দর্শনা জয়নগর সীমান্ত ধুরপাচার ও চোরাচালানের নিরাপদ রুট

 

চক্রের হোতা হারুন ও জামাই বাবলুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ যাত্রী সাধারণ

দর্শনা অফিস: দর্শনা জয়নগর সীমান্ত পথে ধুরপাচার হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। একই পথে ভারত থেকে চোরাই পথে আনা হচ্ছে ফেনসিডিল ও চোরাচালানি মালামাল। এ চক্রের মূল হোতা জয়নগরের জামাই বাবলু ও হারুন। জামাই বাবলু ও হারুনের নেতৃত্বে এলাকার ৮-১০ জনের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এ কারবার করে আসছে। এক প্রকার বিজিবি-পুলিশের নাকের ডগায় বসেই এ অপকর্ম করছে অভিযুক্তরা। আসলে কি বিজিবি-পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে চলছে এ কারবার? নাকি পুলিশ-বিজিবির ইশারাতেই চলছে? তা খতিয়ে দেখার জন্য চুয়াডাঙ্গা ৬ বর্ডার গার্ডের পরিচালক লে. কর্নেল মনিরুজ্জামান ও পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এলাকাবাসী।

অভিযোগে জানা গেছে, বছর বিশেক আগে ঢাকার ঝিকেতলা এলাকার বাবলু বিয়ে করে দর্শনা পৌর এলাকার জয়নগরের সৈয়দ মণ্ডলের মেয়েকে। বিয়ের পরপরই বাবুল আপন ঠিকানা ছেড়ে ঘর জামাই হিসেবেই শ্বশুরবাড়িতে বসবাস শুরু করে। সে থেকে বাবলু থেকে জামাই বাবলু নামে পরিচিত পায়। একই মহল্লার মসজিদপাড়ার নিজাম উদ্দিনের ছেলে হারুনকে বছর দশেক আগে নিমতলা বিজিবি খাবার বহনের জন্য ১শ টাকা দিন হাজিরায় কাজে নেয়। হারুনের কাজ ছিলো নিমতলা বিজিবি ক্যাম্প থেকে জয়নগর বিজিবি চেকপোস্টে দুপুর ও রাতের খাবার বহন করা। বছর পাচেকের মধ্যেই চতুরে পরিণত হয় হারুন। খাবার বহনের কাজ দেয় একই মহল্লার চান্দু মিয়ার ছেলে মফিদুলকে। নিজেকে বিজিবি সোর্স পরিচয়ে জাহির করতে শুরু করে। সীমান্ত ঘেষা জয়নগরে বসে হারুন ও জামাই বাবলু শুরু করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টে দালালি, রাতের আধারে বিনা পাসপোর্টে ভারতে মানুষ পাচার, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ মাদকদ্রব্য বিকিকিনি ও লাগেজ ধান্দা সবই দুজনে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। অবৈধভাবে উপার্জন করতে থাকে কাড়ি কাড়ি টাকা। ৮-১০ জন চিহ্নিত চোরাচালানীকে নিয়ে গড়ে তোলে সিন্ডিকেট। চাটাইয়ের বেড়া ও আখপাতার চালার পরিবর্তে দুজনে জয়নগরে গড়ে তুলেছে বিশাল অট্টালিকা। চেকেপাস্ট এলাকায় মার্কেট নির্মাণ করেছে জামাই বাবলু। হারুন শ্বশুরবাড়ি ডিঙ্গেদাহ এলাকায় ২টি ট্র্যাক্টর ও প্রচুর জমিজমার মালিক। নগদ অর্থ ও জমিজমার মালিক জামাই বাবলু ও হারুনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসীর অভিযোগে আরো জানা গেছে, জামাই বাবলু ও হারুন চেকপোস্টে দালালি ছাড়েনি এখনো। চেকপোস্টের দালালচক্রের হোতা এ ২ জনের জোন হাজিরায় লোক নিয়ে দালালি চলছে। দিনভর বিনাপাসপোর্টের যাত্রী দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হারুন ও জামাই বাবলুর বাড়িতে অবস্থান করে থাকে। মাথাপ্রতি ৩-৪ হাজার টাকায় রাতের আধারে ধুরপাচার করছে ভারতে। এছাড়া ফেনসিডিল ও হেরোইনের চালান চোরাই পথে ভারত থেকে এনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অনেকটা দিনের আলোয় প্রকাশ্যেই ভারত থেকে আনছে থ্রিপিস, শাড়ি, লেহেঙ্গা, নাইটি, গেঞ্জি, প্যান্ট-সার্ট পিসসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক। এ মালামাল দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট এলাকা থেকে প্রকাশ্যে ভ্যানভর্তি করে বিভিন্ন কৌশলে নেয়া হচ্ছে পোড়াদহে। বেশ কিছুদিন আগে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে এ সব মালামাল চোরাইপথে আনার পর ইমিগ্রেশন এলাকায় কাস্টমস সমস্যরা জব্দ করার চেষ্টা করা হলে জামাই বাবলুসহ তার বাহিনীর সদস্যরা কাস্টমস ইনেসপেক্টরসহ বেশ কয়েকজন সিপাহীকে প্রকাশ্যে বেধড়কভাবে পিটিয়ে আহত করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হলেও জামাই বাবলু এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। এছাড়া হারুন ও বাবলু নিজেদের বিজিবি-পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশের সোর্স পরিচয়ে মাদক ও চোরাকারবারীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রচুর অর্থ। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জয়নগর এলাকায় চোরাচালানের প্রকাশ্য হাট বসছে কথিত ওই ২ প্রশাসনের সোর্সের নেতৃত্বে। আসলে কোন খুঁটির জোরে বহাল তবিয়তে লাখ লাখ টাকার চোরাকারবার করছে তারা? লাগেজকারবারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করলেও সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত জামাই বাবলু ও হারুনকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছে এলাকাবাসী।