্ষেত্রে চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। সমিতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা। পাশাপাশি সাব রেজিস্ট্রারদের অনেকেরই অপকৌশলের শিকার হয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা ঘুষ দিয়ে জমি রেজিস্ট্র্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে গেলেই একটি নির্ধারিত হারে ফি আদায় করছে সমিতি। অনেক সমিতিতে রেজিস্ট্রেশনের যাবতীয় খরচের টাকা আদায় হচ্ছে কেন্দ্রীয়ভাবে সমিতির মাধ্যমে। সাধারণ দলিল লেখকরাও জিম্মি হয়ে পড়েছেন অনেক সমিতির কাছে। জমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে তাদের কোনো হাত নেই। তারা সমিতির বাইরে গিয়ে কোনো জমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন না। রেজিস্ট্রি অফিসকে জিম্মি করে আইনে নির্ধারিত ফির ৩০ থেকে ৪০ গুণ বেশি টাকা আদায় করছে সমিতি। সাধারণ জনগণ বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করছেন। জনগণকে জিম্মি করে আদায়কৃত টাকা ভাগ হচ্ছে সমিতির সদস্য থেকে শুরু করে সাব রেজিস্টার অফিস, স্থানীয় প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে রেজিস্ট্রেশন পরিদফতরের মহাপরিদর্শক (আইজিআর) আবদুল মান্নান খান বলেন, সমিতির নামে জিম্মি করে জনগণের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। দলিল লেখকরা একটি দলিল লেখার জন্য কেবল আইনে নির্ধারিত পৃষ্ঠাপ্রতি ১৫ টাকা করে ফি আদায় করতে পারে। বাধ্যতামূলকভাবে টাকা আদায় করতে পারে না।
এদিকে দলিল লেখক সমিতির তীব্র আপত্তির মুখে ভূমি রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ডিজিটালাইজেশন করার সরকারি উদ্যোগে ভাটা পড়েছে। সরকারের এ ধরনের একটি মহৎ ও আধুনিক উদ্যোগকে স্বাগত না জানিয়ে বিরোধিতা করছেন দলিল লেখক সমিতির নেতারা। তারা সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে আদায় করা টাকা দিয়ে সারাদেশে আন্দোলন করছেন এবং এখনও আন্দোলনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ডিজিটালাইজেশনের কাজ ভেস্তে যাচ্ছে না। আমরা একটি ফার্মকে কাজ দিয়েছি। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় দেরি হওয়ায় কিছুটা ধীরগতি দেখা দিয়েছে।

জনগণকে জিম্মি করে দলিল লেখক সমিতির টাকা আদায়ের অভিযোগের ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বলেন, এভাবে জনগণকে জিম্মি করে টাকা নেয়াটা সম্পূর্ণ বেআইনি। জনগণের অজ্ঞতার জন্য এমনটা হচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, জনগণ সচেতন হলে সমিতি এটা করতে পারবে না। রশিদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা দিতে হবে। তার বাইরে দলিল লেখকের লেখনি ফি বাবদ দিতে হবে। এর বাইরে জিম্মি করে কেউ কোনো টাকা চাইলে তা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ।