দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজের দুর্নীতি : উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন

 

এমপি টগর ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মনজুসহ তদন্ত কমিটির কর্তাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন

দর্শনা অফিস: দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে গঠন করা হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হলো ঠিকেদার প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজুসহ তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত তদন্ত সম্পন্নকরণের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছেন এমপি আলী আজগার টগর ও মাহফুজুর রহমান মনজু। দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণ কাজের দুর্নীতি এখন জেলাবাসীর মুখেমুখে। রডের পরিবর্তে বাঁশের কাবারি দিয়ে পিলার ঢালাইয়ের ঘটনা রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। অভিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে সকলে। শাস্তির দাবি যেনো সকলের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কৃষিপণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কয়েক বছর ধরে জমি অধিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে। অবশেষে দর্শনা পৌরভবনের পেছনে ২৯ দশমিক ৫২ শতাংশ জমি অধিকরণ করা হয়। ওই জমিতে গত বছরের ১ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ কৃষি অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় ফাইটো স্যানিটারি শক্তিশালী উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থয়ানে বরাদ্দকৃত ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যায়ে ২৭৫ স্কায়ার ফুট দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃতি সন্তান হামিদুর রহমান ও চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ। সে থেকে শুরু হয় দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ। এ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর যেনো অভিযোগের শেষ নেই। শুরু থেকেই স্থানীয়রা দুর্নীতি প্রতিরোধের চেষ্টা চালালেও হয়েছে ব্যর্থ। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের নানামুখি হুমকির মুখে পিছিয়েছে প্রতিবাদকারীরা। ব্যপক দুর্নীতির চিন্তা-ভাবনা মাথায় নিয়েই ভবন নির্মাণের আগে নির্মাণ করা হয় সীমানা। দিনের আলোর থেকে রাতের আধারেই নির্মাণ কাজে বেশি সাচ্ছন্দবোধ করতো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা। যে কারণে বেশিরভাগ সময় রাতের আধারেই নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে এ ভবন নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় ঢাকার ফার্মগেটের জয় কনস্ট্রাকশন ইন্টারন্যাশনাল। এ কাজে বিভাগীয় প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন রবিউল ইসলাম ও সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত বিশ্বাস। ইট, বালি, খোয়া, রড, রাভিস ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ করা হয়েছে বলেই অভিযোগ এলাকাবাসীর। সরকারের এ ধরণের একটি ভবন নির্মাণ কাজের কোনো প্রকার সাইনবোর্ড টাঙাইনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। যে কারণে তিমিরেই থেকে যায় নির্মাণ কাজের বরাদ্দ ও সচ্চতা। অবশেষে গত বুধবার বিকেলে নির্মাণ শ্রমিকদের অগোচরে স্থানীয়রা লুকিয়ে ভবনে প্রবেশ করে খানেকটা চমকে ওঠে। দ্বিতল ভবনের পিলারগুলোতে রডের বদলে দেয়া হয়েছে বাশের কাবারি। পাঁচিলগুলো নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহিত পুরোনো ইট দিয়ে। ঢালায় কাজে ইটের খোয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে সুরকি ও রাভিশ। এ কথা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ভবনে ভিড় জমে যায় উৎসুক জনতার। পরিবেশ পরিস্থিতি বেসামাল টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে যায় নির্মাণ কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম সুব্রত বিশ্বাস ও ম্যানেজার জেমস কসট্রাসহ নির্মাণ শ্রমিকরা। রাগে ক্ষোভে ফুসে উঠে এলাকাবাসী। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের ম্যানেজের প্রক্রিয়া চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে একটি মহল। রাতেই এ খবর পান বাংলাদেশ কৃষি অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান। তিনি তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিসারদের নিদের্শ দেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল হওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি অফিসার নির্মল কুমার দে, দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মো. রোকুনুজ্জামান, দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের ইনচার্জ কামরুন নাহার। কর্তকর্তারা ভবনের বিভিন্ন পিলার ও পাঁচিল ভেঙে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছুনোর আগেই রাতের আধারে বাশের কাবারি ও নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে ফেলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন। সকালে স্থানীয়দের জনরোষের মুখে পড়তে হয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও ম্যানেজরকে। কর্মকর্তারা ভবন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। যে কারণে ওই দিনই নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ কৃষি অধিদফতরের মহাপরিচালক গ্রহণ করেছেন তড়িৎ ব্যবস্থা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপমহাপরিচালক সৌমেন সাহাকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এ কমিটি গতকাল শুক্রবার থেকেই শুরু করেছেন তাদের কার্যক্রম। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান সৌমেন সাহা উপস্থিত থাকতে না পারলেও কমিটির অন্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ কমিটিতে আরো রয়েছেন অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান ও চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি অফিসার নির্মল কুমার দে। এছাড়া ছিলেন কৃষি বিভাগের যশোর জোনের ইনচার্জ মোখলেসুর রহমান ও নির্বাহী প্রকৌশলী আয়ুব আলী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু। তদন্ত কমিটির উদ্দেশে এমপি আলী আজগার টগর বলেন, দ্রুত তদন্ত শেষ করে সঠিকভাবে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার গাফিলতি বরদাস্ত করা যাবে না। মাহফুজুর রহমান মনজু বলেন, দর্শনা তথা এলাকাবাসির প্রাণের দাবির ফসল এ ভবন। তাই ভবন নির্মানে দুর্নীতি প্রমানিত হলো অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। আরো উপস্থিত ছিলেন, ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, আ.লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম, আলী মুনসুর বাবু, আতিয়ার রহমান হাবু, যুবলীগ নেতা আ. হান্নান ছোট, শেখ আসলাম আলী তোতা প্রমুখ।